E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরের শৌলপাড়ায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

২০১৬ নভেম্বর ০৪ ১৫:২০:১৬
শরীয়তপুরের শৌলপাড়ায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া পূর্ব সারেঙ্গা গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক আহসান উল্লাহ ঢালী (৬৫)’র  মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।  ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে হত্যার অভিযোগ পরিবারের। আরেক পক্ষের দাবি মৃত্যুর পরে শরীরে ইলেক্ট্রিক ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।  এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মামলা গ্রহণে রাজি হয়নি পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শৌলপাড়া ইউনিয়নের সারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা নিহত আহসান উল্লাহ ঢালী ও তার ভাই সাবেক ইউপি মেম্বার ওহাব ঢালীর সাথে একই গ্রামের মৃত খলিল খানের ছেলে সিরাজ খান, মোস্তফা খান, কালাম খান ও আলমগীর খানের সাথে ২০ শতাংশ জমি নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছিল। ৩১ অক্টোবর সোমবার সকালে স্থানীয় ফজলু খানের বাড়ির পশ্চিম পাশে নিজের জমিতে গরু নিয়ে যান আহসান উল্লাহ। সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে প্রতিপক্ষ ঘরের ভেতরে আটকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে আবার জমির ভেতর ফেলে রেখে যায় বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের। খবর পেয়ে আহসান উল্লাহর পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আহসান উল্লাহকে মৃত্যু ঘোষণা করে। এরপর সদর হাসপাতাল মর্গে আহসান উল্লাহর মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে সারেঙ্গা গ্রামে নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

আহসান উল্লাহর লাশ দাফনের পর সোমবার রাত আনুমানিক ৯ টার সময় তার ভাই সাবেক ইউপি মেম্বার ওহাব ঢালী শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ পরের দিন সকাল ১০ টায় যেতে বলেন। মঙ্গলবার সকালে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে নিহত আহসান উল্লাহর মেয়ে আসমা আক্তারের জবানবন্দিতে আহসান উল্লাহ হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করার কথা জানতে পারেন। এই কারণে মঙ্গলবার রাত ১২ টা পর্যন্ত ওহাব ঢালী থানায় বসে থেকেও মামলা দায়ের করতে পারেনি। পুলিশ তাকে জানিয়ে দেয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে অভিযুক্ত সিরাজ ঢালী, মোস্তাফা ঢালী ও আলমগীর ঢালী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আহসান উল্লাহ ঢালী ও ওহাব ঢালীর সাথে আমাদের গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে দ্বন্দ ছিল। আহসান উল্লাহ অসুস্থ্য ছিল। সে সোমবার মাঠে গরু চরাতে গিয়ে হার্ট এ্যাটাক করে (হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে) মারা যায়। এরপর স্থাণীয় রিক্সা ভ্যান চালক শাহজালাল সরদারের ভ্যানে করে লাশ শরীয়তপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহসান উল্লাহর ভাই ওহাব ঢালী আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য পথিমধ্যে ভ্যান থামিয়ে ডোমসার ইউনিয়নের মোল্যা কান্দি গ্রামের আমিন উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে নুরুল হক হাওলাদারের ঘরে নিয়ে ইলিট্রিক ইস্ত্রি দিয়ে মৃত আহসান উল্লাহর শরীরে ছ্যাকা দেয়। একটি লাশের শরীরে আয়রন মেশিনে ছ্যাঁকা দিয়ে আমাদেরকে মিথ্যে মামলায় জরানোর অপচেষ্টা চালায়। তারা আরো বলেন, আহসান উল্লাহর মেয়ে আসমা হাসপাতাল এবং পুলিশের কাছে জবান বন্দি দিয়েছে, তার বাবা আগে থেকেই অসুস্থ্য ছিল। তাকে কেউ হত্যা করেনি, হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে। এ কথার ভিডিও রেকর্ড রয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেরে দেয়া হয়েছে। আমরা তাকে হত্যা করিনি।

