E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীনগরে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান

২০১৬ এপ্রিল ২১ ১৮:৪৯:২৯
রাণীনগরে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান

নওগাঁ প্রতিনিধি :নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার উজালপুর গ্রামে প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন চারটি বৌদ্ধ বিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বিহার ৪টি আবিষ্কার করেন।

প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যক্তি উদ্যোগে এই প্রথম এগুলোর একটিতে খনন কাজ শুরু করা হয়েছে গত রবিবার। আর এগুলো আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে জেলার ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।

রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের উজালপুর গ্রামে অনুসন্ধানী টিম মনোযোগ দিয়ে বিহার আবিস্কারের কাজ করে যাচ্ছেন। প্রত্নতত্ত্ববিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা যাদুঘরের সহকারী পরিচালক পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ আবু আল হাসানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি টিম এই খনন কাজ করছেন।

জানা গেছে, গত প্রায় দেড় বছর ধরে প্রতœতত্ব গবেষক মোহাম্মদ আবু আল হাসান পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কারে ব্যাপক গবেষনা কাজ সম্পন্ন করেন। তার গবেষনায় রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নে রাজাপুর ঢিবি, দিঘীর পাড় দীপ, ঘোড়াপাতা ও উজালপুর এই চারটি স্থানে পাল বংশেরও আগের প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন থাকার সম্ভাবনার তথ্য উঠে আসে। এর পরই তথ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ব্যক্তিগত অর্থায়নে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় গত রবিবার থেকে শুরু করেন খনন কাজ।

মোহাম্মদ আবু আল হাসান সাংবাদিকদের জানান, নওগাঁ জেলার বদলগাছী, ধামইরহাট, সাপাহার, নিয়ামতপুর, মান্দাসহ অন্য উপজেলাগুলোতে ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। তবে জেলার দক্ষিন নিম্নাঞ্চলের রাণীনগর ও আত্রাই এলাকায় অনেক উচু ঢিবি থাকলেও সেখানে কোন অনুসন্ধান চালানো হয়নি। এমন চিন্তাধারা থেকে ওইসব এলাকা থেকে গত প্রায় দেড় বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে রাণীনগর উপজেলার ওই চারটি স্থানে পাল বংশ এবং তার আগের সময়ের প্রাচীন পুরাকীর্তির অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি জানান, পরবর্তীতে ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে উজালপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠের ঢিবির পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রাথমিকভাবে এখানে ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে নিশ্চিত হয়ে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অনুমতি নিয়ে চলতি বছর ১৭ এপ্রিল থেকে একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে খনন কাজ শুরু করেছি। প্রতœতত্ববিদ আবু আল হাসান আরো বলেন, খননকালে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের আকৃতিতেই অবকাঠামো পাওয়া গেছে। পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও প্রাথমিকভাবে এটি বৌদ্ধদের কোন জ্ঞান ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। খনন কাজ করতে গিয়ে মাটির নিচে বিহারের অবকাঠামোই বলছে এটি বৌদ্ধদের ধর্মচর্চার একটি বিদ্যাপিঠ ছিল। কারন এই বিহারের সঙ্গে জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের অবকাঠামোর যথেষ্ট মিল রয়েছে। তবে পুরো খনন কাজ শেষ না করা পর্যন্ত বিহারটি সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু বলা যাবেনা। তিনি আরো জানান, খনন কাজ দেখতে ছুটে আসেন দেশ বরেন্য ইতিহাস গবেষক ড. পিনাকী ভট্টাচার্যসহ বেশ কিছু প্রতœতত্ব গবেষক। এ ধরনের আরও অনেক বিহার ছড়িয়ে আছে। তাই আরও ব্যাপক গবেষনার প্রয়োজন আছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে এমন ঐতিহাসিক বিহার আবিষ্কারের খবরে খুশি এলাবাসীও। উজালপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম, স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক নাছির উদ্দীন বলেন, শত শত বছর ধরে এই উঁচু ঢিবি এখানে অবস্থান করছিল। এটি কোন ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন হতে পারে, তা তাঁদের ধারনায় ছিলনা। প্রাথমিক ভাবে এই ঢিবির উচ্চতা ছিল ১৫ থেকে ১৭ ফুট পর্যন্ত। পরবর্তীতে সরকারের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচীর আওতায় এখান থেকে মাটি কেটে ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। বছরে দু’টি ঈদের জামাত পড়্ াশুরু হয় এখানে। বর্তমানে এটি কোন প্রতœতাত্বিক নিদর্শন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে জেনে আমরা আনন্দিত। এজন্য তারা আবিস্কারক প্রতœতত্ববিদ আবু আল হাসানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।#

(বিএম/এস/এপ্রিল২১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test