E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই গভীর নলকূপ স্থাপন

২০১৮ জানুয়ারি ২৮ ১৮:৩৩:০৮
নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই গভীর নলকূপ স্থাপন

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে গভীর নলকূপ স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে । নলকূপ স্থাপনে একটা থেকে আরেকটার দূরত্ব নীতিমালার তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না। একের পর এক নলকূপ স্থাপনে কৃষকের অভিযোগ গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।   

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ২০১৬ সালের নবেম্বর মাসে গভীর নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ করে পরিপত্র জারি করে কৃষি মন্ত্রণালয়। বিষয়টি অবহিত করে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষকে পত্র দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এরপরও গতবছর মান্দা উপজেলায় অন্তত ২৭টি নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বিএমডিএ।

শুধুমাত্র উপজেলার মাউল, সজনিপুর ও পুকুরিয়া মৌজার একটি বিলে ১৩ টি গভীর ও অগভীর (মিনি) নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এক কিলোমিটার আয়তনের এ বিলে বোরো চাষ হয় মাত্র ৬শ’ ২৫ বিঘা জমিতে। এত স্বল্প সংখ্যক জমিতে পানি সেচের জন্য ১৩টি নলকূপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপরিকল্পিতভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বিএমডিএ মান্দা জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এসব নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

তবে কৃষকরা বলছেন, ওইসব এলাকার কৃষি জমিগুলো অনেক আগে থেকে সেচের আওতায় রয়েছে। কোনো কৃষি জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় নেই। নতুনভাবে নলকূপগুলোর অনুমোদন দেয়ার কোন প্রয়োজনই ছিল না।

মাউল মৌজার গভীর নলকূপের অপারেটর আজাহার আলী জানান, ২০০৮ সালে মাউল মৌজায় ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এ নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ২০১৫ সালে মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সমীক্ষা ফি, লাইন নির্মাণ ও জামানত হিসেবে ৫৪ হাজার ৭শ’ ৭৭ টাকা জমা দেন। কিন্তু বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের অসহযোগিতা ও অনৈতিক দাবি মেনে না নেয়ায় এখন পর্যন্ত ওই নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি তিনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই তার নলকূপ থেকে মাত্র ২৫০ ফুট থেকে ৩শ’ ফুট দুরত্বের মধ্যে আব্দুল মজিদ ও আব্দুল লতিফ নামে দু’ব্যক্তিকে দুটি অগভীর (মিনি) নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এসব করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

অপারেটর আজাহার আলী আরও জানান, মাউল গ্রামের আজিবর রহমান নামে একব্যক্তিকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করিয়ে নিয়েছেন প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান। তার ওপর এ মামলার তদন্তভার দিয়েছে আদালত। আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য্য রয়েছে। প্রতিবেদন বিপক্ষে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন অপারেটর আজাহার আলী।

মাউল গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন, মোসলেম উদ্দিন, মমতাজ হোসেনসহ আরও অনেকে জানান, অল্প পরিমান জমির জন্য এতগুলো সেচ পাম্পের প্রয়োজন ছিল না। এসব নলকূপের সাহায্যে অপরিকল্পিতভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় আশপাশের গ্রামগুলোতে পানির সংকট দেখা দেয়। এভাবে পানি উত্তোলন অব্যাহত থাকলে আগামিতে এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিবে। একই সঙ্গে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

এদিকে উপজেলার গাংতা গ্রামের শফিকুল ইসলাম নামে একব্যক্তিকে গভীর নলকূপের অনুমোদন দেন বিএমডিএ প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান। এ অনুমোদনের ভিত্তিতে মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ওই নলকূপে সংযোগ প্রদান করে। পরবর্তীতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য আরেকটি পত্র দেন তিনি। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জুনিয়র প্রকৌশলী আব্দুস সালাম। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, বিএমডিএ মান্দা জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান।

তিনি বলেন, কৃষকের আবেদন ও উপজেলা সেচ কমিটির সিদ্ধান্তে এসব নলকূপের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

(বিএম/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test