আহসান উল্লাহ ঢালীর মেয়ে আসমা আক্তার বলেন, আমার বাবাকে যারা খুন করেছে তারা আমার একমাত্র ভাইকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে আমাকে ভয় দেখিয়েছে। আমার বাবাকে হারিয়েছি। আবার আমার ভাইকে হারানোর ভয়ে আমি মিথ্যে জবানবন্দি দিয়েছি।

নিহতের ভাই আব্দুল ওহাব ঢালী জানায় বলেন, মোস্তফা খান গংদের সাথে আমাদের ২০ শতাংশ জমি নিয়ে দ্বন্দ ছিল। এ নিয়ে এলাকায় দরবার সালিশ হওয়ার কথা ছিল। সালিশ হওয়ার আগেই আমার ভাইকে ধরে নিয়ে খুন করা হয়েছে। আমি মামলা করতে গেলে থানা আমার মামলা নেয়নি। আমি আমার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চাই। এখন খুনিরা আমাদের বাড়ির সামনে এসে দিন রাত হুমকি দিতেছে। আমরা এই হত্যাকান্ড নিয়ে মামলা মোকদ্দমা করলে আরো খুন করার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।

ভ্যান চালক শাহজালাল সরদার বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আমি আহসান উল্লাহ ঢালীর বাড়ি থেকে তার লাশ আমার ভ্যানে উঠিয়ে শরীয়তপুর হাসপাতালের দিকে রওনা দেই। শরীয়তপুর পৌর এলাকার কোটাপাড়ার মোড় পার হলে আমার ভ্যান বিকল হয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে একটি অটো রিক্সায় লাশ পাঠিয়ে দেই। কিন্ত ডোমসার মোল্যা কান্দি গ্রামে নুরু হাওলাদারের বাড়িতে আমার ভ্যান থামানো হয়নি। এমনকি ভ্যান থেকে লাশও নামানো হয়নি। যারা এ কথা বলছে তা মিথ্যা কথা।

ডোমসার মোল্যা কান্দি গ্রামের আমিন উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে নুরুল হক হাওলাদার বলেন, আমি একজন দিন মজুর। যখন যে কাজ পাই তখন তাই করি। সোমবার আমি অটো রিক্সা নিয়া সকালে বেড় হই। এরপর লোক মুখে শুনেছি সারেঙ্গা গ্রামে ঢালী বাড়িতে একজন লোক মারা গেছে। গত দুই দিন যাবৎ শুনছি, এক পক্ষ বলে বেড়াচ্ছে, হাসপাতালে নেয়ার পথে আমার বাড়িতে লাশ নিয়ে তার শরীরে ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাকা দেয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট কথা। এই ধরনের কথা যারা বলছে তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।

নিহত আহসান উল্লাহর ময়না তদন্তকারি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার মো. নওশাদ মাহমুদ ও ডাক্তার দেবাশীষ সাহা বলেন, আমরা আহসান উল্লাহর মৃত দেহের ময়নাতদন্ত করেছি। পুলিশের সুরৎহাল রিপোর্ট অনুযায়ী তার ডান কাধে ও শরীরের পেছন দিকে কয়েকটি পোড়া দাগের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এগুলোকে দেখে মনে হয়েছে বৈদ্যুতিক কোন আঘাতের চিহ্ন হতে পারে। তবে তার ভিসেরা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ঢাকা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই কেবল বলা যাবে কি কারনে আহসান উল্লাহর মৃত্যু হয়েছে।

শরীয়তপুর সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার তানভীর হায়দার শাওন বলেন, আহসান উল্লাহ ঢালীর মৃত্যুর পরের দিন আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তার এক মেয়ের দেয়া বিবৃতি আর তার চাচার অভিযোগ পরস্পর বিরোধী। আহসান উল্লাহর মেয়ে বার বার বলছে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আহসান উল্লাহর ভাই বলছে হত্যা করা হয়েছে। এখন ময়না তদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা থানায় মামলা নেয়া স্থগিত রেখেছি।

(কেএনআই/এএস/নভেম্বর ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test