E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনে স্কুল চলে তিন ঘণ্টা!

২০১৬ এপ্রিল ০৬ ১৬:২৬:৫৪
দিনে স্কুল চলে তিন ঘণ্টা!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা শিক্ষা কার্যক্রম চলে বলে অভিযোগ করছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ সকাল ১১টায় স্কুল শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর ২টায়। এছাড়া শিক্ষকরাও সময় মতো বিদ্যালয়ে আসেন না। তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ প্রধান শিক্ষকরা। তাদের বক্তব্য নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে বিপিবি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাস্তোার দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, তাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভেলাতৈড় শহিদ মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে ঘুরে দেখা গেছে এইসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব কম। শিক্ষকরা ক্লাসে না গিয়ে বিদ্যালয়ের গাছতলায় চেয়ারে বসে গল্প করছেন। দেখা যায়, ভৈলাতৈড় শহিদ মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১৩ জন হলেও গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল মাত্র ২৩ জন শিক্ষার্থী। আর শিক্ষক ১২ জনের মধ্যে ৮ জন উপস্থিত ছিলেন।

এ বছর এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে অংশ নিয়েছে মাত্র দুই জন শিক্ষার্থী। কথা হয় ভেলাতৈড় শহিদ মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাছিনা বেগমের সাথে। সময় মতো বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না করার বিষয়ে তিনি বলেন, " গ্রামের স্কুল তো এজন্য ছাত্র ছাত্রীরা একটু দেরিতেই আসে। "এ জন্য একটু দেরিতে স্কুল খোলা হয়। আর শিক্ষার্থীরা শহরে কোচিং করতে যাওয়ার জন্য ৪টার আগেই বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়।"

তিনি আরও বলেন, এটা নিয়মের বাইরে। তবুও কোচিং এ পড়ে শিক্ষার্থীরা ভালো করছে বলে তিনি এই সুযোগ দিয়েছেন। প্রায় একই রকম কথা জানান কাস্তোর দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সতীষ চন্দ্র রায়, তাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুর রহমান। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ তিনি বলেন,বাস্তবতা যাই থাক।কাগজে কলমে সবকিছু ঠিক আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস না হওয়ার কারণে শহরে কোচিং-প্রাইভেটে ছেলেকে পাঠাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, "আমি কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। স্কুলে যদি ভালো করে স্যাররা পড়াতেন তাহলে কোচিংয়ের বাড়তি টাকাটা বেঁচে যেত।"

একই কথা জানান আরও বেশ কয়েকজন অভিভাবক। তাঁরা জানান, মাঝে মাঝে স্যারদের দেখি মাঠে ক্রিকেট খেলে। আবার দেখি গাছ তলায় বসে আড্ডা দেয়। ক্লাসই হয় না। বাচ্চারা কি শিখবে। এভাবে চললে শিক্ষার্থীরা কোন কিছুই শিখতে পারবে না বলে মনে করেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেলাতৈড় শহিদ মুক্তিযোদ্ধা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলে এসে কোন লাভ হয় না। ঠিকমতো ক্লাস হয় না। স্যাররা বুঝিয়েও দেন না ঠিকমতো। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলায় নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৫টি। এর মধ্যে মাধ্যমিক ৬১টি ও নিম্ন মাধ্যমিক ১৪টি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, "সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম না চললে ঐসব বিদ্যালয় প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমি একা মানুষ তাই নিয়মিত পরিদর্শনে যেতে পারি না। তবুও মাসে তিন চারটা বিদ্যালয় পরিদর্শন করি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। তিনি বলেন, "শিক্ষার বিষয়ে আমরা বর্তমানে সজাগ আছি। কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়মিত বিদ্যালয়ে যান না বা নিয়মিত স্কুল খোলে না এসব তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

(জেএবি/এএস/এপ্রিল ০৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test