E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সালথার গট্টির সহিংসতা নিরসনে সমঝোতার বিকল্প নেই

২০২৩ এপ্রিল ০৮ ১৭:৪৩:৫৯
সালথার গট্টির সহিংসতা নিরসনে সমঝোতার বিকল্প নেই

আবু নাসের হুসাইন, সালথা : ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের চলমান সহিংসতা নিরসনে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের এক টেবিলে বসার দাবী জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। তারা মনে করেন আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল বাদ দিয়ে সমঝোতায় বসলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে। 

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, মারামারী, ভাংচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটতো। ২০১৭ ইং সালে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী ফের সালথা-নগরকান্দায় রাজনীতিতে আসার পর থেকে গত ইউপি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত গট্টি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা শান্ত ছিলো। বিশেষ করে গট্টি ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ ছিলো একটি দলে। আরেকটি দল ছিলো নামে মাত্র। তবে ইউপি নির্বাচনে পর থেকে গট্টি ইউনিয়নে গ্রাম্য দুটি দলই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাই মাঝে মাঝে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষ ও মারামারীর মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। মামলা-গ্রেফতারেও বন্ধ হচ্ছে না সহিংসতা। এতে আরো সহিংসতা বাড়ছে। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। এইসব থেকে পরিত্রান পেতে এখনি সময় উভয়পক্ষের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে স্থানীয়ভাবে এক টেবিলে বসে সমঝোতা করা। তাহলেই গট্টি ইউনিয়নে শান্তি ফিরে আসবে বলে তাদের দাবী।

গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ কর্মী সবুর খান বলেন, আমাদের প্রিয় নেতা লাবু চৌধুরীর নেতৃত্বে সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর এর প্রচেষ্টায় ২০১৭ সাল থেকে গত ইউপি নির্বাচনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত গট্টি ইউনিয়ন শান্ত ছিলো। নির্বাচনের পর আরেকটি গ্রাম্য দল তৈরি হয়। এরপর পর থেকেই মাঝে মাঝে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এই সহিংসতা নিরসনে করনীয় বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গট্টি ইউনিয়নের শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক জায়গায় বসে সমঝোতা করলে শান্তি ফিরে আসবে। আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো বলে বিশ^াস।

আগুলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ খান বলেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমি চাই গট্টি ইউনিয়নের ঝামেলাগুলো আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নিরসন করুক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের আরো যেসব সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আছেন, তারা সবাই গট্টি ইউনিয়নের উভয়পক্ষের লোকজনকে এক জায়গায় ডেকে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সামনে মিমাংসা করে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে ভালো হবে। আমি জনসাধারণের শান্তির জন্য সমঝোতার পক্ষে।

ভাবুকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি পাভেল রায়হান বলেন, গট্টি ইউনিয়নের মারামারী-হানাহানি নিরসনে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সমঝোতার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, প্রতিটি গ্রামে দুইটি গ্রাম্য দলপক্ষ রয়েছে, এসব দল চালানোর জন্য মাতুব্বররা রয়েছেন। দলপক্ষের মাতুব্বরদের একে অপরকে ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে। যখন তারা একে অপরকে ছাড় দিবে, তখনি ঝামেলা থেমে যাবে। এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনতে গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সমঝোতা খুব প্রয়োজন।

গট্টি ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু বলেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সামনে গট্টি ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে উভয়পক্ষের লোকজন নিয়ে বসে সমঝোতা করে দিলে শান্তি ফিরে আসবে। সেই ক্ষেত্রে দুটি পক্ষের মাতুব্বরদের কাছ থেকে মুচলেকা নিলে ভালো হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, কাইজ্যা মারামারী নিরসনের জন্য সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। গট্টি ইউনিয়ন আসলেই অশান্ত হয়ে গেছে। অন্যান্য ইউনিয়নগুলো আপাতত শান্ত আছে। গট্টির ঝামেলা নিরসনে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতেু ইউনিয়নটি চেয়ারম্যানের।

তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে সংসদ নির্বাচন। তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চিন্তা না করে আগে সংসদ র্নিাচনের চিন্তা করতে হবে। কাদা ছোড়াছুড়ি করলে আওয়ামী লীগেরই বদনাম হয়। সব মিলিয়ে নির্যাতনের স্বীকার হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। লাবু মামার সাথে গট্টির বিষয়ে আমরা কথা বলে কি করা যায়, সেই উদ্যেগ গ্রহণ করার চেষ্টা করবো।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, উপজেলার প্রতিটি গ্রামে দুটি গ্রাম্য পক্ষ রয়েছে। গট্টি ইউনিয়নেও প্রতিটি গ্রামে দুটি পক্ষ রয়েছে। প্রতিটি পক্ষের মাতুব্বররা রয়েছে। মাঝে মাঝে গট্টিসহ উপজেলার যেসব স্থানে সংঘর্ষ, মারামারী ও ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটে। এসবের জন্য আমাদের সবার বদনাম হয়। আবার অনেকেই বাড়ি-ঘর ছাড়া থাকেন, অনেকেই জেল খাটেন। সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। এসব থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করা সবচেয়ে উত্তম।

গট্টির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বাড়ি গট্টি। এই গট্টিসহ উপজেলার যেকোন স্থানে ঝামেলার বিষয়ে আমি সব সময় সমঝোতার পক্ষে। তাই গট্টি ইউনিয়নের ঝামেলা নিরসনের জন্য প্রিয় নেতা শাহদাব আকবর লাবু মামাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মিলে যেটা করবে, আমি তাদের সাথে আছি। আমি চাই মানুষ শান্তিতে থাকুক।

(এএন/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test