E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাদারীপুরে অসহায় প্রতিবন্ধী পেলো হুইলচেয়ার

২০১৬ জুলাই ২৩ ২০:৩০:৩৮
মাদারীপুরে অসহায় প্রতিবন্ধী পেলো হুইলচেয়ার

মাদারীপুর প্রতিনিধি :শারীরিক প্রতিবন্ধী আলমাস বেপারী দীর্ঘ বছর ঘরে শুইয়ে দিন কাটিয়েছে। বিশেষ কোনো কাজে বাহিরে বের হতে হলে মা বা ভাইয়ের কোলে চড়ে যেতে হতো। বতর্মানে তার বয়স ২০ বছর হওয়ায় মা বা ভাই তাকে কোলে নিয়ে বের হতে কষ্ট হয়। তাই অনেক পাটের বস্তায় ভরে পিঠে চড়ে যেতে হতো। তাছাড়া কথাও স্পষ্টভাবে বলতে না পারায় একাই নিঃসঙ্গ দিন কাটাতে হতো আলমাসের। বাবাও মারা গেছে প্রায় ৪ বছর হলো। তাই চলার জন্য সহজ বাহন একটি হুইলচেয়ার কেনার ইচ্ছে থাকলেও টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি।

অবশেষে সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীর ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দেখে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস শনিবার সকালে প্রতিবন্ধী আলমাসের হাতে একটি হুইল চেয়ার তুলে দেন। এতে করে আলমাস খুব খুশি। চিরচেনা পাটের বস্তা ফেলে তার স্থান হয় অনেক কাংখিত হুইলচেয়ারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রাধারবাড়ী গ্রামের মৃত শুক্কুর বেপারীর চার মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে দুজন ছেলেই প্রতিবন্ধী। অন্য ছেলে হাটাচলা করতে পারলেও ছোট ছেলে আলমাস বেপারী শারীরিকভাবে হাটাচলা করতে পারেনা। এমনকি সে স্পস্টভাবে কথাও বলতে পারেনা। ছয়মাস বয়সের পর থেকে ওর এই অবস্থায়। গত চার বছর আগে ওর বাবা শুক্কুর বেপারী মারা যাবার পর মা ফুলজান বেগম সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। কোন রকমভাবে খেয়ে না খেয়ে বাঁচতে পারলেও প্রতিবন্ধী ছেলেকে একটি হুইলচেয়ার দেয়ার মতো টাকা ছিলো না।

ব্যাপারটি প্রথমে স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক মিলন মুন্সির নজরে আসে। সে সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীকে জানান। পরবর্তীতে সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে প্রতিবন্ধী আলমাস বেপারীকে নিয়ে একটি স্ট্যাস্টাস দিলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামার উদ্দিন বিশ্বাস ও ইতালী প্রবাসী জনি মিয়ার নজরে আসেন। তার দুজনইে হুইলচেয়ার কিনে দিবেন বলে ফেসবুকে কমেন্টস করেন।

আজ শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস প্রতিবন্ধী আলমাস বেপারী ও তার মা ফুলজান বেগমের কাছে একটি হুইলচেয়ার ও মিষ্টি খাওয়ার জন্য আর্থিক সহযোগিতা দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক শাহজান খান, আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মিলন মুন্সিসহ অন্যরা।

জীবনের প্রথম হুইলচেয়ার বসতে পেরে আলমাস বেপারী আবেগে আগ্লুত হয়ে পড়ে। আনন্দে সে হাসতে থাকে আর বিড়বিড় করে কথা বলতে থাকে। এমন দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যায়।

সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশী বলেন, একটি হুইলচেয়ার পেয়ে কেউ এতো খুশি হতে পারে আমার জানা ছিলো না। আর হুইলচেয়ার পেয়ে আলমাস যে তৃপ্তির হাসিটা দিয়েছে তা কোটি টাকার বিনিময়েও হয়না।

আলমাস বেপারীর মা ফুলজান বেগম বলেন, আমার ছেলে হুইলচেয়ার পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। এরআগে জীবনে সে এতো খুশি হয়নি। সে হুইলচেয়ার নিয়ে বাড়িতে আসার পর থেকেই মিষ্টি কিনে সেই মিষ্টি নিয়ে হুইল চেয়ারে চড়ে ঘুরে ঘুরে গ্রামবাসীকে খাওয়াবে বলে বায়না ধরেছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, কয়েকদিন আগে সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা আকাশীর ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছিলো। কারণ সামান্য কয়েকটি টাকার জন্য একজন অসহায় প্রতিবন্ধী তার প্রয়োজনীয় হুইলচেয়ার কিনতে পারেনা। তাই আমি সাংবাদিক আকাশীকে জানিয়েছিলাম ঐ প্রতিবন্ধীকে একটি হুইলচেয়ার কিনে দিবো। আজ সেই হুইলচেয়ারটি ঐ প্রতিবন্ধীর হাতে দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।






(এএসএ/এস/জুলাই ২৩,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test