E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উদ্দেশ্য প্রনোদিত বললেন বিবাদীরা

ফরিদপুরে সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ও আ. লীগ নেতা জীবন দেবনাথের বিরুদ্ধে মামলা 

২০২৪ এপ্রিল ০৫ ১৬:৪৩:২০
ফরিদপুরে সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ও আ. লীগ নেতা জীবন দেবনাথের বিরুদ্ধে মামলা 

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আদালতে ধর্ম অবমাননা ও মানহানীর অভিযোগ তুলে দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও লেখক প্রবীর সিকদার (৬০), এবং ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও ফরিদপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ড. যশোদা জীবন দেবনাথ (৫০) এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শামীম হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তি। 

শামীম হোসেন ফরিদপুর পৌরসভার পুর্ব খাবাশপুর এলাকার আ. জলিল শেখ ও মোসা. শান্তি বেগমের পুত্র বলে এজাহার সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, এই মামলার বাদী শামীম হোসেন ও মামলার তিনজন সাক্ষীর সবাই ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের কট্টরপন্থী সমর্থক।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেড আমলী আদালতে হওয়া এই মামলা (সিআর মামলা নং- ৬৯৩/২৪) এর ১ নং বিবাদী সাংবাদিক প্রবীর সিকদার রাজধানী ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক 'বাংলা ৭১', নিউজ পোর্টাল 'উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ' ও ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন 'উত্তরাধিকার ৭১' এর সম্পাদক এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের একজন খ্যাতনামা লেখক। তিনি ফরিদপুরের কানাইপুরের বিখ্যাত জমিদার বাড়ী 'সিকদার বাড়ী'র ১৯৭১-এর শহীদ পরেশ চন্দ্র সিকদারের পুত্র। ৭১-এ বাবা-কাকা সহ যার পরিবারের ১৪ জন স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের হাতে নিহত হোন।

মামলার ২ নম্বর বিবাদী ড. যশোদা জীবন দেবনাথ (সিআইপি) দেশের একজন খ্যাতনামা ব্যাবসায়িক নেতা ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগনেতা এবং ধর্মীয় নেতা। তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, ব্যবসায়িক সংগঠন এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি, ফরিদপুর জেলা পূঁজা উৎপাদন কমিটির সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু সংস্কৃতিক পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি ফরিদপুর সদরের ধোপাডান্ডা চাঁদপুরের মৃত ব্রজগোপাল দেবনাথের ছেলে। উভয় বিবাদীগণ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ব্যক্তি, দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত সমর্থক এবং কর্মী।

মোকদ্দমা ২৯৫(ক)/৫০১/৫০৫/৫০৫/১০৯/৩৪ পেনাল কোর্টের এই মামলায় বাদী শামীম হোসেন মামলার বিবরণে বিবাদী ওই দুই খ্যাতনামা ব্যক্তিকে ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষী, কুরুচিপুর্ণ, বিকৃত মানসিকতা ইত্যাদি ভাষা উল্লেখ করে, সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (ফেসবুক) স্টাটাসের উদ্ধৃতি তুলে ধরেন, যা ছিলো- "আমি যখন আপনার আজানের ধ্বনিতে বিরক্ত হই, তখন আমি নিজেই নিজেকে আবিষ্কার করি একজন মনোবিকারের জটিল রোগী হিসেবে"!

এদিকে সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের দাবি, তার স্টাটাসে নেগেটিভ কিছু নেই এবং এতে ইসলাম ধর্মের কোন অবমাননা করা হয়নি। শামীম হকের লোকজন এটাকে উস্যূ করে ফরিদপুরে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, শামীম হক আওয়ামী লীগের জেলার ক্ষমতা পেয়ে সন্ত্রাস চাঁদাবাজদের মদদদাতা হিসেবে ফরিদপুরে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি ফরিদপুরকে নষ্ট রাজনীতি ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্য করে গড়ে তুল ছিলেন। তাই, ফরিদপুরের সাধারণ মানুষকে দুর্বৃত্তদের বাঁচাতে, গত জাতীয় নির্বাচনে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে আজাদ'কে সমর্থন করেছেন।

তিনি জানান, 'আমি এ কে আজাদ সাহেবকে ভোট দেইনি, তাঁকে সমর্থন করেছি মাত্র। এ কে আজাদকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে জনগণ। তবে শামীম হকের পালিত সন্ত্রাসীরা আমার পিছনে কেন লেগেছে, সেটি আমার বোধগম্য নয়। কেন এই হয়রানিমূলক মিথ্যা মালমা, হুমকি ধামকি? সেটিও আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে' বলেও জানান এই সাংবাদিক।

