E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা

২০১৪ অক্টোবর ২২ ১৯:৩৪:২৬
হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা

নাটোর প্রতিনিধি : হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিদিন সড়ক দুর্টনায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। ঈদের পর থেকে এখন পযর্ন্ত  প্রায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায়।

সর্বশেষ সোমবার নাটোরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৩৩ জন। সড়কে প্রতিদিন যেভাবে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তাতে করে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে। গত ১০ মাসে এই মহাসড়কে মারা গেছেন অন্তত ৭৮ জন শিশু, নারী ও পুরুষ। একই সময়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন ১৬০ জন।

এদের মধ্যে নাটোর অংশে নিহত হয়েছেন ৫০ জন ও আহত অন্তত ৮১ জন। অপরদিকে সিরাজগঞ্জ এলাকায় নিহত হয়েছেন ২৮ জন ও আহত অন্তত ৭০ থেকে ৮০ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশই অঙ্গ হারিয়ে পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন যাপন করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে দূর্ঘটনার পরিসংখ্যান আশংকাজনক হলেও তা রোধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত উত্তরাঞ্চল মহাসড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে । এই মহাসড়ক পথে প্রতিদিন ঘটছে অহরহ দূর্ঘটনা । দূর্ঘটনার কারণে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছে অনেকে।

যমুনা সেতু উত্তরাঞ্চলের মানুষদের যোগাযোগের ক্ষেএে আর্শীবাদ বয়ে আনে। তারপর থেকেই এই মহাসড়কের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। প্রতিদিন এই মহাসড়কের উপর দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী বাহী বাস ও পণ্য বাহী ট্রাক সহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে।

হাইওয়ে বনপাড়া ও সলঙ্গা থানা সুত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর পশ্চিম এলাকা থেকে সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত দীঘ ১৮ কিলোমিটার এলাকা হাইওয়ে পুলিশের আওতায় রয়েছে এবং বনপাড়া হাইওয়ে থানার অধিনে ২৬ কিলোমিটার। মহাসড়কের আরোও প্রায় ১১০ কিলোমিটার পথ।

গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মহাসড়কে দূর্ঘটনায় নারী-পুরুষ ও শিশু সহ নিহত ৭৮ ও আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৬০ জন। এই মহাসড়কের চিহ্নিত স্থান কড্ডার মোড়, ঝাঐল ওভারব্রিজ,নলকা মোড়,পাঁচলিয়া,হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের গোজাব্রীজ, সাতর্টিরী, নাইমুরী, হরিণচরা, দবিরগঞ্জ, মহিষলুটি, মান্নাননগর, হামকুড়িয়া এবং নাটোর অংশে আগ্রান বাজার, কাছিকাটা, বিলবিলাস, রাজাকার মোড়, রেজুর মোড়, নয়াবাজার, সুতিরপাড়, চলনবিল ফিলিং ষ্টেশন অধিক দূর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। দূর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসাবে মহাসড়কে রোড ডিভাইডার না থাকা, ওভারব্রিজ না থাকা, চলাচলকারী যানবাহনের অধিক গতিবেগ, বাসের ছাদে যাত্রী উঠানো ,অবৈধ ভটভটির চলাচল আর চালকদের অর্সতকতা বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এলাকাবাসীর র্দীঘদিনের দাবি রোড ডিভাইডার ও ওভারব্রীজ।

সরকার দ্রত এ দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়ক থেকে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে চালকদের অনিয়ন্ত্রিত আর বেপরোয়া গতি, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, দূর্বল ট্রাফিক সিগনাল পদ্ধতি এই দূর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হলেও সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। সরকার যমুনা সেতুর দুই প্রান্তের সড়কগুলোকে ৪ লেনে উন্নতি করার ঘোষনা দিলেও তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের অভিযোগ সেতুর দুই প্রান্তের সড়কগুলো ৪ লেনে উন্নয়ন এবং বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ওভার ব্রীজ স্থাপন করলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালু হলে খুলে দেওয়া হয় এর দু’পারে নির্মিত ৩২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বড় একটি অংশের হাজার-হাজার যানবাহন এই সড়ক দিয়ে ঢাকায় চলাচল করছে। যে কারনে বাড়ছে দুর্ঘটনা। একটি হিসাব মতে প্রতি মিনিটে এই সড়কটি দিয়ে গড়ে ২৫টি যানবাহন চলাচল করছে।

যমুনা সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়ক থেকে হাটিকুমরল-বনপাড়া মহাসড়কে এ পর্যন্ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা মিলে প্রায় ১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে । এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালুর পর থেকেই এই সেতুর পুর্ব সড়কে প্রায় ২৪০টি দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে। বর্তমানে এই সংযোগ সড়কটির প্রশস্ততা বাড়িয়ে সড়কের মাঝ দিয়ে ডিভাইডার নির্মানের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। তাদের মতে রোড ডিভাইডার স্থাপন করা হলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যা কমবে। এলাকাবাসী দুর্ঘটনা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দফতরে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানান। দ্রুত রোড ডিভাইডার ও ওভারব্রিজ নির্মান করে সড়ক দূর্ঘটনা রোধে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে এমনটাই আশা করছেন এলাকাবাসী ।

এদিকে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিশেজ্ঞরা। একইসঙ্গে দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান তারা। বড়াইগ্রাম উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ডিএম আলম বলেন, এই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ গাড়ির বেপরোয়া গতি। সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে যদিও গাড়ি দ্রুত চালানোর মত অবস্থা নেই তথাপিও চালকরা বেপরোয়া গতিতে চালান। আর এ কারণে তারা গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন।

তিনি বলেন, গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে রাখলে, মদ্যপান অবস্থায় গাড়ি না চালালে, মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরলে, গাড়ি চালানোর সময় সিলবেল্ট পরলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়ন জরুরি।

পাশাপাশি মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের বোর্ড দিতে পারলে দুর্ঘটনা রোধ হয়। বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, যদি দুর্ঘটনা কবলিত স্থান গুলোতে ফুট ওভারব্রীজ দেওয়া হয় তবে দুর্ঘটনা ৮০ ভাগই কমানো সম্ভব। নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিকরুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে নতূন এসেছি । তাই দুর্ঘটনার কারণ ও তথ্য আমার জানা নেই।

বগুড়ার (হাইওয়ে) পুলিশ সুপার ইস্রাইল হাওলাদার বলেন, মহাসড়কগুলোতে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন যেন পাল্লা দিয়ে না চলে, নির্দিষ্ট গতি সীমার মধ্যে থাকে, পাশাপাশি ট্রাফিক আইন মেনে চলে সে সকল বিষয়ে কাজ করে হাইওয়ে পুলিশ। যাতে করে কোনো গাড়ি এ সকল কারণে দুর্ঘটনায় না পড়ে- সে ব্যপারে আমরা সচেতন থাকি। সড়কে দুর্ঘটনায় যেভাবে প্রাণ যাচ্ছে তাতে মানুষ আর সড়ককে নিরাপদ ভাবতে পারছে না। এ কারণে সড়ককে যাতায়াতের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি এখন সর্বস্তরের জনতার।

(এমআর/জেএ/অক্টোবর ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test