E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এসএসসি‘র ফরম পূরণে সমিতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে চার গুণ টাকা

২০১৬ নভেম্বর ১৯ ১৩:০৮:৫৩
এসএসসি‘র ফরম পূরণে সমিতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে চার গুণ টাকা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি :প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় চার গুন বেশী টাকায় ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীরা। কোন রকমের নীয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন কায়দা কৌশলে সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ৩ শত ৪৫ টাকার স্থলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের থেকে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা করে ফি নিয়েছেন। অনৈতিকভাবে ফি গ্রহনের কথা প্রধান শিক্ষক অস্বীকার করলেও এর সত্যতা স্বীকার করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

২০১৭ সালে অনুষ্ঠেয় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার জন্য ফরন পুরণ শুরু হয়েছে চলতি মাসের ৭ তারিখ থেকে। শেষ হয়েছে ১৩ নভেম্বর। সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ে এবছর ৭৫ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য ফরম পূরণ করেছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ফরম পুরণের জন্য মুল্য (হার) নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতি বিষয় ৮০ টাকা, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি ৩০ টাকা, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ ফি ৩৫ টাকা, মূল সনদ ফি ১০০ টাকা, বয়স্টাউট/ গার্লস গাইড ফি ১৫ টাকা, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫ টাকা, এতে মোট ফি জমা দেয়ার কথা ১ হাজার ৩ শত ৪৫ টাকা। যা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বরাবরে ব্যাংক চালানের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়েছেন ৫ হাজার টাকা করে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে দিনে ও রাতে স্কুলে ডেকে নিয়ে ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করেছেন। যে সকল অভিভাবকরা ৫ হাজার টাকা যোগার করতে পারেননি তারা অনেক অনুনয় করে ৫-৬ শত করে টাকা কম দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও কর্মচারিরা জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ একাই এতগুলো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। এতে অন্য কোন শিক্ষককে তিনি দায়িত্ব প্রদান করেননি।

এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হারুন অর রশিদ (হারুন বাঘা) প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শুরু থেকেই বিদ্যালয়ে নানা ধরনের অনিয়ম করে আসছেন। তিনি এক সময় ইসলামী ছাত্র শিবিরের তুখোড় নেতা ছিলেন। আওয়ামীলীগের শাসন আমলে কিছু সুবিধাভোগি নেতার ছত্র ছায়ায় হারুন বাঘা এখন আওয়ামলীগের নৌকায় উঠে ফরিদপুর অঞ্চলের শিক্ষক সমিতির নেতা হয়েছেন। এক সময় তিনি শরীয়তপুর জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। শিক্ষক নেতা হওয়ার সুবাদে হারুন বাঘা কোন আইনকেই আইন বলে মানেন না। তার খেয়াল খুশি মতই স্কুল চালিয়ে যাচ্ছেন।

পরীক্ষার্থী মোহনা আক্তার শারমিন বলেন, আমার কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ফরম পুরণের জন্য ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরীক্ষার্থী সজীব, রাকিব ও ইকবাল হোসেন জানায়, তারা প্রত্যেকে ফরম পুরণের জন্য ৪ হাজার ৫ শত টাকা করে দিয়েছে।

অভিভাবক জামাল হোসেন মাদবর জানায়, তার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করছে। ছেলের কাছ থেকে বিদ্যালয় কোন বকেয়া টাকা পাওনা ছিল না। প্রধান শিক্ষক ফরম পুরণের জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করলে তিনি অনেক অনুরোধ করে ৭ শত টাকা কম দিয়ে ৪ হাজার ৩ শত টাকায় ছেলের ফরম পুরণ করিয়েছেন। আব্দুল হক সরদার জানান, তার মেয়ের ফরম পুরণের জন্যও ৪ হাজার ৫ শত টাকা নিয়েছে প্রধান শিক্ষক।

স্থানীয় অভিভাবক মোকলেছুর রহমান সরদার বলেন, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সংবাদ পেয়ে আমি বিদ্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন রিসিট দেয়না। হেড মাষ্টার হারুন এই স্কুলে অনেক অনিয়ম করায় ফরম পুরণের আগে আমি এলাকার মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও স্কুলের সভাপতি সালাম হাওলাদারকে বলেছিলাম একটি মিটিং করে টাকা নির্ধারণ করে দিতে। কিন্তু, চেয়ারম্যান আমাদের কথায় কান দেননি। এখন শুনা যাচ্ছে, ফরম পুরনের অতিরিক্ত টাকা চেয়ারম্যান আর প্রধান শিক্ষক ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারি জানান, প্রধান শিক্ষকের বাড়ি বিদ্যালয় ভবনের সাথেই। তাই পরীক্ষার্থীদের তিনি রাতে বিদ্যালয়ে ডেকে এনেও ফর্ম পূরণ করিয়েছেন। তারা আরো বলেন, কত জনের থেকে ফরম পূরণের জন্য কত টাকা নিয়া হয়েছে তা শুধু প্রধান শিক্ষকই জানেন। অন্য কোনো শিক্ষককেই এ ব্যাপারে জানানো হয়নি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, আমি কোন অতিরিক্ত টাকা গ্রহন করিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের ফরম পুরনের পর কোচিং ক্লাস, কেন্দ্র ফি এবং তাদের বকেয়া বাবদ কিছু টাকা নেয়া হয়েছে।

চিতলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, ফরম পুরনে অতিরিক্ত টাকা নেয়া সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়নি। প্রধান শিক্ষক কি দিয়ে কি করেন, তা সে নিজেই জানেন। আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন, উপজেলা শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফরম পূরণের টাকা নেয়া হয়েছে।







(কেএনআই/এস/নভেম্বর ১৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test