E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নড়াইলে খুনের জেরে চলছে ভাংচুর ও লুটের মহোৎসব

২০১৬ আগস্ট ১৯ ১৫:৫১:০৩
নড়াইলে খুনের জেরে চলছে ভাংচুর ও লুটের মহোৎসব

তানভীর আহমেদ রুবেল,নড়াইল প্রতিনিধি :নড়াইলে  লোহাগড়ায় এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে  খুনের জেরে এলাকায় চলছে ভাংচুর ও লুটের মহাউৎসব চলছে। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর ও লুট হয়েছে। পূরুষ শূন্য হয়েছে ২ শতাধিক  পরিবার, নারীরাও যে যার মতো নিজ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পার মল্ল্কিপুর গ্রামে দলীয় কোন্দলে মঙ্গলবার (১৬ আগষ্ট) সকালে এলাকার এক কৃষকলীগ নেতা নূর ইসলাম মৃধা খুন হন। মৃতের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে থাকাকালীন মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় ভাংচুর আর লুটপাট।

সরেজমিন বৃহস্পতিবার দিনভর লোহাগড়া উপজেলার পারমল্লিকপুর গ্রামের বিভিন্ন পাড়া ঘুরে দেখা গেছে ভাংচুর আর লুটপাটের বিভৎস চিত্র। চারিদিকে সুনশান নিরাবতা, ঠাকুরপাড়া ঢোকার রাস্তায় পুলিশের পাহারা।

এই পাড়ায় ভাংচুর আর লুটপাট চালিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। আগের দিন থেকেই কোন বাড়িতে পুরুষ নাই, নারীদের নিরাপত্তার জন্য ভিন্ন এলাকা থেকে তাদের মা আর বোনেরা রাতে এসে স্বজনের কাছে থেকেছেন। সকালে ভাংচুরের সময় পালিয়ে থেকে তারা এলাকার নারীদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যাচ্ছেন। নির্যাতনের আশংকায় গ্রামের যুবতী নারী ও গৃহবধুরা পালিয়ে রয়েছেন।

পারমল্লিকপুর ঠাকুর পাড়ার আফসার ঠাকুরের পরিবারে তিন ভাই একসাথে আলাদা বাড়িতে থাকেন। এই পরিবারের উপর দিয়ে বুধবার সকালে বয়ে গেছে এক সহিংস যুদ্ধের ঘটনা। পরিবারের ছেলেরা বাড়ি না থাকায় পাশের বাড়ি থেকে বোন বেবী বেগম সকালে ভাইদের বাড়ি এসেছেন, লুটপাটের পরে বেলা ১২টার দিকে ও ভয়ে কাঁপছেন তিনি। জানালেন সেই কাহিনী “সকাল ৮টার দিকে উজ্জল মেম্বরের বাড়িতে ভাংচুর আর লুটপাট হচ্ছে দেখে দৌড়ে বাড়ি এসে আমার বৃদ্ধা শ্বাশুড়ীকে নিয়ে বারান্দার গ্রীলে তালা দিয়ে বড়ঘরের খাটের তলে লুকিয়ে পড়ি। এসময় মৃধা বাড়ির রফিকুল, শফিকুল,কালাম সহ আরো প্রায় ৩০ জনের মতো এসে গ্রীল বন্ধ পেয়ে টিনের চালে উঠে টিন কেটে ভিতরে ঢোকে। ডাকাতের মতো হৈ চৈ করতে করতে তাদের ফ্রিজ,আলমারী সহ যাবতীয় সব মালামাল লুট করে বাইরে নিয়ে যায় আর ঘর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নষ্ট করতে থাকে। এরপর বাড়ির বাইরে থাকা নসিমনে করে সব মালামাল তুলে নিয়ে যায়।

