E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে আশংকাজনক হারে কমছে ফসলী জমি, ঝুঁকিতে জেলার খাদ্য নিরাপত্তা

২০১৬ মে ২৬ ১১:৩৪:৫৭
শরীয়তপুরে আশংকাজনক হারে কমছে ফসলী জমি, ঝুঁকিতে জেলার খাদ্য নিরাপত্তা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :শরীয়তপুর জেলায় আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। বছরের পর বছর ধান চাষে লোকসান গুনে কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছে ফসলী জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষে। ফলে, জেলার মোট লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে পরছে জেলার খাদ্য উৎপাদন। ফসলী জমি রক্ষায় কোন সুস্পষ্ট বিধান না থাকায় অবাধে বিনাশ করা থেকে জমি বাচাঁতে পারছে না প্রশাসন। ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে ফসলী জমি সুরক্ষায় সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে নীতিমালা প্রনয়ণের তাগিদ দিয়েছেন সুশীল সমাজ।

সরেজমিন পরিদর্শণ করে দেখা গেছে, জেলার ছয় উপজেলাতেই ফসলী জমিকে পাল্লা দিয়ে রূপান্তরিত করা হচ্ছে বড় বড় পুকুর-দীঘিতে। যেখানে কৃষকরা করছে মাছ চাষ। এই চিত্র সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা গেছে সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে নড়িয়া উপজেলার সর্বত্র। এ ছারাও ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুরে জমি কেটে মাছের প্রজেক্ট করা হচ্ছে। বেশীরভাগ প্রজেক্টের পরিচালনায়ই রয়েছে যুবক শ্রেনীর লোকেরা এবং তারা সমবায়ের ভিত্তিতে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তবে জাজিরা উপজেলায় এর পরিমান তুলনামূলক খুবই কম। নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের মান্ডা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ওই গ্রামের বাসিন্দা চপল মোল্যা-হালিম মোল্যা গং একই বংশের মোট ১১জন মিলে অন্তত ১ শত ১০ বিঘা জমি নিয়ে একটি একটি প্রকান্ড দিঘী খনন করে সেখানে মাছের খামার করছে। যে জমিতে চলতি মৌসুমেও বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল।

গত ৫-৭ বছর যাবৎ ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করে কৃষক বরাবরই লোকসানে পরার কারনে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ফসল উৎপাদনে। তাই মাছ চাষ অধিক লাভবান হওয়ায় তারা ঝুঁকে পরছে এই ব্যবসায়। ফলে, আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে জেলার ফসলী জমি। আর এ কাজে জেলা মৎস বিভাগও উৎসাহ যোগান দিচ্ছে মাছ চাষিদের। তারা মনে করেন, মৎস চাষ কৃষিরই একটা অংশ। একই জমিতে ফসল আবাদ না করে মাছ চাষ করা কৃষির সাথে কোন সাংঘর্ষিক কিছু না।

শরীয়তপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে জেলার মোট ফসলী জমি থেকে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি হ্রাস পেয়েছে। ইতিপূর্বে নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারনে যে হারে আবাদী জমি হ্রাস পেত, ফসলী ভুমিকে জলাধারে রূপান্তরিত করে মাছ চাষের আওতায় আনার কারনে তার চেয়ে অধিক হারে এখন কমে যাচ্ছে । ২০০৫ সালে জেলার ফসলী জমির পরিমান ছিল ৯৫ হাজার হেক্টর। ৭ বছর পর ২০১২ সালে কমে এর পরিমান দাড়ায় ৯৩ হাজার হেক্টরে। শুধুমাত্র ফসলী জমিতে মৎস্য প্রকল্প করার কারনে ৩ বছরের ব্যবধানে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শরীয়তপুরের ফসলি জমির পরিমান হ্রাস পেয়ে এসে দাড়িছে ৯০ হাজার ২০ হেক্টরে। এই কারনে জেলার খাদ্য উৎপাদনও লোপ পাচ্ছে প্রতিনিয়িত।

বর্তমানে জেলায় খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন । এর মধ্যে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার মে.টন চাউল এবং মাত্র ১৭ মে.টন গম। মাছ চাষের জন্য যে পরিমানে ফসলী জমি ব্যবহার করা হচ্ছে, যদি জমি রক্ষা করা না যায়, তাহলে অচিরেই জেলার খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পরার সম্ভাবনা দেখা দিবে বলে জানিয়েছেন খোদ জেলার প্রধান কৃষি কর্মকর্তা।

জেলার আচুড়া, আনাখন্ড, দুলুখন্ড, মান্ডা, ধামারন, ফতেহজঙ্গপুর, ভোজেশ্বর ও জপসা এলাকার জমির মালিক আবুল হোসেন মোল্যা, লোকমান হোসেন, সজীব খান, মজিবুর রহমান, সামছুল হক মুন্সি, আব্দুল হান্নান, চপল মোল্যা ও জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, আমাদের বংশ পরম্পরায় এই সকল জমিতে ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল আবাদ করা হতো। গত কয়েক বছর ধান চাষে লোকসান হওয়ার কারনেই আমরা ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। তাই আমরা ফসলী জমিতে দীঘি কেটে মাছের প্রচেক্ট করছি। এতে আমরা কয়েকগুন বেশী লাভবান হচ্ছি।

শরীয়তপুর জেলা জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, ফসল উৎপাদন থেকে মাছ চাষে অধিক মুনাফা পাওয়ায় শরীয়তপুরের কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে মাছ চাষ করছে। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করে মানুষ যে মুনাফা পায় তার থেকে ৩/৪ গুন বেশী লাভবান হয় মাছ করে। তাই শরীয়তপুরের মানুষ নতুন নতুন পুকুর খনন করে মাছ চাষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কৃষির সাথে কোন বিরোধ নয়, মাছ চাষ কৃষিরই একটি অংশ। আমি উপজেলা মৎস কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি, আধুনিক মৎস চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের জন্য।

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষায় কোন আইন না থাকায, ফসলী জমিতে অবাধে মাছ চাষ করে কৃষি জমি কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। এভাবে আবাদী জমি হ্রাস পেতে থাকলে জেলার লক্ষিত খাদ্য উৎপাদন কমে গিয়ে অচিরই শরীয়তপুরের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পরবে।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, কৃষি জমি রক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় মৎস চাষকে বাধাগ্রস্ত করার কোন সুযোগ নেই।


(কেএনআই/এস/মে২৬,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test