E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরায় জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট

২০১৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৪:৫১:৩৫
মাগুরায় জমে উঠেছে কোরবানীর পশুর হাট

মাগুরা প্রতিনিধি : আসন্ন ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে মাগুরায় জমে উঠেছে কোরবানীর পশু হাটগুলো । ঈদুল আজহা যতই এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে গরু, ছাগলের বেচা-কেনা। সাধারণ গৃহস্থ ক্রেতাদের পাশাপাশি হাটগুলোতে ভীড় করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরা। তবে এ বছর রড় গরুর চাহিদা মন্দা।

ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ছোট ও মাঝারী আকারের স্বাস্থ্যবান গরু। মাগুরার হাটগুলোতে ভারতীয় গরু না আসায় ভাল দাম পেয়ে খুশি স্থানীয় বিক্রেতা ও খামারীরা। দাম একটু চড়া হলেও পছন্দ মত গরু কিনতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারাও।

মাগুরা জেলার প্রধান পশু হাটগুলো হচ্ছে, সদরের রামনগর, কাটাখালী, আলমখালী, শত্রুজিৎপুর, আলোকদিয়া, মহম্মদপুরের বেথুলিয়া, নহাটা, শালিখার আড়পাড়া, সীমাখালী, পুলুম, চতুরবাড়িয়া, শ্রীপুরের লাঙ্গলবাধ ও সারঙ্গদিয়া। নিয়মিত এ হাটগুলোর পাশাপাশি কোরবানী উপলক্ষে বসেছে আরো অস্থায়ী অসংখ্য গরু, ছাগলের হাট। স্থায়ী-অস্থায়ী এ সকল হাটে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খামারী, ব্যাপারী ও গৃহস্থরা ভিড় করছেন গরু-ছাগ কেনা বেচার জন্য। বিশেষ করে গত ৩-৪ দিন পশুর হাটগুলোতে বেশী ভিড় লক্ষ করা গেছে।

রামনগর, কাটাখালী ও আড়পাড়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট-বড়, মাঝারী বিভিন্ন আকারের অসংখ্য গরু’র উঠেছে। কোরবানী দিতে ইচ্ছুক ক্রেতারা হাটের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে-ফিরছেন সাধ্যে’র মধ্যে তাদের পছন্দের গরুটি কেনার জন্য। অধিকাংশ ক্রেতারা হাসি মুখে বাড়ি ফিরছেন কোরবানীর গরু কিনে। কেউ-কেউ আবার অপেক্ষা করছেন শেষ মূহুর্তেও জন্য।

রামনগর হাটে কথা হয় সদরের বগিয়া গ্রামের ক্রেতা সিদ্দিক হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, হাটে পছন্দ সই গরুর অভাব নেই। তিনি তার সাধ্যর মধ্যে ৫০ হাজার টাকায় মাঝারী আকারের একটি ভাল গরু কিনেছেন। গত বছর এ ধরনের গরু ৪৪-৪৫ জাহার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তিনি জানান, এবার ভারতীয় গরুর চাপ কম থাকায় দেশী গরুর দাম একটু বেশি।

আড়পাড়া হাটে কথা হয়- সদরের ভাবনহাটি গ্রামের কলেজ শিক্ষক আবু সেলিম-এর সাথে। তিনি জানান, হাটে ৭০-৮০ হাজার থেকে দেড়, দুই লাখ টাকা দামের অনেক বড়-বড় চেহারাবান গরু এসেছে। এলাকার অনেকে ভাগে এ ধরনের গরু কিনে কোরবানীতে শরিক হচ্ছেন। কিন্তু ধর্মীয় ও স্বাস্থ্যগত নানা বাধার করনে তিনি অংশিদার হয়ে বড় গরু কেনার পক্ষে নন। যে কারনে একাই ৩০ হাজার টাকায় কোরবানীর জন্য একটি গরু কিনেছেন। এ ধরনের অসংখ্য ক্রেতাকে দেখা যায় ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনে তারা খুশি মনে বাড়ি ছিরছেন।

