E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত দিনাজপুর

২০১৭ আগস্ট ২৬ ১৫:১৭:২৮
ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত দিনাজপুর

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত দিনাজপুরে প্রাণিকুল, অবকাঠামো ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এ বন্যায় জেলায় এক লাখ ৫৫ হাজার ৪৭১টি পরিবারের ৬ লাখ ২১ হাজার ৮৮৪ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মারা গেছে ৩১ জন মানুষ। প্রায় ৬ লাখ গবাদিপশু হুমকির মুখে পড়েছে। বিনষ্ট হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার হেক্টও ফসলি জমি। এ নিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়েছে বানভাসি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ।

বন্যার পানি নেমে গেছে। কিন্তু এখনো বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে উত্তরের জনপথ দিনাজপুর। কেউ কেউ কোন মতো ঝুপড়ি বেঁধে ধাকলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ঘর-বাড়ি মেরামত করতে না পারায় অনেকে বসবাস করছে খোলা আকাশের নীচে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের চরম সংকটে ভুগছে তারা।

বিরল উপজেলা পলাশবাড়ী এলাকার কৃষক আজাহার আলী জানান,আমরা এখন কি খাইয়া বাঁচিমো। আমার তামাম শেষ ! রোপা আমন যা ল্গাাইছোনা তা, বানের পানিত ডুবি পচি গ্যাইছে। শুধু আজাহার আলী নয়, ওই এলাকার শাহাজান,মকছেদ,মেহেদি,রমজান,ফরিদসহ সবাইরে একই দশা। এলাকায় পানি সরে যাওয়ার পর পচাঁ-দুগন্ধে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে পেটের পীড়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব।

সরকারি হিসেব মতে, ভয়াবহ বন্যায় দিনাজপুরের ১৩ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে প্রায় ৬ লাখ মানুষ। ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯০টিরও বেশী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭১টি পরিবারের ৬ লাখ ২১ হাজার ৮৮৪ জন মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে ৫৯ হাজার ২৯৯টি ঘরবাড়ী। এসবের অধিকাংশই বহু বছর আগের ঐতিয্যবাহী মাটির ঘর। বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

এছাড়াও প্রায় ১২ হাজার পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এসব বানভাসি মানুষের যথাসাধ্য সহায়তা করার চেষ্টা করছেন,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা। কিন্তু এ বিয়য়ে তারা সরকারসহ বিত্তবানদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিরল রানীপুকুর ইউপি চেযারম্যান ফারুক আজম জানান, সমস্ত এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার পর,মানুষের করুন অবস্থা সৃষ্টি হয়। সরকারি রিলিফের আশায় না থেকে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে খিচুরী আর ভাত রান্না করে সকলের খাওযার ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন পানি সরে যাওয়ায় অনেকে বাড়ি গেছে। কিন্তু সব ভেঙ্গে যাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে তারা।

বন্যায় জেলার ১৬৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে ১১৪ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া এলজিইডি’র ২২ কিলোমিটার স্থানীয় সড়কের মধ্যে ৫০ ভাগ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শতাধিক কালভার্ট নষ্ট হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুরা পড়েছে বিপাকে।

জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ৬ লাখ গবাদিপশু হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে অধিকাংশ গবাদিপশু। পড়েছে চরম গো-খাদ্যের সংকট। এ কথা স্বীকার করেছেন,দিনাজপুর প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা.আবুল কালাম আজাদ।

তিনি জানান,জেলায় ১৫ লাখ গরু, ২ হাজার ৮২৭টি মহিষ, ৯ লাখ ৩৩ হাজার ছাগল ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ভেড়া রয়েছে। এর মধ্যে আসন্ন কুরবানির জন্য ৫৯ হাজার ২৬০ জন খামারী ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৯টি গরু ও ৭০ হাজার ৭৯৬টি খাসি মোটাতাজাকরণ করেছিল। কিন্তু জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ৩ লাখ ৭২ হাজার ৫০৫টি গরু, ১০৭টি মহিষ, ২ লাখ ১ হাজার ৯৩১টি ছাগল ও ১১ হাজার ৪৭০টি ভেড়া বন্যাকবলিত হয়। বন্যায় গো-খাদ্যের জন্য ৩৪৭ একর জমির কাঁচাঘাস ও ১ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন খড় নষ্ট হয়। ফলে জেলায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেয়া দিয়েছে।

বন্যায় এ জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। পানিতে ডুবে, সাপে কেটে ও দেয়াল চাপায় মৃত্যু হয়েছে তাদের। এমন তথ্য দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ভানভাসি মানুষের কষ্ট লাঘবে এ পর্যন্ত সরকারি ভাবে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য দু’হাজার মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণ, কৃষি পূর্ণবাসন,রাস্তা-ঘাট মেরামতমহ আরো ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, ক্রাণের পাশাপাশি বিশুদ্ধ,খাবার সেলাইনসহ আমরা বিভিন্ন ওষুধ সরবরাহ করছি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ সারওয়ার জানান, বন্যায় জেলার ১৬৪ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের মধ্যে ১১৪ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া এলজিইডি’র ২২ কিলোমিটার স্থানীয় সড়কের মধ্যে ৫০ ভাগ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শতাধিক কালভার্ট নষ্ট হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বানভাসি মানুষের সহায়তা করতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি জানান, বন্যার্তদের পর্যাপ্ত ত্রাণ দেয়া হয়েছে।আরো দেয়া হবে। গৃহহীনদের বাড়ি ঘর করে দেয়া হবে। কৃষি পূর্ণবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। কেউ না খেয়ে মরবেনা। সবাই ত্রাণ পাবে।

সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহ বন্যায় বিধবস্ত দিনাজপুরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন ৎ বাসভাসি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেরা।


(এসএএস/এসপি/আগস্ট ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test