E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঈশ্বরদীতে হ্যাচারী ব্যবসায় আবাদী জমি ও বসত বাড়ির ক্ষতি

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৪:৫৯:৪৩
ঈশ্বরদীতে হ্যাচারী ব্যবসায় আবাদী জমি ও বসত বাড়ির ক্ষতি

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীর ঢুলটিতে এলাকার শত শত গ্রামবাসীর ক্ষতি করে রমরমা হ্যাচারী ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যক্তি মালিকানাধীন ‘চুনু হাজীর হ্যাচারী’ নামের প্রতিষ্ঠান। ওই হ্যাচারীর অপরিকল্পিত পানি নিস্কাশনের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে অসংখ্য বসত বাড়ি। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অনাবাদী হয়ে পড়েছে বেশ কিছু ফসলী জমি। হ্যাচারির পানি নিস্কাশন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সরকারি জায়গায় তৈরি করা হয়েছে পাকা স্থাপনা। এসব কারণে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে তিন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের ঢুলটিতে চুনু হাজীর মৎস্য হ্যাচারীর পানি নিস্কাশনের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে ফুঁসে উঠেছে বহরপুর, ঢুলটি ও গাং মাথাল গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এলাকাবাসীর বিক্ষোভে প্রায় ২০ দিন বন্ধ থাকার আবারও অদৃশ্য কারণে সরকারি রাস্তার পাশে অবাধে পানি নিস্কাশনের জন্য স্থায়ী পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। আবারও পানি সরবরাহ চালু হওয়ায় এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র উত্তেজনা। ফলে যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেতে পারে বলে জানিয়েছেন ওইসব গ্রামের মানুষ। গত বুধবার সকালে সরেজমিন এলাকা ঘুরে এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে এসব নানা তথ্য জানাগেছে।

এলাকাবাসী আমজাদ হোসেন জানান, প্রায় ১০ বছর আগে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের ঢুলটিতে প্রায় ১০০ একর জমিতে একটি মাছের হ্যাচারী প্রকল্প শুরু করেন চুনু হাজী গং। সেই প্রকল্পে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উঠিয়ে প্রতিনিয়ত পুকুরগুলোতে তা বদল করা হয়। হ্যাচারী শুরুর পর প্রায় ৫ বছর ধরে বহরপুর এলাকার জোলা দিয়ে এই পানি কমলা নদীতে নিষ্কাশন করা হতো।

সেসময় ওই এলাকার মানুষের ক্ষতি হলে এলাকাবাসী প্রতিরোধ করেন। পরবর্তী সময়ে হ্যাচারী কর্তৃপক্ষ ঢুলটি, গাং মাথাল ও এর আশের পাশের বিভিন্ন মানুষদের নানা প্রলোভন দিয়ে ও ভুল বুঝিয়ে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের নীচ দিয়ে চোং বসিয়ে পানি নিস্কাশন শুরু করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে অবাধে পানি নিস্কাশন করেন ঢুলটির ওই গাং-এ। ফলে প্রায় সারা বছর জলাবদ্ধতা থাকার কারণে অনাবাদি অবস্থায় পড়ে থাকছে শত শত বিঘা আবাদী জমি।

হযরত আলী জানান, এরই মাঝে নষ্ট হয়ে গেছে ফলন্ত লিচু গাছ। আর নালার মাধ্যমে অবাধে পানি নিস্কাশন হওয়ায় ভেঙ্গে যাচ্ছে আশে-পাশের বেশ কিছু বসত বাড়ি। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা থাকার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ওই এলাকার যোগাযোগ স্থাপানের একমাত্র সেতুটি। খলিল প্রামাণিক বলেন, এসব কারণে চলতি বছরের শুরুর দিকে গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ তৈরী করে তাদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেন। এতে বেকায়দায় পড়ে যায় হ্যাচারী কর্তৃপক্ষ। সেসময় স্থানীয় ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের থেকে পানি নিস্কাশন বদ্ধ করার জন্য গণস্বাক্ষরও গ্রহণ করা হয়। এসময় এলাকাবসী বেশ স্বস্তিতেই ছিল।

কিন্তু হঠাৎ করেই সম্প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবাশালীদের ম্যানেজ করে সরকারি জায়গায় পাকা স্থাপনা (ড্রেন) নির্মাণ করে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। এই খবরে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন গ্রামবাসী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সমঝোতায় থাকা একজন জনপ্রতিনিধি জানান, পানি সরবরাহের মাধ্যমে আর কোন ক্ষতি হবে না এমন লিখিত নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদের পানি সরবরাহ করতে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও হ্যাচারী কর্তৃপক্ষ ওই ঢুলটি গাং এ সুইচ গেট নির্মাণ করে দিবে বলেও প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। তবে মহাসড়কের পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেন না বলেও তিনি জানান । কাজটি অন্যায় হয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

এসব বিষয়ে হ্যাচারীটির পরিচালক মুরাদ হোসেন শাহীন পানি সরবরাহ অল্প সময়ের জন্য বন্ধ ছিল স্বীকার করে বলেন, সমস্যার সমাধান হয়েছে, পানি সরবরাহের ফলে গ্রামবাসীর কিছু ক্ষতি হলেও ভবিষ্যতে আর হবে না বলে জানান।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিল মাহামুদ বলেন, কোন সরকারি জায়গায় ব্যক্তি স্বার্থে কোন পাকা স্থাপনা নির্মান করা অন্যায়। তাছাড়া পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি তিনি খোঁজ খবর নিবেন। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(এসকেকে/এএস/ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test