E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে জেলা প্রশাসকের আল্টিমেটাম

২০১৬ নভেম্বর ২৭ ১৯:৩৮:৩৬
ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে জেলা প্রশাসকের আল্টিমেটাম

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরনের মাধ্যমে এলাকার অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শিক্ষক নেতা হারুন অর রশিদ ওরফে হারুন বাঘা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নিজের অপকর্ম আড়াল করতে একের পর এক অপরাধের আশ্রয় নিচ্ছেন চিতলিয়া সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন বাঘা। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ১৫ দিনের মধ্যে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরৎ দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি সকল অভিভাবকদের সচেতন হতেও আহবান জানিয়েছেন।

২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা এসএসসি পরীক্ষার জন্য শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া সমিতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭৫ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরন করা হয়েছে। সরকারি নিয়মানুযায়ি ১ হাজার ৬ শত ৩০ টাকা করে ফরম পুরনের ফি নেয়ার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হারুন বাঘা নিয়েছেন ৫ হাজার টাকা। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন একই বিদ্যালয়ের সহকারি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবুল হোসেন। বিষয়টি এলাকার অভিভাবকেরা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে জানান। এর পর সংবাদ কর্মীরা সরেজমিন তদন্ত করে শিক্ষক, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদরে সাথে কথা বলে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন বিভিন্ন পত্রিকায়।

সংবাদ পত্রের প্রতিবেদন দেখে পরীক্ষার্থীদের থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ১৫ দিনের মধ্যে ফেরৎ দিতে জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশ প্রদান করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক। যাতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের ঠকিয়ে আর কোন দিন অতিরিক্ত ফি আদায় করতে না পারে সেজন্যও তিনি সকল অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক হারুন বাঘা টাকা ফেরৎ না দিয়ে তার কৃত অপকর্মকে ঢাকতে উপজেলার সকল প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করে অতিরিক্ত টাকা জায়েজ করার ফন্দি করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, সমিতির হাট স্কুলের ৭৫ জন পরীক্ষার্থীদের ডেকে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে, তাদের থেকে ১ হাজার ৮ শত টাকা গ্রহন করা হয়েছে মর্মে স্বাক্ষর আদায় করার চাপ প্রয়োগ করেন। এতে কোন কোন শিক্ষার্থী ডরে ভয়ে রাজি হলেও বেশীরভাগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলেছেন, যদি প্রধান শিক্ষক কর্তৃক আদায়কৃত পুরো টাকার রশীদ দেয়া হয় তবেই স্বাক্ষর দেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিতলিয়া সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, চিতলিয়া ইউনিয়নের সবচেয়ে অবহেলিত, পশ্চাদপদ ও দারিদ্র পীড়িত এলাকা পশ্চিমপাড়, টুমচর, ঝাউচর, দক্ষিন কান্দি, মাঝের কান্দি ও মজুমদার কান্দি গ্রাম। এই এলাকার ছেলে মেয়েরাই সমিতিরহাট স্কুলে লেখা পড়া করে। এসএসসি’র ফরম পুরনে প্রধান শিক্ষক হারুন বাঘা এ সকল অসহায় গরীব মানুষের ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা নিয়ে এখন মাত্র ১ হাজার ৮ শত টাকার ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু যত টাকা আদায় করা হয়েছে তত টাকার রশীদ বা ভাউচার দেয়া না হলে আমরা স্বাক্ষর দিবনা।

এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের মুঠোফোনে বার বার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার অপর সহযোগি বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, অতিরিক্ত টাকা থেকে সকল শিক্ষকদের এক মাসের বেতন পরিশোধ এবং যেসকল শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের কোচিং ক্লাস করাচ্ছেন তাদের বেতন দেয়া হবে। বেতনের টাকা বাদ দিলে ১ হাজার ৮ শত টাকাই হয় পরীক্ষাথীদের ফি’র মূল টাকা। তাই স্বাক্ষর দিতে বলা হয়েছে।

সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম হাওলাদার বরাবরের মতই বলেছেন, প্রধান শিক্ষক কি দিয়ে কি করেন এটা তিনিই ভালো জানেন। আমি ঢাকায় আছি, এ বিষয়ে বেশী কিছু জানিনা।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, শুধু সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ই না, জেলার যে সকল স্কুল এসএসসি’র ফরম পুরন বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে তাদের প্রত্যেককে ১৫ দিনের মধ্যে আদায়কৃত বর্ধিত টাকা ফেরৎ দিতে নির্দেশ দিয়েছি। এ আদেশ যারা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সকল অভিভাবকদের শতর্ক ও সচেতন হতে হবে, যাতে এই ডিজিটাল যুগেও যেন কেউ বিধি বহির্ভূতভাবে তাদের থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করতে না পারে।

(কেএনআই/এএস/নভেম্বর ২৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test