E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জাজিরায় পদ্মার ভাঙ্গন রোধের দাবিতে মানববন্ধন

২০১৬ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৭:০৭:৫৯
জাজিরায় পদ্মার ভাঙ্গন রোধের দাবিতে মানববন্ধন

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পদ্মা নদীর ভাঙ্গন রোধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জাজিরার কুন্ডেরচরের সর্বস্তরের মানুষ। এতে স্থানীয় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও একজন সংসদ সদস্য অংশ গ্রহন করেছেন। শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত পদ্মাপাড়ে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর এলাকায় দীর্ঘ ১ মাসেরও অধিক সময় যাবৎ পদ্মা নদীর সর্বগ্রাসী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। গত ২৫ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২ শত পরিবারের বাড়ি ঘর, হাট বাজার, ফসলী জমি, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক ও বৈদ্যুতিক লাইন বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো বাপ দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে আশে পাশের উচু জায়গা, মানুষের ফসলী জমি, সড়কের উপর, আত্মীয় স্বজনের বাড়ির আঙ্গিনায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

পদ্মার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বাসিন্দারা জানান, কুন্ডেরচর এলাকাটি একটি ভাঙ্গন প্রবন এলাকা। ১৯৯৮ সাল থেকে কুন্ডের চরে পদ্মা নদীর দক্ষিন পাড়ে (সাবেক পাড়) পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২০০৭ সাল ও ২০১১ সালে থেমে থেমে এ এলাকায় ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ড অনেকাংশে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ৬,৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৮০ শতাংশ ভূমি নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে অসংখ্য ঘরবাড়ি ফসলী জমি সহ বহু স্থাপনা পদ্মার করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে। তবে এবারের মত ভয়াবহ ভাঙ্গন আর কখনো দেখা দেয়নি।

এবারের ভাঙ্গনে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাড়ি ঘরের কোন মালামাল গরু বাছুর সহায় সম্বল কিছুই সরাতে সময় পাচ্ছেনা। মুহুর্তের মধ্যে সর্বনাশা উত্তাল পদ্মানদী বিঘায় বিঘা জমি বাড়ি ঘর ও স্থাপনা নিয়ে প্রবল স্রোতের তোড়ে নদীতে দেবে যাচ্ছে। এবারের পদ্মার ভাঙ্গনে নিখোঁজ হয়ে গেছে এলাকার ৩ জন প্রবীন। তাদের মধ্যে একজনের লাশ ৫দিন পরে পাওয়া গেলে ও এখনো ২ জনের কোন সন্ধান মিলেনি। এখনো শত শত বাড়ি ঘর ও কালু বেপারী কান্দি স্কুল এন্ড কলেজ, হাসেম আলী বেপারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়সহ অন্তত ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েকটি মসজিদ ও পাকা স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।

এত ভয়াবহ ভাঙ্গনের পরে ও সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙ্গন রোধে কোন কার্যকরী উদ্যোগ না থাকায় এলাকাবাসী হতাশ। জরুরী ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙ্গন রোধের দাবীতে স্থানীয় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগন সহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো শনিবার সকাল ১১টায় পদ্মাপাড়ে এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব:) শওকত আলী কুন্ডেরচর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করার পর মানববন্ধনকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন। এ সময় তিনি স্থায়ী বাধ নির্মানে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা লাকী আক্তার, খাদিজা আক্তার, নিপা সুলতানা, রিক্তা আরেফিন, রিমন আহসান ও কবিতা আক্তার বলেন, আমাদের এলাকার প্রায় ৭-৮টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। ইতিমধ্যে একটি প্রাইমারি স্কুল বিলীন হয়ে গেছে। এখনও তিনটি হাই স্কুল নদীর খুব কাছাকাছি এসে গেছে। আমাদের সামনে পরীক্ষা। স্কুলগুলো ভেঙ্গে গেলো আমরা কোথায় গিয়ে লেখা পড়া করবো। আমরা ভাঙ্গন রোধে সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে আজ মানববন্ধন পালন করছি।

এ ব্যাপারে ইসমাইল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার দত্ত বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের পুরানো স্থান এখন নদীর মধ্যখানে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ৬১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মান করা হয়। বর্তমানে ওই ভবনটি সহ বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যেতে পারেহুমকির মুখে রয়েছে। স্কুল থেকে নদীর দুরত্ব মাত্র ৫০ গজ। যেকোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে। আমরা সরকারের কাছে একটি স্থায়ী বাধ নির্মান করে শত শত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।

কুন্ডেরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সালাহ উদ্দিন বেপারী বলেন, একমাস যাবত ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় মানুষের সাথে কাজ করছি। এখন আমরা দিশেহারা। সরকার যে সামান্য কিছু ত্রান সহায়তা তা একেবারেই নগন্য। এবারের ভাঙ্গনে আমার ইউনিয়নের ৬,৭ও ৮ নং ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে ২/৩ দিন ভাংলে ৯ নং ওয়ার্ডটি ও চলে যাবে। আমরা সরকারের সহায়তা চাই।

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কুন্ডেরচর এলাকার বাসিন্দা এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা পদ্মাপাড়ের মানুষ সুদীর্ঘ কাল থেকেই ভাংগনের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি। আমার বসত বাড়িটে ২০ বছর আগে বিরীন হয়ে এখন মূল ভুখন্ড থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে পদ্মা নদীর মাঝখানে রয়েছে। এবারের মত ভাংগনের তীব্রতা ও দীর্ঘ মেয়াদী আর কখনো হয়নি। আমরা সরকারের কাছে এই ভাঙ্গন রোধে একটি স্থায়ী সমাধান চাই।

শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কর্ণেল অব শওকত আলী বলেন, লিাসপুর থেকে কুন্ডেরচর হয়ে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর পর্যন্ত ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। এখানে প্রতি বছরই ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ জন্য ইতোপূর্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে স্থায়ী বাধ নির্মার্ণের জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি ডিপিপি তৈরী করা হচ্ছে। এতে প্রায় ১ হাজার কোটি খরচ হবে। স্থায়ী বেড়িবাধ নির্মান করা হলে এ এলাকার মানুষ ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

(কেএনআই/ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test