E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গলাচিপায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপে শিক্ষার আলো ছড়ানো এক শিক্ষক

২০১৭ অক্টোবর ২২ ১৬:১৫:৫১
গলাচিপায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপে শিক্ষার আলো ছড়ানো এক শিক্ষক

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ চর বাংলা। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নের একটি অংশ এ দ্বীপটি। দ্বীপটিতে প্রায় দেড় হাজার লোক বসবাস করছেন। দ্বীপটির ভোটার সংখ্যা এক হাজারের উপরে। ওই দ্বীপের মানুষজন জমিতে চাষাবাদ করে ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চারদিকে নদী বেষ্টিত বিদ্যুতের আলো বিহীন দ্বীপটির লোকজন নিতান্তই গরীব ও খেঁটে খাওয়া। ইরেজী ২০০৫ সনে চর বাংলার এ দ্বীপে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

বিদ্যালয়টির নাম চর বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দ্বীপটিতে ১০০ ব্যারাকের একটি আশ্রায়ন কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য ওখানে তিনটি জামে মসজিদ আছে। দ্বীপটির পূর্ব পাশে রয়েছে একটি বন। বনের মাঝে আছে চিতা বাঘ, হরিণ, বুনো মহিষ ও নানা প্রজাতির পশু-পাখি ও সরিসৃপ।

ওখানকার প্রাপ্তবয়স্ক লোক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অধিকাংশই অশিক্ষিত কিংবা স্বল্প শিক্ষিত। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ১৯৭ জন শিক্ষার্থী লেখা-পড়াকরছে। শিক্ষক মাত্র চারজন। দু’জন পুরুষ ও দু’জন মহিলা। এদের মধ্যে একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে সিরাজ সরদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়টি যেন শিক্ষার্থীদের একটি মিলন মেলা ও বিনোদনের স্থান। অসুস্থ থাকা ছাড়া কোন শিক্ষার্থীই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেনা।

ইতোমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আল-আমিন একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে ওই দ্বীপে সুপরিচিতি লাভ করেছেন। এ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে কোমলমতি শিশুদের মাঝে তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মেধা, বিচক্ষণতা, ধৈর্য্য, সততা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওর্মি, ফারজানা, শাহিন, তুহিন, মোহাম্মাদ আলী এরা সকলে এ প্রতিবেদককে জানায়, আমাগো স্কুলে আইসা লেখা-পড়া করতে ভাল লাগে। আমরা প্রতিদিন স্কুলে বিস্কুট পাই। আমরা কেউ একদিন স্কুলে না আইলে আল-আমিন স্যার বাড়িতে আইসা আমাদের খবর নেন।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক দেলোয়ার মৃধা, আবুবকর মোল্লা, জাহিদ হাওলাদার,আ. রবখাঁন, ইউনুচ মোল্লা এরা সকলে জানান, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আল-আমিন স্যার খুব যত্ন কইরা আমাগো বাচ্চাগো পড়াইতেছেন। বাচ্চারা যহন বাড়িতে আইয়া জোরে জোরে বই পড়ে তহন আমাগো পরানডা জুড়াইয়া যায়। আল-আমিন স্যারের জন্যই আইজ আমাগো বাচ্চারা মন দিয়া লেখা-পড়া করতাছে।

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আল-আমিন বলেন, শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে উৎফুল্লের সাথে মনযোগ সহকারে লেখাপড়া করছে। তবে বর্ষা মৌসুমে এই চরের কিছু এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাচ্চাদের স্কুলে আসতে একটু অসুবিধা হয়। আমি সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে ভালভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে যাচ্ছি। এ বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করতে এতটা আগ্রহী-এ কথা ভাবতে আমার খুব ভাল লাগে। তাই বিবেকের সাথে প্রতারণানা করে মেধা ও শ্রম দিয়ে সততার সাথে শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ বিদ্যালয়ের সকল প্রকার কাজ নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. রফিক সরদার বলেন, প্রধান শিক্ষক আল-আমিন সুনামের সাথে শিক্ষকতা করছেন। স্কুলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ যেমন স্কুল মেরামত, টয়লেট মেরামত, টিউবওয়েল মেরামত ও স্কুলের মাঠ ভরাট কাজের তদারকি তিনি গুরুত্বের সাথে করেছেন। তাছাড়া স্কুলের আঙ্গিনাসহ চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ রোপন করে তিনি সকলের কাছে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছেন।

প্রধান শিক্ষকের সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মো. হাসান সরদার বলেন, প্রধান শিক্ষক আল-আমিন এর প্রচেষ্টায় এই চরের ছেলে-মেয়েরা আজ লেখা-পড়ায় মনযোগ দিয়েছে। তাঁর কোন দুর্নাম নাই।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাবুল মুন্সি বলেন, আসলেই আল-আমিন একজন ভাল শিক্ষক। তাঁর জন্যই চর বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আজ শিক্ষার আলো জ্বলছে। তাঁর শিক্ষার ছোঁয়া পেয়ে কোমলমতি শিশুরা যেন আজ চতুর্দিকে তাদের জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আ. ছত্তার জোমাদ্দার বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের নজর আছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। তাছাড়া ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভালভাবে শিশুদের পাঠদান করছেন।

(এসডি/এসপি/অক্টোবর ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test