E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরের ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন, শংকিত শিক্ষক ও অভিভাবকরা

২০১৬ অক্টোবর ০৪ ১৭:২৮:৫৩
শরীয়তপুরের ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন, শংকিত শিক্ষক ও অভিভাবকরা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : সাম্প্রতিক প্রলয়ংকরী নদী ভাঙ্গনে শরীয়তপুরের ৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে নিলীন হয়ে গেছে। এতে দুই হাজারেরও বেশী শিক্ষার্থীর  পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও বার্ষিক পরীক্ষা হুমকির মুখে পরেছে। এলাকার সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পদ্মা বক্ষে নিশ্চিহ্ন  হয়ে যাওয়ায় শিশুদের শিক্ষা জীবন নিয়ে শংকায় পরেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। খোলা আকাশের নিচে, গাছ তলায়, মানুষের বাড়ির উঠানে, কাচারি ঘরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। জরুরী ভিত্তিতে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।

গত ২৫ জুলাই থেকে প্রমত্তা পদ্মায় ভাঙ্গন শুরু হয়ে আজো থামেনি। প্রতিদিনই একের পর এক জনবসতি বিলীন করে চলেছে রাক্ষুসী এই নদী। পদ্মার ভয়াল থাবায় হাজার হাজার মানুষ তাদের জমি জমা, ভিটে মাটি, স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পদের সাথে হারিয়েছে এলাকার ৭ সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে জাজিরা উপজেলার কুন্ডের চরেই ৫টি। শিক্ষা প্রষ্ঠিানগুলো হলো- কুন্ডেরচর কলমিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুন্ডেরচর সুরৎ খার কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুন্ডেরচর হাশেমালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কুন্ডেরচর ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। এছারা নড়িয়া উপজেলার চর নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ছৈয়াল পাড়া নান্নু মুন্সির কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বিলিীন হয়ে গেছে। এ সকল বিদ্যালয়ের বেশীরভাগ শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শ্রেনী কার্যক্রম চলছে এখন খোলা আকাশের নিচে, গাছ তলায়, মানুষের বাড়ির উঠানে আর কাচারি ঘরে।

৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অন্তত ২ হাজার ২ শত জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে বর্তমানে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেষ্ট ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা চলছে। সামনে সকল শিক্ষার্থীর পিএসসি, জেএসসি, বার্ষিক ও এএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা সামনে রেখে এভাবে বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিপাকে পরেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হওয়ায় সন্তানদের শিক্ষা জীবন নিয়ে অভিভাবকেরাও পরেছেন সীমাহীন দুঃশ্চিন্তায়। এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দাবি করেছেন ২০১৭ সালের নতুন বছরের শুরুতেই যেন নতুন ভবন বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারে।

কুন্ডেরচরের অভিভাবক আনোয়ার বেপারী, মোতালেব মোল্যা, বিএম রিপন, বড় কান্দির জসিম সরদার, চর নড়িয়ার নান্নু মাদবর ও রীনা আক্তার বলেন, পদ্মা পাড়ে জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ। সব সময়ই এই রাক্ষুসী নদী আমাদের একটু একটু করে গিলে খায়। নিয়ে যায় সব। জমি, বাড়ি, হাট বাজার, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল কিছুই গ্রাস করতে বাদ রাখেনা পদ্মা। প্রতি বছরই একটু আধটু ভাংগে। তবে গত ৫০ বছরের মধ্যে পদ্মায় এমন প্রলয়ংকারি, প্রলম্বিত ও দীর্ঘ মেয়াদী ভাঙ্গন কেউ দেখেনি। আমাদের শত বছরের ভিটে মাটি এবছরে সব চলে গেছে। এলাকার স্কুল গুলোও চোখের সামনে বিলীন হয়েছে। এখন এই হাজার হাজার ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে কি ভাবে চলবে তা আমরা ভেবে কুল কিনারা করতে পারছিনা। সরকারের কাছে আমাদের দাবি অতি অল্প সময়ের মধ্যে এলাকায় যেন নতুন স্কুল নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন হরা হয়।

শিক্ষার্থী নাদিয়া আক্তার, মাহমুদ হাসান, দুলাল, রুহানা ইয়াসমিন ও পংকজ কুমার বলেন, আমাদের স্কুল ভেঙ্গে যাবার পরে আমরা মানুষের বাড়ির উঠানে, খোলা আকাশের নিচে, গাছ তলায় ক্লাস করি। বৃষ্টি এলে পড়া লেখা আর হয়না। সামনে অমাদের পরীক্ষা। ঠিক মত ক্লাস করতে না পারায় পরীক্ষার প্রস্তুতিও ঠিক ভাবে নিতে পারছি না। আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। আমরা নতুন স্কুল চাই।

চর নড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তানজিলা আক্তার ও রিংকি আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের দুইটি ভবন ছিল। একটি সেমি পাকা টিন সেড অপরটি পাকা ভবন। দুই ভবনে ৬ টি শ্রেনী কক্ষ ছিল। গত ৫ বছর আগে থেকে নদী একটু একটু করে ভাংতে ভাংতে স্কুলের দিকে এগিয়ে আসছিল। ২০১১-১২ শিক্ষা বর্ষে আমাদের স্কুলে প্রায় ৫ শত শিক্ষার্থী ছিল। এখন তা হ্রাস পেয়ে দুই শততে এসে দাড়িয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ভবন দুইটি নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে। এরপর আমরা তিন কিলোমিটার দুরে নিজেদের বেতনের অংশ থেকে টাকা তুলে একটি বাড়ির উঠান এবং একটি কাচারী ঘর (বৈঠক খানা) ভাড়া নিয়ে দুই শতাধিক শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম যে ভাবে চালিয়ে যাচ্ছি এটাকে কোন ক্লাস নেয়া বা পড়ানো বলা চলে না। সামনে শিশুদের পরীক্ষা। আমরা খুব হতাশার মধ্যে আছি।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ে শিশুদের বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদান ও পরীক্ষা চালিয়ে নেয়া হবে। বার্ষিক ও অন্যান্য পরীক্ষায় যাতে একজন শিক্ষার্থী অনুপুস্থিত না থাকে সে জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সহায়তায় নতুন ভবন নির্মানের অর্থ বরাদ্দের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

(কেএনআই/এএস/অক্টোবর ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test