E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিচার পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনরা

অনিমেষ হত্যা মামলায় রিমাণ্ড শেষে বিএনপি নেতা মালেক কারাগারে 

২০২৫ জানুয়ারি ২৯ ১৮:২৩:৩৭
অনিমেষ হত্যা মামলায় রিমাণ্ড শেষে বিএনপি নেতা মালেক কারাগারে 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার লাঙলদাড়িয়া গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ সরকার হত্যা মামলায় এক দিনের রিমাণ্ড শেষে শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক মালেক মল্লিককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

আসামি আব্দুল মালেক মল্লিক(৫৫) আশাশুনি উপজেলার লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের ওমর ছিদ্দিক মল্লিকের ছেলে।

এদিকে বাবুল আক্তার মোল্লার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির গ্রহণযোগ্যতা, মালিক মল্লিক আদালদে ১৬৪ না করা ও হত্যাকা-ের নায়ক অহিদ মল্লিক ও আলম মোল্লাকে চার দিনেও গ্রেপ্তার করতে না পারায় নিহত অনিমেষ সরকারের স্বজনদের মধ্যে ন্যয় বিচার পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে নাংগলদাড়িয়া গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে, নিহত সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ সরকারের বাড়ি অবস্থানকারি তার বাবা নিরঞ্জন সরকার, স্ত্রী সঞ্জিতা সরকার, মা শেফালী সরকার , বোন তন্দ্রা সরকারসহ স্বজনদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। মালেক মল্লিক, অহিদ মল্লিক ও আলম মোল্লার বাড়িতে এক আধ জন নারী ও শিশু ছাড়া কারো দেখা মেলেনি। বাবুল আক্তার মোল্লার বাবা আব্দুল খালেক মোল্লা, বাবুলের স্ত্রী আছিয়া, অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আকাশ হোসেনসহ কয়েকজন সাংবাদিক দেখেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন। তারা বাবুল আক্তারকে নির্দোষ বলে দাবি করে ২৪ জানুয়ারি রাতের বিভিন্ন কথা তুলে ধরেন।

সাংবাদিক পরিচয় জেনেই অনিমেষের বাবা নিরঞ্জন সরকার এ প্রতিবেদককে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলেন, বাবুল আক্তার মোল্লা আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে তা যথাযথ বলে তার মনে হয়নি। মালেক মল্লিক দ্রুত জামিনে মুক্তি পেলে তাদের উপর নতুন করে হামলা হতে পারে। এমনকি পালিয়ে থাকা হত্যা মামলার মূল আসামী অহিদ মল্লিক ও আলম মল্লিক গ্রেপ্তার না হলে যে কোন সময় তাদের উপর হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন।

নিরঞ্জন সরকার তাদের রেকডীয় দুই একর ১৬ শতক জমি অর্পিত সম্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর প্রথমে পরোটাই ডিসিআর কাটা ও পরে অর্ধেকটা ডিসিআর কাটার কথা তুলে ধরেন। ভগ্নিপতি বিমল সরকারের কাছ থেকে মালেক মল্লিকের কেনা ১৫ শতক জমির রাস্তা না থাকায় তা ডিসিআরের মধ্যে রেখে অন্য জায়গার জমি যে যার মত দখল করে নেওয়াসহ অনেক কথা তুলে ধরেন নিরঞ্জন। ডিসিআরকৃত জমি দখলে নিতেই অহিদ মল্লিক ও মালেক মল্লিক পরিকল্পিতভাবে তার ছেলে অনিমেষকে হত্যা করেছে বলে জানান নিরঞ্জন সরকার।

নিরঞ্জন সরকার ঘেরের পাশে ছেলের ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন (পায়ের) দেখিয়ে বলেন, এখানেই অনিমষেকে মরে ফেলা হলে কিভাবে লাশ আধা কিলোমিটার দূরে ইমদাদুল হকের জমির নিম গাছে ঝুলতে দেখা গেলো? পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নোমান হোসেন, পিবিআই, সিআইডি, র‌্যাব এর কর্মতারাসহ অনেকেই ঘটনার তদন্তে এলেও বিএনপি নেতা মালেক মল্লিকের হুঙ্কারে সবকিছু থেমে যাবে। বিচার তো দূরের কথা , তাদের জমি জায়গা ফেলে রাতের আঁধারে দেশ ছাড়া ব্যতীত কোন উপায় থাকবে না। সবশেষে হত্যৗাকারিদের ব্যবহৃত কিছু দেশীয় অস্ত্র একটি স্থানে জমা আছে এবং তার দ্রুত উদ্ধার করার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে পুলিশের কাছে আহবান জানান।

নিহত অনিমেষের স্ত্রী সঞ্জিতা সরকার বলেন, নয় মাসের মেয়ে ও চার বছরের ছেলেকে নিয়ে তার শেষ পর্যন্ত কোথায় হবে তা নিয়ে তিনি সংশয়ে রয়েছেন। শ্বশুরের ঔষধ কেনা ও সংসার খরচ কোথা তেকে যোগাড় করবেন তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তাদের গ্রামের কয়েকজন বাজারের দোকানদারদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়ে তাদের দিয়েছেন। সেটা দিয়ে না হয় ১৫ দিন চলবে। এরপর তাদের কিভাবে চলবে? আসামীরা এতই শক্তিশালী যে কোন হিন্দু লোক মামলার সাক্ষী হতে চাইনি। তবে ৫ আগষ্টের পরবর্তীতে তাদের এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নানমুখী চাপের মধ্যে রয়েছেন উল্লেখ করে নিরঞ্জন বলেন, বিচার না পেলে বাড়ির সকলে মিলে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নোমান হোসেন বলেন, মালেক মল্লিককে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তদেন্তর স্বার্থে সবকিছু বলা যাবে না। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এ হত্যার ক্লু উদঘাটনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। খুব শ্রীঘ্রই অহিদ মল্লিক ও আলমসহ জড়িতদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে তিনি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, জমির সীমানা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ২১ জানুয়ারি অনিমেষকে মারপিট করেন প্রতিবেশি অহিদ মল্লিক ও তার ভ্ইা ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক মালেক মল্লিক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানোয় গত ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় অহিদ মল্লিকের বাড়িতে এক শালিসি বৈঠক হয়। সেখানে শালিসদাররা শালিসের ভার মালেক মল্লিকের উপর চাপিয়ে দিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন। একপর্যায়ে অনিমেষের মুখে ঘুষি মেরে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেন অহিদ মল্লিক। এরপর তার বোন তন্দ্রার হাতে থাকা অনিমেষের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর অনিমষেকে খুন করার হুমকি দেন মালেক ও অহিদ। বিকেলে অনিমেষ নিজের জীবন বাঁচাতে ঢাকায় কাজ করতে যাওয়ার কথা বলে মাকে। রাতে দোকান থেকে ঘের থেকে বাড়ি ফেরার সময় অনিমেষকে রাত ১০টার দিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়। নিহতের মা শেফালী রানী সরকার ছেলেকে হত্যার ঘটনায় মালেক মল্লিক ও তার ভাই অহিদ মল্লিকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজকে আসামী করে থানায় এজাহার দেন। শনিবার সকাল ১১টায় নাকতাড়া কালিবাড়ি বাজার থেকে মালেক মল্লিক ও বিকেলে বাবুল আক্তার মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। বাবুল আক্তার মোল্লা সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একই দিনে মালেক মল্লিকের এক দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর শেষে থানায় আনা হয়।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ জুলাই ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test