E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সমুদ্রগামী জেলেদের বিশুদ্ধ পানির সংগ্রাম

২০১৭ নভেম্বর ০৭ ১৫:৪৬:১৭
সমুদ্রগামী জেলেদের বিশুদ্ধ পানির সংগ্রাম

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : সমুদ্রগামী জেলেদের ‘বিশুদ্ধ পানি’ সংগ্রহের জন্য এখনও সংগ্রাম করতে হচ্ছে। শীত শুরুর সাথে সাথে সমুদ্রের পানির লবনাক্ততা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্রে মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য ২-৩ কিলোমিটার দূর থেকে এ বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার আলীপুর ও মহীপুর মৎস্যবন্দরে কাছাকাছি গভীর নলককূপ থাকলেও পানির জন্য সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগ পোহাচ্ছে কুয়াকাটা, ঢোশ, গঙ্গামতি,খালগোড়া ও ফাতড়ার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে আশ্রয় নেয়া ট্রলারের জেলেরা।

আলীপুর-মহীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি ও জেলে সমিতি সূত্রে জানা যায়, মাছ শিকারের মেীসুমে প্রতিদিন কলাপাড়ার বিভিন্ন সাগর ও নদী মোহনা থেকে বিভিন্ন এলাকার অন্তত পাঁচ শতাধিক ট্রলারের ৭-৮ হাজার জেলে মাছ শিকারের জন্য গভীর সমুদ্রে যাত্রা করে। এ ট্রলারের জেলেরা ৫/৭দিন পর্যন্ত সাগরে মাছ শিকার করে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রলারে প্রতিদিন অন্তত ৬০ লিটার বিশুদ্ধ পানি প্রয়োজন হয়। কিন্তু ট্রলারে ৮০-১২০ লিটারের বেশি পানি থাকে না।

শরীরের চাহিদার অনুযায়ী পানি কম খাওয়া ও পানি সংকটের কারণে অনেক সময় সাগরের পানিই তাদের খেতে হয়। এ কারণে অতিরিক্ত লবনাক্ততা ও পানি ফুটিয়ে পান না করার কারনে কিডনীসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে জেলেরা।

কুয়াকাটা সৈকতে নোঙর করে রাখা এফবি সাইরাজ ট্রলারের ইমান হোসেন, এফবি মাহিয়া ট্রলারের আলম মিয়া জানান, কুয়াকাটায় খাবার পানির সমস্যা বেশি। সৈকতের মাঝিবাড়ি, জিড়োপয়েন্ট, খালগোড়া, শুটকি পল্লী, ঝাউবন এলাকায় মাছ ধরা ট্রলার বেশি নোঙর করে। কিন্তু এখানে নেই গভীর নলক‚প। এখান থেকে কন্টিইনার করে পানি আনতে হয় অনেক দূর থেকে। তাই ইচ্ছা সত্বেও পর্যাপ্ত পানি ট্রলারে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে নিয়ে আসা জেলে জাহাঙ্গীর খলিফা বলেন, তাদের ট্রলারে ১৪ জন জেলে। ৫০ টাকা দিয়ে মাত্র ২০ লিটার পানি সংগ্রহ করেছেন। শীত মেীসুম হওয়ায় এখন সাগরের পানির লবনাক্ততা বেশি। আগামী বর্ষাকাল পর্যন্ত লবনাক্ততা আরও বাড়বে। এখন ট্রলারে রান্নার কাজ সাগরের পানি দিয়ে করলেও অল্প অল্প করে তারা সবাই এই ২০ লিটার পানি দিয়ে চলবেন। কারন তিনদিনের জন্য তারা সাগরে যাচ্ছেন।

ধুলাসারের ট্রলার মালিক হারুন মিয়া জানান, ট্রলারে বরফ, জাল, জ্বালানী, খাবারসহ অন্তত ১০-১২ মন মালামাল থাকে। জায়গাও বেশি না থাকায় একটা/দুইটা পানির কন্টিইনার ট্রলারে নিয়ে যায় জেলেরা। বর্ষা হলে পানির সমস্যা হয়না। তখন জেলেরা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে। কিন্তু পানি সমস্যার কথা তারা এতোদিন ভাবেননি।

আলীপুর-মহীপুরের একাধিক ট্রলার মালিক, মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের জন্য বয়া, লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু যে পানি সবচেয়ে বেশি দরকার তার উৎসই সৃষ্টি করা হচ্ছে না। আলীপুর,মহীপুর, কুয়াকাটা, ঢোশ,গঙ্গামতি এলাকায় জেলে পয়েন্টে গভীর নলক‚প স্থাপনের জেলেদের দাবি থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

কলাপাড়া হাসপাতাল, কুয়াকাটা হাসপাতাল ও মহীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, উপক‚লীয় জেলে পলøীর বাসিন্দারা এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসে তারা অধিকাংশই ডায়রিয়া, পেটের সমস্যা, কিডনী সমস্যাসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জেএইচ খান লেলীন জানান, একজন পুর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫-৮ লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন। শরীরে পানি সরবরাহ কমে গেলে এবং সমুদ্রের পানি পান করলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাগরে মাছ শিকার করা জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা পানিবাহিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

(এমকেআর/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test