E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনে পর্যটকবাহী লঞ্চে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত

২০১৬ ডিসেম্বর ০৩ ১৮:০৪:০১
সুন্দরবনে পর্যটকবাহী লঞ্চে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনে অনিয়মই নিয়মে পরিনত হয়েছে। অব্যবস্থাপনার কারণে শুক্রবার রাতে আগুনে পুড়ে যায় পর্যটকবাহী ট্যুরিষ্ট লঞ্চ এমভি পেলিকেন-১। এক সময়ের ভাসমান হাসপাতাল ‘শাপলা’ সুন্দরবন খেকো সিন্ডিকেটের হাতে এসে রাতারাতি হয়ে যায় পর্যটকবাহী ট্যুরিষ্ট লঞ্চ ‘এমভি পেলিকেন-১’। এমভি পেলিকেন-১ নামের এই ট্যুরিষ্ট লঞ্চটির বিআইডাবলুটিএর সার্ভে সনদ নেই।

এমনকি সুন্দরবনের ইকো-ট্যুরিষ্ট বহনে এই লঞ্চটি বন বিভাগের নিবন্ধন তালিকাও নেই। এসব না থাকার পরও দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ উপায়ে সুন্দরবনে দেশী-বিদেশী পর্যটক বহন করেছে লঞ্চটি। এসব জেনেও পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের ‘বনরাণী’ লঞ্চের ইলেক্টিশিয়ান আতিয়ার রহমান বাবুলের সুন্দরবন হলিডেজ এ্যান্ড ট্যুরসের অবৈধ ট্যুরিজম ব্যবসাকে সুযোগ করে দিতে বন কর্মকর্তার ছিলেন নিশ্চুপ। এর আগে পশ্চিম সুন্দরবনের মংলা ফুয়েল জেটিতে কর্মরত বন বিভাগের কর্মচারী অন্য এক বাবুলের অবৈধ ট্যুরিজম ব্যবসায় নিয়োজিত এমভি ‘শাহী দূত’ নামের পর্যটকবাহী লঞ্চটি গত বছর সুন্দরবনের ডুবো চরে থাক্কা খেয়ে তলা ফেটে ডুবে যায়।

বন বিভাগের কর্মচারীরা অবৈধ ভাবে ট্যুরিজম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় একের পর হুমকিতে পড়ছে সুন্দরবন। শুক্রবার রাতে আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি বিআইডব্লিউটিএ সার্ভে সনদ ও বন বিভাগের নিবন্ধন ছাড়া পর্যটক নিয়ে কোন ক্ষমতার জোরে সুন্দরবনে ঢুকলো বা কে তাদের সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি দিল তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রথম দিনের তদন্তে এসব বিষয় উঠে আসায় খোদ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে শুরু শুরু হয়েছে তোলপাড়।

এদিকে চাঁদপাই রেঞ্জের হাড়বাড়িয়া বন অফিসের সামনে নোঙ্গর করে থাকা পর্যটকবাহী লঞ্চে লাগা আগুন সাড়ে ৫ ঘন্টা পর নিযন্ত্রনে আসে। শুক্রবার সন্ধ্যা পোনে ৭ টায় লাগা আগুন রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিটসহ নৌাহিনী কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এই অগ্নিকান্ডে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সুন্দরবন বিভাগ লঞ্চটিতে থাকা ২৬ পর্যটকসহ ৩৯ জনকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ। এই কমিটি আহবায়কসহ অপর দুই সদস্য এসও আলাউদ্দিন ও ওসি কামরুল ইসলাম শনিবার সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে তদন্ত কাজ শুরু করেছে। এই তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম জানান, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ কোন অবৈধ কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেয়না। সুন্দরবন ব্ভিাগের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধ উপায়ে ট্যুরিজম ব্যবসা করে সুন্দরবনের ক্ষতি করবে আর আমরা তা চেয়ে চেয়ে দেখবো তা ভাবার কোন কারণ নেই। অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া পর্যটকবাহী লঞ্চটির বিআইডব্লিউটিএর কোন সার্ভে সনদ না থাকা বা সুন্দরবন বিভাগের নিবন্ধন তালিকাভূক্ত কিনা সে ব্ষিয়টি তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে। যদি সার্ভে সনদ বা বন বিভাগের নিবন্ধন তালিকায় লঞ্চটির নাম না থাকে তবে কোন কর্মকর্তা ওই লঞ্চটিকে সুন্দরবনে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

দুর্ঘটনা কবলিত এমভি পেলিকেন -১ লঞ্চটি সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ঢাকার একটি গার্মেন্টেসের ২৬জন কর্মকর্তা ও ১৩ জন ক্রু নিয়ে শুক্রবার সকালে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওইদিন সন্ধ্যায় লঞ্চটি পশুর নদীর হাড়বাড়িয়ায় সুন্দরবন বিভাগের টহল ফাড়ির সামনে নোঙ্গর করে। এ সময় হঠাৎ করেই লঞ্চটিতে পেছানের অংশে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে পর্যটকরা চিৎকার শুরু করে। আগুনের খবর পেয়ে সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীরা ঘটনাস্থলে পৌছে লঞ্চে থাকা ২৬ পর্যটক ও ১৩ক্রকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিযে যায়। ফায়ার সাভিসের চারটি ইউনিট, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চটির আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। তবে, লঞ্চটি পুড়ে সম্পূর্ন ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।

(একে/এএস/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test