E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জলদস্যুদের কবলে নাগরপুরের সাব্বির

২০২৪ মার্চ ১৩ ১৯:২৭:১৮
জলদস্যুদের কবলে নাগরপুরের সাব্বির

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী জাহাজের ২৩ জন নাবিকের মধ্যে রয়েছেন টাঙ্গাইল নাগরপুরের সাব্বির হোসেন (২৬)। একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেতে মা-বাবার আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।

বুধবার (১৩ মার্চ) নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে সাব্বিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাবা হারুন অর রশিদ হাউমাউ করে কাঁদছেন। মা সালেহা বেগম বিলাপ করছেন।

একমাত্র বোন মিতু আক্তার ভাইয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাইছেন। তাঁদের কান্না থামাতে গ্রামের লোকজন বাড়িতে এসে ভিড় করছে। গ্রামের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে এসে তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। তাদের একটাই দাবি, সরকার যেন দ্রুত সাব্বিরকে মুক্ত করে আনে।

সাব্বিরের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে। তিনি নাগরপুরের সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করে। টাঙ্গাইলের কাগমারীর এমএম আলী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্রগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী একটি জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন।

সাব্বিরের চাচাতো ভাই আহম্মেদ হোসেন রানা বলেন, ‘সাব্বিররা এক ভাই ও এক বোন। সে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। তার বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। বোনের বিয়ে হয়েছে। সাব্বিরের বাবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে প্যারাইলাইজড হয়ে শয্যাশায়ী।

সাব্বিরের চাকরি হওয়ার পর তার মা শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে সহবতপুরে তার বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। সহবতপুরের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে এখন কেউ আর থাকে না। একমাত্র উপার্জনক্ষম সাব্বির। তার কিছু হয়ে গেলে তাদের আর চলার উপায় থাকবে না। সরকারের কাছে দাবি জানাই, সাব্বিরসহ সবাইকে যেন জিম্মিদশা থেকে দ্রুত মুক্ত করে।’

সাব্বিরের একমাত্র বোন মিতু আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই গত সোমবার বিকেলে ফেসবুক পোস্টে জানায় যে তারা বিষুব রেখা অতিক্রম করেছে। তখন সে মাথা ন্যাড়া করে একটি ছবি আপলোড করে। এক মাস আগে সে বাড়ি এসেছিল। এক দিন থেকেই চলে যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পেয়ে সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। বাবা-মা খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তারা শুধু কেঁদেই চলছে আর বলছে, আমার ছেলেকে এনে দাও। আমার একমাত্র ভাইয়ের কিছু হলে বাবা-মাকে বাঁচানো যাবে না। অতিদ্রুত আমার ভাইকে মুক্ত করে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল মোল্লা বলেন, ‘খবরটি শুনে আমি সাব্বিরের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার মা-বাবা ছেলের জন্য অনেক কান্নাকাটি করছেন। আশা করি, সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।’

নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, ‘আমি সাব্বিরের বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবাকে আশ্বস্ত করেছি। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো চেষ্টা ও যোগাযোগ চলছে। আশা করি, দ্রুতই সাব্বিরসহ সব বন্দি মুক্তি পাবেন।’

(এসএএম/এএস/মার্চ ১৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test