E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটোরের বাঁশিলা গুচ্ছগ্রামের ৩০ পরিবার পানিবন্দী

২০১৫ জুলাই ১১ ১৪:১৭:২৯
নাটোরের বাঁশিলা গুচ্ছগ্রামের ৩০ পরিবার পানিবন্দী

নাটোর প্রতিনিধি :গত কয়েকদিনের টানা ও ভারি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গুচ্ছগ্রামের ৩০ পরিবার পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। ঘর থেকে বের হলেই হাটুপানি আর কাদায় লুটোপুটি খাচ্ছে গুচ্ছগ্রামের নারী-পুরুষসহ শিশুরা। তাদের চলাচলের একমাত্র  রাস্তার উৎসমুখে পানি জমে থাকায় তারা বাড়ি থেকে বাহিরে বের হতে পারছে না।

এমনকি বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে অনেকের। নলকুপ থাকলেও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাব রয়েছে এই গুচ্ছগ্রামে। অনেকেই বাড়ির গৃহস্থলি কাজে অপরিস্কার নোংরা পানি ব্যবহার করছে। ফলে অনেকেই ডায়রিয়া, সর্দিজ্বর, কাশিসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে। শিশুদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারনে বাঁশিলা গ্রামের একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়দের দাবী এই অসহনীয় দুর্ভোগ তাদের একদিনের নয়। বছরে ৬ মাস তাদের এই জলাবদ্ধতার মাঝে দিন কাটে।

এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, বাঁশিলা জিওনীপাড়াসহ এলাকার কয়েক’শ পরিবার ছিল বাস্তুহারা। অনেক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৪ সালে তাদের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে মুচি পাড়া এলাকায় ৩ একর জমিতে আদর্শ গ্রাম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় স্থানীয় জনপ্রধিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তারা তাদের ৩ মাসের মধ্যে উন্নত বাসস্থান গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দেন। পরবর্তীতে ৪৫ মেট্রিকটন সরকারী চাল খরচ করে অসমতল ভুমি সমান করা হয়। ২০১১ সালে ভুমি মন্ত্রনালয়ের ক্লাইমেট ভিকটিমস রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্টেরে অর্থায়নে বাঁশিলা গুচ্ছগ্রামটি নির্মাণ করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। একই সময়ে ওই গুচ্ছগ্রামের ৩০ পরিবারকে ঘরবাড়ি হস্তান্তর করা হয়।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত বাসিন্দারা জানায়, তারা ঘর পেয়েছে, বাড়ি পেয়েছে, কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরেও তাদের দুর্ভোগ কমেনি। ওই গ্রামে প্রবেশের একমাত্র সড়কটি সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে গিয়ে জলাবদ্ধার সৃষ্টি করে। পানি নিষ্কাষনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নেয়। ফলে গুচ্ছগ্রামের মানুষ চলাচল করতে পারে না। ঘরের ভিতর পানি প্রবেশ করে। একমাত্র চলাচলের পথটিই সবসময় কাদাযুক্ত থাকে। সুপেয় পানির জন্য নলকুপ স্থাপন করলেও তা পানির নিচে ডুবে যায়। এতে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। অনেকেই বাড়ির উঠোনে জমে থাকা নোংরা পানি দিয়ে থালাবাসনসহ কাপড়-চোপড় পরিস্কার করে। একমাত্র সড়কের কোথাও পানি, কোথাও কাদাযুক্ত থাকায় প্রতিনিয়ত তাদের কাদা আর পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয়। এতে এই গ্রামে বসবাসরত নারী-পুরুষ ও শিশুরা প্রায় সময় জ্বর-সর্দি, কাশিসহ চর্মরোগে ভোগে। চিকিৎসা সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হলেও তা বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধতার কারনে বন্ধ থাকে। একারনে সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হয় তারা। গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মিরজান, লালভানু জানান, দীর্ঘ সময় তাদের বাড়ি ঘরে পানি জমে থাকায় তাদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে হাঁস,মুরগী, গরু-ছাগলের সাথে এক সঙ্গে বসবাস করছে। বাড়ি থেকে দুরে নদীর পানির উপচে পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসময় পানি বন্দি অবস্থায় দিন কাটাতে হয়। ষাটোর্ধ বয়সের শহিদ উদ্দিন, দিলীপ কুমার জানান, দীর্ঘ দিন ধরে পানি আর কাদায় চলাচল করতে গিয়ে তাদের হাতে-পায়ে ঘা হয়ে গেছে। শিশুরা ঘর থেকে বের হতে পারে না। নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না। ঘর থেকে বের হলেই কাদা আর পানি। অনেক কষ্টে তার দিন চলে।

গুচ্ছগ্রাম কমিটির সভাপতি সাধন চন্দ্র ও সাধারন সম্পাদক কিতাব আলী জানান, বৃষ্টিপাত হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। চারদিকে বাড়িঘর থাকায় এবং গুচ্ছগ্রাম নিচু হওয়ায় এখানকার জমা হওয়া পানি বের হতে পারে না। পানি নিষ্কাশন ও রাস্তা উচুঁ এবং পাকাকরনের জন্য চেয়ারম্যানসহ উর্ধতন মহলকে একাধিকবার আবেদন করেও কোন কাজ হয়নি। সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারনে তাদের ৬ মাস পানিবন্দী থাকতে হয়। এতে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, বিষয়টি সরজমিনে দেখে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পানি নিষ্কাষণের জন্য ড্রেন নির্মানে ১ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জাহান জানান, বাঁশিলা গুচ্ছগ্রামের জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে এই গ্রামের মাঝ দিয়ে চলাচলের রাস্তা পাকাকরণ ও ড্রেন নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। সরজমিনে গিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আরো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



(এমআর/এসসি/জুলাই১১,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test