ঠাকুর পাড়ার মেম্বর উজ্জ্বল শেখের শ্বাশুড়ী আর চাচী শ্বাশুড়ী মঙ্গলবার রাতে এসেছিলেন মেয়ের কাছে। বুধবার সকালে তাদের সামনেই লুটপাট হয়েছে, ভয়ে সেসময় তাদের মেয়ে আর তার সন্তানদের নিয়ে ছিলেন পাশের বাশবাগানে। এখন ভাংঙ্গা বাড়ি ফেলে রেখে বাড়ির অবশিষ্ট কয়েকটি মুরগী আর মেয়েকে নিয়ে তারা পাড়ি জমাচ্ছেন বাপের বাড়ি।

পারমল্লিকপুর ঠাকুরপাড়ার জবেদা বেগম, রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ করে সংসার চালান এই শ্রমিক। স্বামী বাউন্ডুলে,স্ত্রী আর ছেলে মেয়ের খোজ রাখেন না। অনেক কষ্টে ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিন পার করছেন তিনি। এর ওর কাছ থেকে টিন চেয়ে একটি ছোট খুপরি ঘর তুলেছিলেন। বুধবার সকালে প্রতিপক্ষের লোকেরা এসে তার সেই খুপরি ঘরটি ভেঙ্গে দিয়েছে। অনেক কষ্টে জমানো ৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি সোকেস বানিয়েছিলেন সেই সাধের শোকেস ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে তারা। ঠেকাতে গেলে আহত হয় জবেদা বেগম। বাড়ির বাইরে অঝোরে কাদছে ৭ম শ্রেনী পড়ুয়া মেয়েটি।

একই ভাবে ভাংচুর হয়েছে পারমল্লিকপুর গ্রামের মান্নান ঠাকুর, খায়রুল ঠাকুর, মন্টু ঠাকুর, ওর্কি শেখ,দেলোয়ার ঠাকুর,সহিদুল মৃধা, ইলিয়াছ গাজী,রনি মুসল্লি, ইকলাম শেখ সহ অন্ততঃ ৫০টি পরিবারে। গোলার ধান থেকে শুরু করে ফ্রিজ, সোকেস, আলমারী, টাকা সোনাদানা সহ প্রায় সবকিছুই লুট করা হয়েছে এসব বাড়ি থেকে। লুটের সময় পুরুষের সাথে নারীরা খোপ(মুরগীর ঘর) থেকে মুরগী,হাস আর কবুতর নিয়ে গেছেন। এমনকি রান্নাঘর থেকে রান্নার তরকারী আর তৈজসপত্র ও লুট করে নিয়ে যাবার অভিযোগ করেছেন এসব বাড়ির গৃহিনীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বুধবার রাস্তায় পুলিশ থাকাকালিন সময়ে ও পারমল্লিকপুর গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। গ্রামের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের পাহারা রয়েছে। পাহারায় থাকা একজন পুলিশের এস আই (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ভাই আমরা কোনদিকে যাব, লুটপাটের খবর পেয়ে একদিকে ছুটে যাই, গিয়ে দেখি শেষ হয়ে গেছে- আবার অন্যদিকে ,এভাবে গ্রামে ঘুরে কি লুটপাট ঠেকানো যায়। আমাদের সামনে তো আর কেউ কিছু করে না।

হত্যা পরবর্তী রাত থেকে নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ পুলিশের কর্মকর্তারা এলাকা পাহারা দিয়ে চলেছেন।

ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা সরাসরি স্বীকার না করলেও নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান,আইনশৃংখলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে, গ্রামে একটি হত্যা পরবর্তী কিছু উত্তেজনা থাকতে পারে তবে তা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে কম। আমরা অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে আছি।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে লোহাগড়া পারমল্লিকপুর গ্রামের দুলাল ঠাকুর গ্রুপ এবং হেমায়েত হোসেন হিমু গ্রুপের ধীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার (১৬আগষ্ট) সকালে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লতিফুল ইসলাম পলাশের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষই মারামারি থেকে বিরত হয়। এরপরে দুলাল ঠাকুরের লোকেরা অতর্কিতে হিমু পক্ষের নুর ইসলাম মৃধার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। নূর ইসলাম মল্লিকপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।







(টিএআর/এস/১৯ আগস্ট, ২০১৬ )

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test