৭ দিনেও অগ্রগতি নেই শরীয়তপুরে ভেঙ্গে পড়া সেতু মেরামতের

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ধীর গতিতে কাজ করায় গত সাত দিন পার হলেও কোন অগ্রগতি হয়নি শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহা সড়কের চরসেন্সাস বালার বাজারে ভেঙ্গে পড়া বেইলী সেতু মেরামতের । ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৭ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভুল তথ্য দিয়ে চাঁদপুরের হরিনা ফেরি ঘাটের কর্তৃপক্ষ শত শত পন্যবাহি ট্রাক পাড় করায় মহা সড়কের শরীয়তপুর অংশে আটকে পরেছে সেগুলো। শরীয়তপুর সড়ক যোগাযোগ কর্তৃপক্ষও বলতে পারছেনা, ঠিক কবে নাগাদ সচল হবে এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি।

এদিকে ভেঙ্গে পড়া সেতুটি মেরামত বিলম্বিত হওয়ায় শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে চলাচলকৃত ফেরী গুলোতে প্রতিদিন ৫ লক্ষাধিক টাকা লোকসান হওয়ায় ফেরি সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে অতিরিক্ত পন্যবাহী একটি ট্রাক শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের চরসেন্সাস বালার বাজার বেইলী সেতু ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যায় । ট্রাকটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বরিশালের মঠবাড়িয়া যাচ্ছিল লোহার রড বোঝাই করে। ফলে শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরী সার্ভিস বন্ধ হয়ে চট্টগ্রাম-মংলা ও ভোমরা বন্দর এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে খুলনা, বরিশাল ও বৃহত্তর ফরিদপুরের ১৭টি জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনার ২ দিন পর থেকে ব্রীজ মেরামতের কাজ শুরু করে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অত্যন্ত ধীর গতি ও সেকেলে মান্ধাতার যুগের পদ্ধতিতে মেরামত কাজ চলায় দৃশ্যমান কোন উন্নতি হচ্ছেনা সেতু মেরামতের।

২৮ অক্টোবর রাতে সেতু ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও ১ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চাঁদপুরের হরিনা ফেরী ঘাট থেকে কয়েক শত পন্য বোঝাই ট্রাক পাড় করেছে ফেরী কর্তৃপক্ষ। ফেরী পাড় হয়ে মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে এসে নরসিংহপুর ফেরী ঘাট থেকে বালার বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে অন্তত ৪ শত ট্রাক আটকে পরে আছে। প্রতিটি ট্রাকেই পন্য বোঝাই করা। এই ট্রাকগুলোর ৭ শতাধিক চালক ও হেল্পার অত্যন্ত নিরাপত্তা হীনতার মধ্য দিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

ট্রাক চালক শেখ রফিকুল ইসলাম, আকতার হোসেন শরীফ, মো. কাজল মিয়া, আবুল কালাম ও জামাল হোসেন বলেন, আমরা চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, লক্ষ্মিপুর, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চল থেকে পিরোজপুর, বরিশাল, ভোমরা বন্দর ও মংলা বন্দরে যাওয়ার জন্য হরিনা ফেরিঘাটে আসি। ফেরী কর্তৃপক্ষ ২-৩ দিনের মধ্যে বালার বাজার সেতু মেরামত হয়ে যাওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাড় করে দেয়। এখন এপাড়ে এসে দেখি সেতু মেরামতের যে ধীর গতি তাতে এক মাসেও সেতুটি সচল হবে বলে মনে হচ্ছে না। এখন আমরা পড়েছি মহা সমস্যায়।

এদিকে বেইলী সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার হাজার হাজার লোক প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে ছোট নৌকায়। তাতে সবচেয়ে বেশী ভোগান্তিতে পড়ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ১ অক্টোবর শুরু হওয়া জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারি আবিদ, লায়মা ও ইলিন জাহান বলেন, আগে আমরা খুব সহজেই ব্রীজের উপর দিয়ে পার হতাম। এখন ব্রীজ না থাকায় আমাদের নৌকায় করে যেতে হচ্ছে। এতে আমাদের সময় বেশী লাগছে। পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই অতি তাড়াতাড়ি ব্রীজটি চালু করা হোক।

চাঁদপুর ফেরী ঘাট কর্তৃপক্ষ ভুল তথ্য দেয়ায় শত শত চালক ও হেলপার ভোগান্তিতে পরায় এর দায়ভার বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষকে বহনের দাবি জানিয়েছেন নরসিংহপুর ফেরী ঘাট শাখা ট্রাক-কভার ভ্যান ড্রাইভার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হরলাল মৈসাল।

সেতু মেরামতে ধীর গতির কারণে আগামী এক মাসেও এই সেতুটি সচল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন নরসিংহপুর ফেরিঘাট ম্যানেজার মো. আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, প্রতিদিন দুই পাড়ের ফেরীতে ৫ লক্ষাধিক টাকা লোকসান হওয়ায় চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটের ফেরী স্থানান্তর করে আরিচা ও শিমুলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা এই রুটের ফেরী চলাচল আপাতত বন্ধ রেখেছি।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, আমরা ৩০ জন শ্রমিক দিয়ে সেতুর ভাঙ্গা অংশ টুকু অপসারনের জন্য কাজ করছি। এ কাজ শেষ হলে নতুন বেইলী এনে সেতু সচল করা হবে। তবে এতে ঠিক কত দিন সময় লাগবে তা এ মুহুর্তে বলা যাবে না। আমরা সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যেই সেতু চলাচলের উপযোগি করে তোলার জন্য সচেষ্ট রয়েছি।

উন্নত টেকসই এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বালার বাজারের ভেঙ্গে যাওয়া এই সেতুটি সচল করে দেশের ১৭ জেলার মধ্যে আভ্যন্তরিন সড়ক যোগাযোগ চালুর দাবি করেছেন সমাজের সচেতন মানুষ।

(কেএনআই/এএস/নভেম্বর ০৩, ২০১৬)