E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রতিহিংসায় মায়ের জানাযাতেও অংশ নেননি ওই কর্মকর্তা

গৌরীপুর ইউএনও অফিসের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার মামলার জালে বন্দি জনগণ

২০২৩ আগস্ট ২৩ ১৮:৩২:২০
গৌরীপুর ইউএনও অফিসের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার মামলার জালে বন্দি জনগণ

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, বিশেষ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ইউএনও অফিসের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা রহিছ উদ্দিনের দায়ের করা মামলার জালে বন্দি জনগণ। অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামের জনগণ ওই কর্মকর্তার অন্যত্র বদলিসহ শাস্তির দাবি করছেন। 

জানা যায়, ইউএনও অফিসে কর্মরত থাকায় ওই কর্মকর্তা ক্ষমতার দাপটে মানছেন না সমাজ, তোয়াক্কা করছেন না ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে প্রতিহিংসা বশত রহিছ উদ্দিন তার গর্ভধারনী মায়ের মৃত্যুর পর মায়ের যানাজাও বয়কট করেছেন।

কথাটি সবার কাছে অবাক লাগলেও রহিছ উদ্দিন একথা স্বীকার করে বলেন, যে দিন মায়ের যানাজা ছিলো সে দিন ছিলো মাসের ১ তারিখ। এই তারিখে অনেক গোপনীয় চিঠি ডিসি অফিসে পাঠাতে হয়, তাই এসব রিপোর্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। মায়ের যানাজার কথা জানালে কর্তৃপক্ষ কি ছুটি দিতেন না? এর জবাবে তিনি বলেন, সে সময় দায়িত্বে ছিলেন হাসান মারুফ স্যার, স্যারের সাথে সম্পর্কটা তেমন ভালো ছিলোনা। তাছাড়া রহিছ উদ্দিন আরো বলেন, ছাত্র জীবনে মা আমাকে শান্তি দেয়নি, তাই মায়ের প্রতি অনেক অভিমানের কারণেও যানাজায় যাইনি। অপর দিকে মামলা দিয়ে জনগনকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে রহিছ উদ্দিন বলেন, গ্রামের লোকজন আমাকে নানা ভাবে অত্যাচার করছেন।

গৌরীপুর উপজেলার ছোট- বৃ-ডৌহাখলা গ্রামের স্বর্গীয় নায়ায়ন চন্দ্র রায়ের ছেলে কটন রায় চৌধুরী বিধান গত ১০ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক বরাবর রহিছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগটিতে রহিছ উদ্দিনের নানা অপকর্মের বিষয় তুলে ধরেন কটন রায়। এতে উল্লেখ করা হয়, রহিছ উদ্দিনের দেয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার প্রতিবেশী যুবতীর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। এছাড়া একই গ্রামের হাফেজ আব্দুল কদ্দুছ ২০১৮ সালে ৮৭৯ দান পত্র দলিল মূলে ২ শতাংশ জমির মালিক হন রহিছ উদ্দিন। ওই জমির পাশে আরো ১৮ শতাংশ জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মুসলিম আইনের বিধান মতে সুফা বা প্রিয়েমশনের অযুহাত দেখিয়ে ময়মনসিংহের বিজ্ঞ গৌরীপুর সহকারী জজ আদালতে কটন রায় চৌধুরী বিধানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

বর্তমানে রহিছ উদ্দিনের নামটি ওই গ্রামের মানুষের কাছে একটি আতংকের নামে পরিণত হয়েছে। ২২ আগস্ট মঙ্গলবার সরেজমিনে গেলে রহিছ উদ্দিনের অপকর্মের পক্ষে বিপক্ষে কথা তুলে ধরেন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ রহিছ উদ্দিন ও তার স্ত্রী। তবে ভুক্তভোগীরা রহিছ উদ্দিনের অন্যত্র জরুরি বদলি সহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন।

ডৌহাখলা ইউপি চেয়ারম্যান এমএ কাইয়ুম বলেন, ইউএনও অফিসের ওই কর্মকর্তার রহিছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমার হাতে এসেছে আমি তদন্ত করেছি। তবে জনগণ তার মামলার কারণে হয়রানি হচ্ছেন।

রহিছ উদ্দিনের স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানা বলেন, আমার স্বামী একজন ভালো লোক, তাকে নানাভাবে অত্যাচার করছে গ্রামের লোকজন। আমি এই ঘটনার বিচার চাই। গ্রামের মুরুব্বি আবুল কাসেম বলেন আমার ভাতিজিকে বিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল রহিছ উদ্দিন। এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার ভাইসহ অন্যান্য লোকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজা আফসানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে দু’দিন ধরে দায়িত্ব পালন করছি, তাই হয়তো রহিছ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আমার নজরে আসেনি, তবে খুঁজে দেখবো। ইউএনও স্যার ছুটিতে আছেন তিনি ছুটি থেকে আসলে এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

(এসবি/এসপি/আগস্ট ২৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test