E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

লোকবল না থাকলেও অফিস ব্যবহার হচ্ছে বিউটি পার্লার হিসাবে

ঝিনাইদহে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক তালিকায় নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান

২০২৫ অক্টোবর ১০ ১৮:০৫:৪০
ঝিনাইদহে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক তালিকায় নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : এবারও সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকায় নাম এসেছে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের। কোনটির অস্বিত্বই মেলেনি, কোনটি আবার দুই কক্ষের অফিসের একটি বিউটি পার্লার একটি অফিস হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। 

সম্প্রতি প্রকাশিত পর্যবেক্ষণ সংস্থার তালিকায় নাম এসেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তিনটি সংস্থার। সদর উপজেলার বিষয়খালী এলাকার আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থা, জেলা শহরের চাকলাপাড়া এলাকার এসোসিয়েশন ফর সোসিও ইকোনোমিক এ্যাডভান্সমেন্ট (এসিয়া) এবং একই এলাকার হেভেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। তিনটি সংস্তার অফিস ঘুরে মিলেছে নানা অসংগতি।

সদর উপজেলার বিষয়খালী, খড়িখালী এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালে বাজারের একটি আবাসিক ভবনে আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার যাত্রা শুরু হয়। পরে লোকসানে পড়ে সংস্থাটি ২০০৯ সালের দিকে মালিকানা বিক্রি করে দেওয়া হয় কালীগঞ্জের এক আওয়ামীলীগ নেতার কাছে। এরপর আর বাজারটিতে সংস্থার কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

বিষয়খালী, খড়িখালী, ছোট-খড়িখালী কোন গ্রামে গিয়েই পাওয়া যায়নি এই সংস্থার অফিস। এমনকি নির্বাচনের কমিশনের তালিকায় সংস্থার নির্বাহী প্রধান রোখসানা খাতুনের এলাকায় কোন খোঁজ মেলেনি। এই এলাকার অনেক মানুষই জানেনা ঠিক কবে কার্যক্রম ছিল সংস্থাটির, বা আদৌ ছিল কি না।

অপরদিকে শহরের চাকলাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি আবাসিক ভবনের নিচ তলায় ঝুলছে এসোসিয়েশন ফর সোসিও ইকোনোমিক এ্যাডভান্সমেন্ট (এসিয়া) এর সাইনবোর্ড, অপরপাশে বিউটি পার্লারের সাইনবোর্ড। নিচতলার দুটি কক্ষের একটিতে বসে আছেন সংস্থার নির্বাহী প্রধান ও সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এই দুটি কক্ষকেই অফিস দাবি করলেও গত এক বছর একটি কক্ষ ব্যবহার হচ্ছে বিউটি পার্লার হিসাবে।

নির্বাহী প্রধানের নিজ মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে হেভেন সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার অফিস হিসাবে ব্যবহার হয়। এই সংস্থারও নির্বাহী প্রধান ও সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিজেই। কক্ষটি বন্ধ ছিল, সাংবাদিক দেখে তিনি অফিস খুলে দেখান। দুটি অফিসের মধ্যে শুধু এসিয়া অফিসের একটি কক্ষে আনোয়ার হোসেনকে বসে থাকতে দেখা গেছে। তবে তার পরিচালিত দুটি অফিসের একটিতেও অন্য কোন সদস্যকে পাওয়া যায়নি। টেবিলে কম্পিউটার ও কিছু ফাইল দেখা যায়।

এসিয়া ও হেবেন এই দুই সংস্থার নির্বাহী প্রধান আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি নিজেই দুটি প্রতিষ্ঠান চালায়। আমাদের সদস্য ২৮ জন। তবে আমি ছাড়া কারো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোন অভিজ্ঞতা নেই।

অভিজ্ঞতা ছাড়া তারা কিভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন আর নিজের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষকের তালিকায় স্থান পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে কমিশন থেকে প্রশিক্ষণ দেবে, তাতেই চলবে। সদস্যরা শিখে নেবে। আর কমিশন তালিকা চেয়েছিল আমরা আবেদন করে সেই তালিকায় স্থান পেয়েছি। সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে বিষয়খালী বাজারের ব্যবসায়ী দবির আলী ও খড়িখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ বলেন, 'বাজারের একটি আবাসিক ভবনের আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যালয় ছিল। যা প্রায় ১৭ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। আর গ্রামেও এই সংস্থার কাজ আছে বলে শুনিনি, তাদের সংস্থাও দেখিনি।'

আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মালিক ইমদাদুল হক পিন্টু বলেন, 'লোকসানে পড়ে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এরপরে আর কোন কার্যক্রম আছে বলে আমার জানা নেই।'

মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বলেন, 'অনেক আগে আলোকিত সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যক্রম ছিল। ঋণদানের কাজ হতো। বহু বছর তাদের কোন কাজ চোখে পড়েনা।

তবে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, 'নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক তালিকায় এমন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম আসা খুবই দুঃখজনক। তারা নিজেরাই কোন দিন পর্যবেক্ষন করেনি। তাহলে তাদের দিয়ে কতটুকু কাজ আশা করা যায়।'

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ সংস্থার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেই ভাবেই সংস্থাগুলো আবেদন করে। এখানে জেলার কোন ভূমিকা নেই।'

(এসআই/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১০ অক্টোবর ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test