E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশু বাচ্চাকে বিক্রি করলেন বাবা!

২০২৩ জুন ১৮ ১৯:৩৮:২১
শিশু বাচ্চাকে বিক্রি করলেন বাবা!

কাজী হাসান ফিরোজ, বোয়ালমারী : সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু সন্তানকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রির অভিযোগে এক বাবাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে তাদের ফরিদপুর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে শিশুটির মামা দাউদ খালাসী বাদি হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করলে ওই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামে।

জানা যায়, বিয়ের পর থেকে বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের কমলেশ্বরদী গ্রামের রবিউল শেখ-শারমিন আক্তার দম্পতির ৩ বছরের এক কন্যা সন্তান নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। রবিউল একজন ভ্যান চালক। মাঝে মধ্যে দিনমজুরেরও কাজ করতো। যা ইনকাম করে আনে তাতেই স্ত্রী খুশি ছিল। ৬ মাস আগে নারগিস নামে এক নারীকে স্ত্রীর অজান্তে বিয়ে করে রবিউল। স্ত্রী তা সহ্য করেও একই বাড়িতে সংসার করে আসছিল। ঘটনার দিন ৯ মাস ৮ দিনের অন্ত:স্বত্বা শারমিন।

গত ৮ জুন শ্বশুর ইদ্রিস শেখ, স্বামী রবিউল ও তার সতিন নারগিস জোর করে অটো গাড়ীতে নিয়ে শারমিনকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে শারমিনকে জোর করে সিজার করায়। সিজারের পর একবার সন্তানকে চোখে দেখে স্ত্রী। পূর্বে থেকেই স্বামী রবিউল শেখ সন্তানকে বিক্রি করার জন্য লোক ঠিক করে রেখেছিল। সন্তান বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হলে মামা দাউদ খালাসি ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় শিশু চুরি অভিযোগ এনে শুক্রবার (১৬ জুন) মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করা হয় থানায়। মামলার পরপরই ওই রাতেই শিশুর বাবা কমলেশ্বরদী গ্রামের ইদ্রিস শেখের ছেলে রবিউল শেখ ও শিশুটি ক্রয় করা বাবুল মিয়া নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় শিশুটি কেনার সাথে জড়িত আরো দুই আসামী হলেন জেসমিন ও বাবলি।

মামলার বাদি শিশুটির মামা, পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার নটাখোলা গ্রামের দাউদ খালাসী বলেন, আমার বোনের সাথে বরিউলের সংসারে ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রবিউল ৬ মাস আগে আরেকটি বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। আমার বোন তা মেনে নিয়ে সতিনকে নিয়ে একই বাড়িতে সংসার করে আসছে। তারপরও আমার বোনের উপর রবিউল ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী, রবিউলের পিতা ইদ্রিস শেখ নানা ভাবে নির্যাতন করে আসছে।

এ ব্যপারে শিশুটির মা অসুস্থ্য শারমিন আক্তার বলেন, আমার শ্বশুর আর স্বামী মিলে আমাকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে জোরপূর্বক সিজার করায়। সিজার করার আগে আমাকে ইনজেকশন দিয়ে আমার কাছ থেকে কাগজে সই নেয়। অপারেশনের আগে এক নার্স আমাকে বলে যে আপনি বাচ্চা বিক্রি করবেন কেন। তখন আমি আর নাড়াচাড়া করতে না পারায় সিজার হবার পর নার্সরা আমার সন্তানকে আমার কাছে নিয়ে এসে কপালে চুমু খাওয়ায়। এরপর আর আমি আমার সন্তানকে চোখে দেখিনি। সন্তানকে ফিরে পাওয়া এবং স্বামীর বিচার চেয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, গত ৮ জুন মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারে মাধ্যেমে ছেলে সন্তান জন্ম হবার পর শিশুটির অবস্থা একটু আশংকাজনক থাকায় তাকে ফরিদপুর জায়েদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে আনা হয়। পরে শিশুটির বাবা রবিউল নিঃসন্তান বাবুল মিয়ার কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই রাতেই শিশুটিকে বিক্রি করে দেন।

শিশুটির মামা দাউদ অভিযোগ দিলে শিশুটির বাবা রবিউল ও শিশুটি ক্রয়ের সাথে জড়িত বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আসামীদের শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। শিশুটি বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

(কেএইচএফ/এএস/জুন ১৮, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test