E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে পৃথক ঘটনায় শিশু ও প্রতিবন্ধী ধর্ষণের শিকার

২০১৫ মে ১৪ ১৫:৫৮:০১
মাদারীপুরে পৃথক ঘটনায় শিশু ও প্রতিবন্ধী ধর্ষণের শিকার

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর কালকিনি উপজেলার সিডিখান গ্রামে পৃথক দুই ঘটনায় ৫ বছর বয়সের এক শিশু ও এক প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়ে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
পারিবারিক, স্থানীয়, হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে কালকিনি উপজেলার সিডিখান গ্রামের দিন মজুর কৃষকের ৫ বছর বয়সের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে মা পাশেই তার শ্বশুরবাড়িতে যায়।

এসময় ঐ শিশুকে একা পেয়ে একই গ্রামের টেলি খালেক সরদারের বিবাহিত ছেলে বাচ্চু সরদার (২৫) ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। ঐ শিশুর হাতে ১০ টাকার একটি নোট দিয়ে মুখ চেপে ধর্ষণের উদ্দ্যেশে পাশবিক নির্যাতন করে। মেয়ের চিৎকার শুনে মা দ্রুত বাড়িতে আসলে ধর্ষক বাচ্চু দ্রুত পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা শিশুটিকে রক্তাক্ত ও অজ্ঞান অবস্থায় প্রথমে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ঐ দিন রাত ১১ টার দিকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পর থেকে বাচ্চু পলাতক রয়েছে। এই ঘটনায় শিশুটির বাবা কালকিনি থানায় মামলা করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে গেলে শিশুটিকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা যায়। কি হয়েছে কথাটি জানতে চাইলে মা ও শিশু দুইজনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
এসময় শিশুটি কেঁদে কেঁদে বলে, ও (বাচ্চু) খুব খারাপ। আমাকে অনেক ব্যাথা দিয়েছে।
শিশুটির মা বলেন, আমার এতটুকু মেয়েকে কেন এভাবে অত্যাচার করলো। কোন মানুষ কি এভাবে কোন শিশুকে অত্যাচার করতে পারে। যখন ওকে দেখলাম আমি ওর রক্ত দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন মামলা চালাবো কিভাবে আর মেয়ের চিকিৎসাও করবো কিভাবে সেই অর্থও আমাদের নেই। আমি বাচ্চুর বিচার চাই। এমন বিচার যাতে করে কেউ যেন অবুঝ শিশুদের এভাবে অত্যাচার করতে না পারে।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃপা সিন্ধু বালা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
অপরদিকে একই গ্রামে ৯ মে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে (১৩) মুখ বেধে নিয়ে ধর্ষণ করে ৩ বখাটে।
পারিবারিক, স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৯ মে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে একই গ্রামের টোকন সরদারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ছেলে সাইফুল সরদার কিশোরীর মুখ বেধে ইলিয়াস সরদারের বখাটে ছেলে ইকবাল সরদারের (২০) সহযোগিতায় শামসু বেপারীর ছেলে রুবেল বেপারীর (২০) অটো রিকশায় করে নিয়ে যায়। কিছুদুর গিয়ে তারা ঐ গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে নিয়ে প্রথমে কিশোরীকে মারধর করে। পরে তিনজনে মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।
রাতে কিশোরীকে খোঁজ করার এক পর্যায় ১২টার দিকে পুকুরপাড়ে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
ঘটনাটি ধর্ষকের পরিবার টের পেয়ে রাতেই কিশোরীর পরিবারকে লোকজনকে না জানানো ও মামলা না করার জন্য হুমকি দেয়। অকর্থ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
ঘটনার পরেরদিন সকালে ধর্ষক ইকবাল সরদারের বাবা ইলিয়াস সরদার লোকজন নিয়ে ঐ কিশোরীর বাড়ি গিয়ে পাহারা বসায়। যাতে করে কিশোরীর পরিবার বাড়ি থেকে বের না হতে পারে।
ঘটনার পর দুই দিন ঐ প্রভাবশালীরা কিশোরীর পরিবারকে নানাভাবে অত্যাচার ও হুমকি দিতে থাকে।
এক পর্যায় সোমবার তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে কিশোরীকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এতে করে ধর্ষকের পরিবার আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। হুমকি দিতে থাকে। এতে করে ঐ পরিবারটি ভয়ে চুপ থাকলেও বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার কথা জানায় এবং তাদের নিরাপত্তা ও দোষীদের বিচার দাবি করে।
এ ব্যাপারে ঐ কিশোরীর মা বলেন, আমার মেয়েটাকে ধর্ষণের পর ওরা বাড়িতে গিয়েও আমাদের নানা অত্যাচার ও হুমকি দেয়। ইলিয়াস সরদার বাড়িতে পাহারা বসায় যাতে করে আমরা ঘর থেকে বের হয়ে কোন কিছু করতে না পারি। পরে কৌশলে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে হাসপাতালে আসি।
এসময় তিনি আরো বলেন, বাড়িতে ফিরে থানায় মামলা দেয়ার মতো সাহস নেই। তাই মাদারীপুর আদালতে মামলা দেব। কিন্তু মামলা দেয়ার মতোই টাকা পয়সা আমাদের নেই। তাছাড়া ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় বাড়িতে ফেরাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এখন আমরা কি করবো। কোথায় যাবো। জানিনা। আমরা ঐ ধর্ষকদের বিচার চাই। সেই সাথে প্রশাসনের কাছে আমার মেয়েসহ আমার পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানাই।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. দিলিপ কুমার দাস বলেন, পৃথক দুটি ধর্ষণের ঘটনায় একজন শিশু ও একজন কিশোরী ভর্তি আছে। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা চলছে।
(এএ/পিবি/মে ১৪,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test