E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভুল চিকিৎসায় প্রাণ গেলেও রাতারাতি অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা

২০১৮ মার্চ ১১ ১৭:৪৩:২৪
ভুল চিকিৎসায় প্রাণ গেলেও রাতারাতি অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : একসাথে সরকারি চাকুরি আর চিকিৎসার ব্যবসা চলছে নিত্যদিন। এতো নতুন নয় চলছে এ পথ অবিরাম। উপজেলায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও মিনিক্লিনিক। এসব ক্লিনিকে প্রতারণা অব্যহত আছে উপজেলা জুড়ে। এগুলো প্রতিষ্ঠানের নিজেস্ব ও সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে থাকা এক শ্রেনীর দালাল চক্র। এসব ক্লিনিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় কোন রোগী নিহত হলে বা কোন ক্ষতি হলে রোগীর স্বজনদের ম্যানেজ করেন এ দালাল চক্র ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

নিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের ক্ষতিপুরুন স্বরুপ কিছু অর্থ বিনিময়ে আপোষ মিমাংসা করা হয়। বার বার পার পেয়ে যায় যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব ক্লিনিকের দায়িত্বরত ডাক্তার ও মালিক পক্ষ । অব্যহত থাকে তাদের এ কার্যক্রম।

ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির নিহত হওয়ার ঘটনায় অর্থের বিনিময় ও ময়না তদন্তে মরদেহ কাটা ফারার দেখিয়ে ক্লিনিক মালিক পক্ষ ও প্রভাবশালীরাসহ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে পরিবারের সম্মতিতে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের পলাশবাড়ী - ঘোড়াঘাট সড়কের গোরস্থান এলাকায় সরকারি হাসপাতালের নার্স ফাতেমার মা- ক্লিনিক এন্ড নাসিং হোমে গত ৯ মার্চ শুক্রবার বিকালে উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর (মেরীরহাট) গ্রামের শাহিন মিয়ার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী নাজমা বেগমকে সিজার করার জন্য ভর্তি করানো হয়। নাজমা বেগমের এটি ছিলো তৃতীয় সিজার।

এ ক্লিনিকটিতে অপারেশন করার মতো দামী যন্ত্রপাতি নেই তবুও দিনে চারটি হতে পাচঁটি অপারেশন (সিজার) করেন একজন ডাক্তার পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ওয়াজেদ হোসেন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নার্স ও উক্ত ক্লিনিকের মালিক ফাতেমা বেগম।

কিন্তু উক্ত ক্লিনিকের ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে নাজমার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। ৩ হতে ৪ জন রক্ত দেওয়ার পরেও কোন কিছুতেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। সুচতুর কৌশলী নার্স ফাতেমা এবং ডাক্তার মিলে ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে এবং প্রসুতির স্বজনেরা কিছু বুঝে উঠার আগেই আধামরা রোগীকে নিয়ে রংপুরে যেতে বলে। নিজেদের এ্যাম্বুলেন্স এর ড্রাইভার যোগসাজসে দালালের সহযোগীতায় রোগীর স্বজনেরা তড়িঘড়ি করে রংপুরে নেয়ার পথে মাঝ রাস্তায় প্রসূতির মৃত্যু হয়।

এদিকে এঘটনার পর নাজমা বেগমের খোঁজে তার স্বামীর বাড়ী হোসেনপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জাপুর গ্রামে গেলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ন্যায় নিহত রোগী নাজমা বেগমের দায়িত্বহীন -উদাসীন নিজের স্বার্থ রক্ষাকারি স্বামী শাহিন মিয়া জানান,চিকিৎসা যাই হোক রংপুর নিয়ে যাওয়া পরে নাজমার মৃত্যু হয়। এবিষয়ে আমাদের কোন ওজোড় আপত্তি না থাকায় নাজমার লাশ দাফন করছি।

ক্লিনিকের মালিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর নার্স ফাতেমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে বাসায়, ক্লিনিক ও কর্মস্থল হাসপাতালে গিয়েও দেখা পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মা - ক্লিনিক এন্ড নাসিং হোমে সিজারের সময় দায়িত্বর ডাক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওয়াজেদ আলির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এর আগে ৩ বার সিজারের কারণে নাজমার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পারায় তাকে রংপুরে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগীর বাবার বাড়ীর নিকট আত্মীয় জানান,রোগীর তৃতীয় সিজার ছিলো এটি। একজন রোগীকে তৃতীয়বার সিজার করার মতো কোন ব্যবস্থা এ ক্লিনিকটিতে না থাকা স্বতেও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সিজার করে রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় ডাক্তার আর সেবিকা নামক কসাই। রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে রোগীকে আধা মরা করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রংপুরে রেফার্ড করে। সেখানে শেষ সময়ে উপস্থিত হলে রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর ক্লিনিকের দালালরাসহ মালিক কর্তৃপক্ষ ময়না তদন্তে কাটা ফারার দোহাই দিয়ে বেগানা পুরুষ দেখবে এতে পাপ আরো বেশী হবে ভুল ভাল বুঝিয়ে রোগীর পরিবারকে দুর্বল করে এরপর কিছু অর্থের বিনিময় ঘটিয়ে বিষয়টি আপোষ করা হয়।

(এসআইআর/এসপি/মার্চ ১১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test