'আমার বোন শেখ হাসিনা, 'বর্ণমালায় বাংলাদেশ' ও 'আমি শালা রাজাকার' বইয়ের লেখক সাংবাদিক প্রবীর সিকদার তাঁর ওই স্টাটাসের ব্যাংখায় আরেকটি স্টাটাসে বলেছেন, আমি যা লিখেছি তার সহজ বাংলা হচ্ছে- 'একজন মানুষ যদি অন্য ধর্মের আচার অনুষ্ঠানকে ব্যঙ্গ করেন বা বিরক্তি প্রকাশ করেন, তিনি যে ধর্মের মানুষই হোক, তিনি অবশ্যই মনোবিকারগ্রস্ত।' এই কথাগুলোতে মুলতঃ কোন ধর্মকে ছোট করার কথা নয় বলেও জানান প্রবীর সিকদার।

এদিকে মামলার আরেক বিবাদী ড. যশোদা জীবন দেবনাথ জানান, 'সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের স্টাটাস না বুঝে বা বুঝতে পেরেও উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে কিছু লোক দেশ বরেন্দ্র সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের নামে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা লিখতেছিলেন। যা আমার চোখে পড়লে আমি প্রথমে প্রবীর সিকদারের স্টাটাসটি পড়ে দেখি এবং বুঝতে পারি যে, যারা প্রবীর সিকদারকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গালাগালি করছেন তারা ভুল করছেন। তাই আমি আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা স্টাটাস দিয়ে লিখি-- 'ফরিদপুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির একটি তীর্থভূমি। কারো স্টাটাস না বুঝে অন‍্যদিকে ধাবিত না করার জন‍্য বিনিত অনুরোধ করছি।' ড. জীবন দেবনাথ আরও জানান, 'আমার উদ্দেশ্য ছিল যাতে কেউ ভুল না বুঝে ফরিদপুরকে অস্থির করে না তুলে। কিন্তু এসব নিয়ে এতো কিছু হবে বা একটা মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে মামলা পর্যন্ত গড়াবে তা ভাবিনি। এই মামলাটি সম্পুর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, হয়নানিমূলক, উদ্দেশ্য প্রনোদিত ও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি আমি এই মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি।'

এক প্রশ্নের জবাবে মামলার বিবাদী সাংবাদিক প্রবীর সিকদার জানান, 'আমি কখনোই কোন ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করিনা, আমি নিজেই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী একজন মানুষ। যারা এই মামলাটি করেছেন বা সাক্ষী হয়েছেন তারা সবাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের চিহ্নিত লোক। নির্বাচনে জনগণের দ্বারা পরাজিত হয়েছেন, হয়তো সেই পরাজয়ের প্রথম প্রতিশোধ হিসেবে এসব করে থাকতে পারেন তারা বলেও মনে করেন তিনি। মামলাটি ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট, হয়রানিমূলক ও অবশ্যই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলেও উল্লেখ করেন প্রবীর সিকদার।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি যে স্টাটাসটি দিয়েছি তা তো দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আমার হাজার হাজার ফলোয়াররা দেখেছেন। ফরিদপুর ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে আর কি কোন মুসলমান নাই? পৃথিবীর কোথাও এটি নিয়ে কোন কথা হয়নি। কারণ, আমি কোন ধর্মকে আঘাত দিয়ে কিছু লিখি নাই। প্রবীর সিকদার প্রশ্ন তুলেন, শুধুমাত্র ফরিদপুর শহরে কেন এই স্টাটাস নিয়ে এতো মাতামাতি হচ্ছে। এসবের পিছনের কারণ ক্ষতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলেও মনে করেন সাবেক এই ছাত্রলীগনেতা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের লেখক সাংবাদিক প্রবীর সিকদার।

এদিকে, মামলার বিবরণে বাদী শামীম হোসেন মুসলিম হিসেবে তার ও মুসলিম জাতির মানের যে হানি হয়েছে তার মূল্য পাঁচ কোটি টাকা উল্লেখ করেন। সাথে এও জানানো হয়, এটি অর্থে অপূরনীয় তাই মামলা করেছেন।

এদিকে, এই মামলার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচনে সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ফরিদপুর সদর আসনে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাই হয়তো পরাজিত শক্তি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন। ফরিদপুরবাসীকে ওইসব গুজববাজদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। তিনি এও বলেন, আমি সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ও জেলা আওয়ামী লীগনেতা যশোদা জীবন দেবনাথ উভয়ের ফেসবুক স্টাটাস পড়েছি। তিনি জানান, যে ব্যক্তির বাংলায় সামান্য একটু পড়াশোনা আছে, সে সহসায় বুঝবে এতে খারাপ কিছু নেই। এসব বিবাদীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, হয়রানিমূলক এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলেই মনে হচ্ছে। হয়তো মামলার বাদী আলোচনায় থাকতে, বা নেতার হারের প্রতিশোধে অতিউৎসাহী হয়ে বা ভাইরাল হতে এমন পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারেন বলেও ধারণা করছেন তিনি।

(আরআর/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test