E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় ইমারত শ্রমিকের মৃত্যু

২০১৬ নভেম্বর ১২ ১৬:১৭:২৫
শরীয়তপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় ইমারত শ্রমিকের মৃত্যু

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আকরাম এলাহীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার কারণে মনির হোসেন ফরাজী (৩২) নামে একজন ইমারত শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার আনুমানিক সকাল সাড়ে ৭টায় মনির হোসেন কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিনের মতো চিতলীয়া ইউনিয়নের মজুমদার কান্দি গ্রামের বাড়ি থেকে ডোমসার বাজারে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ডোমসার দীঘির পাড় ব্রীজের কাছে আসলে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। তখন স্থানীয় লোকজন তাকে সকাল সাড়ে ৮টায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ দেবাশীষ সাহা তাকে ভর্তি দেন এবং রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আকরাম এলাহীকে কল করেন। পাশাপশি তিনি রোগীকে ঢাকায় প্রেরনরে জন্য পরামর্শ দেন।

রোগীর ভর্তি ফাইল এবং অভিবাবক সূত্রে জানা যায়, ডাঃ আকরাম এলাহী সকাল সাড়ে ১০টায় উক্ত রোগীকে দেখেন এবং মন্তব্য লিখেন, সড়ক দুর্ঘটনায় তার ডান উরুর হাড় ভেঙ্গে গেছে এবং মগজে জখম প্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু ডাঃ আকরাম এলাহী উক্ত রোগীর চিকিৎসা হাসপাতালে না করে বা ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা না করে সকাল ১১ টার সময় হাজী শরীয়তুল্লাহ ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। তিনি ২০ হাজার টাকা চুক্তি বিনিময়ে উক্ত রোগীর পায়ের অপারেশন হবে বলে রোগীর অভিবাবকদের কাছ হতে নগদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা অগ্রীম গ্রহণ করেন। এদিকে রোগীর মস্তিস্কের আঘাত ও রক্তক্ষরন হওয়ার কারণে ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ মতে, ডাঃ আকরাম এলাহী আহত মনির ফরাজীকে হাজী শরীয়ততুল্লাহ ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিয়ে ৬ ঘন্টার মধ্যেও রোগীর আর কোন খোজ নিতে যাননি।

এদিকে মাথায় মারাত্মক ইনজুরীর কারণে রোগী ক্রমেই মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়াকে ভ্রুক্ষেপ না করে ডাঃ আকরাম এলাহী টাকার লোভে অন্ধ হয়ে গাঢাকা দেন। এমনকি তিনি এ ব্যাপারে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শও করেননি। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে বিকেল ৪টায় আবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গোরীকে ফিরিয়ে আনা হয়। চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা এবং ডাঃ আকরাম এলাহীর দায়িত্বে অবহেলার কারণে অবশেষে রোগীটি সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় মারা যায়।

এ ব্যাপারে মনির হোসেনের মা ছালেহা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আকরাম ডাক্তার আমার ছেলেটাকে মেরে ফেললো। আমার ছেলের মাথায় আঘাত লেগে কান দিয়ে রক্ত চলে এসেছে সে দিকে খেয়াল করেনি। সে শুধু পায়ের চিকিৎসা দেয়ার কথা বলে আমার ছেলেকে ঢাকা পাঠাতে দেয়নি। আকরাম এরাহাী ডাক্তার নামের একটা কষাই। আমি এর বিচার চাই।

মনির হোসেনের ছোট ভাই নূর হোসেন বলেন, হাসপাতালে আমার ভাইকে ভর্তি করার পর ডাক্তার আকরাম এলাহী তাকে চিকিৎসা দেন এবং বলেন, আপনার ভাইয়ের পায়ের অপারেশন এই হাসপাতালে হবে না। এই হাসপাতালে অপারেশন করার মতো কোন যন্ত্রপাতি নেই। আপনার ভাইকে এখন হাজী শরীয়তুল্লাহ ক্লিনিকে নিয়ে যান। আমি কিছুক্ষণ পরে এসে আপারেশন করবো। আমি তার কথা মতো হাজী শরীয়তুল্লাহ ক্লিনিকে নিয়ে যাই। অপারেশন করতে ২০ হাজার টাকা চুক্তি হয় তার সাথে। আমার কাছে তখন এতো টাকা ছিলো না। আমি তখন তাকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দেই। কিন্তু আমার ভাইয়ের যে মাথায় আঘাত লেগেছে সে জন্য ডাক্তার কোন চিকিৎসা দেয়নি। সে পায়ের অপারেশন করার জন্য অস্থির ছিলো। সে দুপুর ১২ টায় ক্লিনিকে যাওয়ার কতা বলে আর যায়নি। আমাদের ফোনও ধরেনি। ডাক্তারের এই অবহেলার কারনে আমার ভাইর মৃত্যু হয়েছে। আমরা তার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ আকরাম এলাহীর সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তাকে হাসপাতালের চেম্বারে পাওয়া যায়নি। পরে তার মোবাইলে যোগাযোগ করতে গেলে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার সহকর্মীরা জানান তিনি ঢাকায় চলে গেছেন।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমানের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমি ব্যাপারটি জানি না। তবে ব্যাপারটি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

শরীয়তপুর জেলা স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি ও শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ বি.এম মোজাম্মেল হক বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের চিকিৎসার মান ভালো করার জন্য আমি প্রতিনিয়িত বলে আসছি। এ বিষয়ে সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিচিৎসকের অবহেলায় কোন রোগী মারা যাবে অমার্জনীয়। আমি বিষয়টি কঠোর ভাবে দেখবো।

(কেএনআই/এএস/নভেম্বর ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test