রামনগর হাটে ফরিদপুর থেকে আসা আছাদ খান নামে এক ব্যাপারী জানান, তিনি মাগুরার বিভিন্ন হাট থেকে ছোট ও মাঝারী আকারের গরু কিনে ঢাকা এবং চট্রগ্রাম নিয়ে বিক্রি করছেন। এবার ভারতীয় গরুর চাপ কম থাকায় স্থানীয় বাজার থেকে একটু বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে। তারপরেও তার লাভ হচ্ছে। তবে শেষ সময়ে দেশে ভারতীয় গরুর চাপ বাড়লে দেশীয় গরু খামারী ও ব্যবসায়ী সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শ্রীপুরের ঘাষিয়াড়া, আমতৈলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলমগীর ,বাদশা নামে গরু বিক্রেতা ও খামারীরা জানান, এবার হাটে ছোট ও মাধ্যম সাইজের গরু চাহিদা বেশী। এ ধরনের গরু এনে তারা ভাল দাম পেয়েছেন। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে বড় গরু’র একদম চাহিদা নেই। আসলাম, মন্নু, মফিজ, সবুজ নামে একাধিক খামারী জানান, তাদের খামারে পালিত বড় আকৃতির একাধিক গরু নিয়ে এ বছর বেশ বিপকে পড়েছেন। নানা ঝক্কি, ঝামেলার কারণে এ বছর কোরবানীতে তারা ঢাকায় গরু পাঠাননি। কিন্তু স্থানীয় একাধিক হটে গরু উঠিয়েও তা বেচঁতে পারেনি। কারন ক্রেতারা বড় গরুর কাছে আসছে না। রামনগর হাটে বাদশা মিয়া নামে এক বিক্রেতা জানান, তিনি বড় অকৃতির কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা দামের দুটি গরু হাটে তুলেছেন। গত তিন হাট হল দাম শুনলেও, কোন ক্রেতা দাম পর্যন্ত বলেনি।

রামনগর হাট ইজারাদার নূরে আলম দিপু জানান, এ বছর দেশে ভারতীয় গরুর আমদানী কম। যে কারনে দেশী গরুর চাহিদা বেশি। শেষ পর্যন্ত এভাবে থাকলে দেশী গরুর খামারীরা লাভবান হবেন। দিপু জানান, গত ১০ তারিখের পর থেকে প্রতিটি হাটেই ভাল বেচা বিক্রি হচ্ছে। তবে তিনিও জানান ক্রেতাদের কাছে বড় গুরুর চাহিদা একদম কম।

রামনগর হাট পরিদর্শকালে কথা হয় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়ারুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, প্রতিটি গরু হাটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। যে কারনে ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদে কেনা-বেচা করতে পারছেন। জাল টাকা লেনদেন, চাঁদাবাজীসহ কেউ কোন বিশৃঙ্খলা ঘটালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মাগুরার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক প্রতিটি হাটগুলোর সার্বিক অবস্থা মনিটরিং করা হচ্ছে।

জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: কানাই লাল স্বর্ণকার জানান, এ বছর মাগুরা জেলায় মোট খামারের সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৯৭৭ টি। যার মধ্যে গরুর ১৫৪০০ টি ও ছাগলের খামার ১৩৬৭৭ টি। ব্যক্তি পর্যায়ে এ সকল খামারে কেমিকেলমুক্ত গরু, ছাগল মোটতাজা করা হয়েছে। যা জেলার মোট চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি।

তিনি আরো জানান, খামারিরা যাতে কেমিকেল যুক্ত খবার ব্যবহার না করে সে বিষয় খেয়াল রাখার জন্য ১ জন পশু ডাক্তাকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট মোট ৫ টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এ সকল টিম মাগুরার বিভিন্ন নামকরা হাটগুলোতে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মনিটরিং করবে। যে কেউ ইচ্ছা করলে গরু-ছাগল কেনার আগে সুস্থতা পরীক্ষ করে নিতে পারবেন।

(ডিসি/এএস/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test