E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাট হাসপাতালে কর্তব্যরত সেবিকাদের কাণ্ড

২০১৭ মার্চ ০৮ ১৭:০৭:২৯
বাগেরহাট হাসপাতালে কর্তব্যরত সেবিকাদের কাণ্ড

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাট সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি এক প্রসুতি মাতার প্রসবকালীন সময় কর্তব্যরত সেবিকাদের বারবার ডেকে ঘুম থেকে তুলতে না পেরে ১৪ কিলোমিটার দূর থেকে একজন  ধাত্রীকে এনে সন্তানকে পৃথিবীতে আনার ঘটনায় বইছে সমালোচনার ঝড়।

প্রত্যক্ষদর্শী ওই প্রসুতি ওই নারীর একজন নিকট আত্মীয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেবার পর থেকে এই সমালোচনা আরো জোরালো হয়ে ওঠে। একাধিক ভুক্তভোগী এমন ঘটনা তাদের সাথেও ঘটেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিকে সরকার যেখানে মাতৃমৃত্যু হার কমাতে প্রসুতি মায়ের নিরাপদ প্রসবের জন্য প্রসুতি নারীকে হাসপাতালমুখী করার জন্য নানা উদ্যেগ গ্রহন করেছে, সেখানে খোদ হাসপাতালে ভর্তি প্রসুতি মাতাকে গভীর রাতে ১৪ কিলোমিটার দূর থেকে একজন ধাত্রীকে এসে প্রসব করানোর ঘটনায় সচেতন মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার উৎকূল গ্রামের হাফিজুর রহমানের স্ত্রী পারভিন বেগম তার মেয়ে প্রসুতি মাতা রুপা বেগমকে প্রসবজনিত কারণে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করেন। ২ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে ডেলিভারী করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলেও নিম্ন রক্তচাপ জনিত কারণে তাকে অস্ত্রপাচার করা থেকে চিকিৎসকরা বিরত থাকেন। গাইনি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে তার শরীরে রক্ত দিয়ে পরবর্তিতে শনিবারে (৪ মার্চ) অপারেশন করা হবে বলে জানানো হয়।

কিন্তু শুক্রবার রাত বারোটার দিকে প্রসুতি মাতা রুপার প্রসব বেদনা শুরু হলে তার মা পারভিন বেগম কর্তব্যরত সেবিকাদের কাছে যান। কিন্তু অনেক ডাকাডাকির পর ঘুমিয়ে পড়া সেবিকারা একবার সাড়া দিলেও রুম থেকে বের হয়ে আসেনি। বিষয়টি মোবাইলে ওই প্রসুতির নিকট আত্মিয় বাগেরহাটে কর্মরত একজন সংবাদকর্মীকে জানালে তিনি হাসপাতালে এসে কর্তব্যরত সকল নার্সকে পাশের কক্ষে ঘুম অবস্থায় দেখেন। ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে ডাকাডাকির পর কক্ষের ভিতরে থাকা একজন নার্স ওই কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা একজন আয়াকে নার্সিং কক্ষের দরজা বন্ধ করে এসে ঘুমাতে নির্দেশ দেন। আয়া চোখ খুললে ওই সংবাদকর্মীকে দেখেন। এসময় ওই সংবাদকর্মী তার কাছে রোগীর কি অবস্থা জানতে চাইলে সে বলে ‘আপারা একটু আগে এসেছেন, তারা কিছু জানেন না।’ তখন রোগীটিকে দেখার অনুরোধ করে ওই সংবাদকর্মী হাসপাতাল থেকে চলে আসেন।

এদিকে নিরুপায় হয়ে প্রসুতির মাতা তার জামাতা জামাল হোসেন ডাব্লুকে মোবাইলে বিষয়টি জানালে তিনি রাত পৌনে দুইটার দিকে মাছ পরিবহন করা পিকআপ ভ্যানে করে বাগেরহাট সদর উপজেলার কররী সিএন্ডবি বাজার এলাকা থেকে একজন ধাত্রীকে এসে রাত ৩টার দিকে ওই প্রসুতির স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারী) করানো হয়।

এ বিষয়ে প্রসুতি রুপা বেগমের মা পারভিন বেগম বলেন, মেয়ের নিরাপদ ডেলিভারী করানোর জন্য সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়ের বিপদের সময় নার্সদের বারবার ডাকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের ব্যবহার দেখে আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়েছে। অবশেষে আমি আমার জামাইকে বিষয়টি জানালে সে একজন ধাত্রী এনে আমাদের বিপদমুক্ত করেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে গিয়ে আমার মত বিপদে যেন কোন লোক না পড়ে।

বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ( আরএমও) ডাঃ মোশারেফ হোসেন জানান, এবিষয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(একে/এএস/মার্চ ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test