E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চাঁদপুর শহরে পতিতা বেশে অভিনব কায়দায় ছিনতাই

২০২১ এপ্রিল ০৩ ১৪:৪০:২০
চাঁদপুর শহরে পতিতা বেশে অভিনব কায়দায় ছিনতাই

উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর : চাঁদপুর শহরে পতিতা বেশে অভিনব কায়দায় ছিনতাইকারী চক্রের পতিতা সর্দার নিমা আক্তার (২৫)সহ তার সহযোগী প্রান্ত দাস কালুকে আটক করেছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। ১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে তাদেরকে আটক করা হয়। 

এর আগে প্রথমে নিমা বেগম এবং পরে তার সহযোগী প্রান্ত দাস কালু (২২)কে অবরুদ্ধ করে সাধারণ জনগণের সহযোগিতায় চাঁদপুর কমিউনিটি পুলিশিং টহল সদস্যরা আটক করে। এরপর তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

জানা যায়, পুরাণবাজার হরিসভাস্থ পশ্চিম শ্রীরামদী এলাকার দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ছিলো নিমা। খারাপ কাজের সাথে জড়িত থাকায় অনেক আগেই এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়। নিমা আক্তার তার দেহ ব্যবসার খদ্দের জোগাতে প্রায়ই চাঁদপুর রেলওয়ে কোর্ট স্টেশন, কালীবাড়ি, লঞ্চঘাট, ছায়াবাণী, চিত্রলেখাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। এমনি অপকর্মের সাথী রনি নামের আরেক লম্পটের সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর দু’জনে দেহ ব্যবসার অন্তরালে ছিনতাই, মাদকব্যবসা, ব্লাক মেইল করাসহ সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করতো।

নিমা বেগমের স্বামী রনি ছাড়াও এই সিন্ডিকেটে আরও একাধিক দেহ ব্যবসায়ী নারী জড়িত রয়েছে। যারা দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময় ফাঁদ পেতে অসামাজিক কাজের অফার করে সাধারণ যুবকদের সর্বস্ব কেড়ে নিতো।

অভিযোগ রয়েছে, তাদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রক একাধিক প্রতারক যুবক আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পিছনে রেলব্রিজের কাছে এবং শহরের হাসান আলী স্কুল মাঠের চটপটি ফুচকার আসরে। সন্ধ্যায় এসব সিন্ডিকেট চক্রের টার্গেট হয় উঠতি বয়সের যুবকরা।

স্থানীয় নয়নসহ একাধিক লোক জানায়, আদালত পাড়ার চন্দন দাসের ছেলে প্রান্ত দাস কালু। নিমা বেগমের ডান হাত সে। কখনো পুলিশের সোর্স, কখনো রিকশাচালক, কখনো বা অটোবাইক চালক পরিচয়ে শহরে তাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। তবে তার মূল পেশা ইয়াবা বিক্রির ব্যবসা এবং ছিনতাই করা। অত্যন্ত চতুর এই যুবকের হাতে রয়েছে একাধিক নারী। যাদের দ্বারা ফাঁদে ফেলে তরুণ-যুবকদের আকৃষ্ট করে মান-সম্মান নষ্ট করাসহ সর্বস্বান্ত করাই তার মূল পেশা। তার বিরুদ্ধে থানায় ইতিপূর্বেও একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়।

স্থানীয়রা জানায়, নিমা বেগম এবং প্রান্ত দাস কালু ছাড়াও এ অপকর্মের সাথে আরো কয়েকজন পতিতা ও তাদের একাধিক বখাটে সহযোগী রয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে : খারাপ কাজের জন্যে নির্জন স্থানে নিয়ে ইভটিজিং করছে বলে চেঁচাতে শুরু করা এবং তারপর নারীর ইজ্জত বাঁচাতে এমনভাব করে দৌড়ে এসে অসহায় যুবকদের কিল-ঘুষি মেরে পকেট থেকে টাকা পয়সা, মোবাইল, ঘড়িসহ যাবতীয় কিছু নিয়ে চোখের পলকে উধাও হওয়া।

এসব কথা জানায় একাধিক ভুক্তভোগী। এমন একজন ভুক্তভোগী রুবেল পেদা (২৫)। ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ওই যুবক ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, অসামাজিক কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে নির্ধারিত নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নিমা বেগম তাকে রিকশায় তোলে। পরে তাকে ব্লাকমেইল করে তার পকেট থেকে ২৫শ’ টাকা এবং হাতে থাকা টাচ মোবাইল নিয়ে সে পালপাড়া থেকে রিকশা থেকে নেমে ছুটতে থাকে। এরই মধ্যে প্রান্ত দাস কালু এবং মনা পিছন দিক থেকে কিল-ঘুষি মেরে তার কাছে থাকা আরও ৫শ’ টাকা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে পথচারী নয়ন নামের এক লোকের সাহায্যে নিমা বেগমকে মিশন রোডে অবরুদ্ধ করে কমিউনিটি পুলিশের সাহায্য নেয়।

এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত করেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক সুফী খায়রুল আলম খোকন। তিনি জানান, খবর পেয়ে কমিউনিটি পুলিশিং চাঁদপুর অঞ্চল-৩-এর টহল সদস্য মনির হোসেনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রুবেল পেদা এবং ছিনতাইকারী নিমা বেগমকে জেলা কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটির কার্যালয়ে নিয়ে আসি।

কার্যালয়ে এনে ছিনতাইকারী নিমা বেগমের ব্যাগ থেকে ২৫শ’ টাকা (৫০০ টাকার ৫টি নোট) ও টাচ মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করি। এরপর থানায় ফোন করে পুলিশ এনে রুবেল ও আসামী নিমা বেগম দুজনকেই আইনের হেফাজতে পাঠিয়ে দেই। পরবর্তীতে প্রান্ত দাস কালুর খোঁজ পেয়ে তাকে অবরুদ্ধ করেও থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছি। কিন্তু ওদের সহযোগী মনা দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে আমি এবং আমার টহল বাহিনীর সদস্য মনির হোসেন এ ঘটনার সাক্ষী হয়ে বাদী রুবেল পেদাকে নিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেই।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রশীদ বলেন, আসামী মনাকে দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে। নিমা বেগম এবং প্রান্ত দাস কালু চিহ্নিত আসামী। এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ইউ/এসপি/এপ্রিল ০৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test