E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভোলায় অদৃশ্য ৩১টি এবতেদায়ি মাদরাসা, উপ-মন্ত্রীর ভুয়া ডিও লেটারে মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দ

২০১৫ জানুয়ারি ১২ ১২:৫২:১৬
ভোলায় অদৃশ্য ৩১টি এবতেদায়ি মাদরাসা, উপ-মন্ত্রীর ভুয়া ডিও লেটারে মন্ত্রনালয়ের বরাদ্দ

আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ৩১টি ভুয়া এবতেদায়ি মাদরাসার নামে উপবৃত্তির টাকার হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে।

মন্ত্রণালয় থেকে এসব টাকা বরাদ্দের জন্য সরকারের বন ও পরিবেশ উপ-মন্ত্রীর ডিও লেটার জাল-জালিয়াতি করে শিক্ষা অফিস, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং তকথাকথিত এবতেদায়ি মাদরাসা সমিতির নেতারা সরকারের এসকল টাকা লটপাট করে খাচ্ছেন।

এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল কাগজপত্রে আছে, বাস্তবে নেই। নেই শিক্ষক, নেই কোনো শিক্ষার্থী। কয়েক’শ ভুয়া ভুতুড়ে শিক্ষার্থী দেখিয়ে চলতি বছরের প্রথম তিন কিস্তিতে এসব মাদরাসার নামে কয়েক লাখ টাকার উপবৃত্তি বরাদ্দ করে গায়েব করেছে সংশি্লষ্ঠরা।

অভিযোগে জানা গেছে, চলতি বছরের আগে চরফ্যাশনে স্বতন্ত্র কোনো এবতেদায়ি মাদরাসার অনুকূলে উপবৃত্তির বরাদ্দ ছিলনা। কোনো স্বতন্ত্র মাদরাসা চালুও ছিলনা। এবতেদায়ি মাদরাসা সমিতির নেতা পরিচয়ে একটি চক্র বন ও পরিবেশ উপ-মন্ত্রীর ডিও লেটার জাল-জালিয়াতি করে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নাম সর্বস্ব ৩১টি এবতেদায়ি মাদরাসার অনুকূলে উপবৃত্তির টাকা বরাদ্দপত্র ইস্যু করান। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথভাবে চালু আছে কী-না তা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানাতে চাওয়া হয়েছিল।

উপজেলা শিক্ষা অফিস মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবর না নিয়ে নাম সর্বস্ব ৩১টি প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে চালু আছে বলে প্রতিবেদন প্রদান করলে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রথম ৬ মাসের দুই কিস্তিতে নাম সর্বস্ব ৩১ এবেতেদায়ি মাদরাসায় গড়ে ৪২ হাজার ৫শ টাকা করে উপবৃত্তির বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব টাকা বরাদ্দ করতে গিয়ে উপজেলার সকল সরকারি ও বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত উপবৃত্তির টাকা কর্তন করা হয়। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হলে উপ-মন্ত্রীর ডিও লেটার জালিয়াতি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন।

চলতি বছরের তৃতীয় কিস্তির উপবৃত্তির টাকা নিয়ে একইভাবে হরিলুট করা হয়েছে। অভিযুক্ত ৩১টি স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার অনুকূলে ৩১ হাজার ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪২ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে উপজেলাব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি বিরতণকালে এসব মাদরাসার অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া টাকা বিরতণ না করে মাদরাসা সমিতির কর্মকর্তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ চরম আকার ধারণ করে। অগ্রণী ব্যাংক চরফ্যাশন ও শশীভূষণ শাখার ম্যানেজদের ম্যানেজ করে সমিতির সভাপতি রুহুল আমিনসহ হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক নেতা সব টাকা আত্মসাত করারও প্রমান পাওয়া যায়।
কাগুজে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রসূলপুর সাইয়েদিয়া এবতেদায়ি, মধ্য হাজারীগঞ্জ রহমানিয়া এবতেদায়ি, দক্ষিণ মাদ্রাজ মোহাব্বতিয়া এবতেদায়ি, শশীভূষণ আরব আলী এবতেদায়ি, দক্ষিণ হাজারীগঞ্জ নুরানিয়া এবতেদায়ি, এওয়াজপুর হামিদিয়া এবতেদায়ি, পশ্চিম এওয়াজপুর এবতেদায়ি, ওমরাবাজ হাসিমিয়া এবতেদায়ি, উত্তর চর মানিকা লতিফিয়া এবতেদায়ি, হাজারীগঞ্জ খাসেরহাট এবতেদায়ি, দক্ষিণ চর আইচা টুমচর এবতেদায়ি, এওয়াজপুর হাবিবিয়া এবতেদায়ি, কুকরী মুকরী গাফুরিয়া এবতেদায়ি, কুলসুমবাগ সোবহানিয়া এবতেদায়ি, চর নাজিম উদ্দিন রুস্তমিয়া এবতেদায়ি, পশ্চিম জিন্নাগড় এবতেদায়ি, মধ্য আবুবকরপুর এবতেদায়ি, উত্তর শিবা দৌলতখান কান্দি এবতেদায়ি, কুলসুমবাগ সোবহানিয়া এবতেদায়ি, দক্ষিণ আয়েশাবাগ মহব্বত আলী এবতেদায়ি, উত্তর আছলামপুর আব্দুল গনি এবতেদায়ি, আলীগাও ইব্রাহীম মিয়া এবতেদায়ি, পশ্চিম ফরিদাবাদ হাসেমিয়া এবতেদায়ি, চর তোফাজ্জল খোরশেদিয়া এবতেদায়ি, ফরিদাবাগ চৌকিদার বাজার এবতেদায়ি, ফরিদাবাদ সিদ্দিকিয়া এবতেদায়ি, চর যমুনা এ রব এবতেদায়ি, চর নুরুল আমীন মোহাম্মদিয়া এবতেদায়ি, মধ্য চর নুরুল আমীন হোসাইনিয়া এবতেদায়ী, ঘোষেরহাট সুলতানিয়া এবতেদায়ি,পূর্ব চর মাদ্রাজ রাহেলিয়া এবতেদায়ি এবং দক্ষিণ চর মঙ্গল লতিফিয়া এবতেদায়ি মাদরাসার নাম রয়েছে।

বিপুল পরিমাণ উপবৃত্তির টাকা বরাদ্দ এবং আত্মসাত প্রসঙ্গে একাধিক মাদরাসার প্রধানরা জানান, মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে তদবির করে উপবৃত্তি বরাদ্দ করতে কয়েক লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। ওই খরব পষিয়ে নিতে চলতি বছরের (২০১৪) সকল বরাদ্দ সমিতির নেতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। মাদরাসাগুলোতে নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এখন উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য ভূয়া ভুতুড়ে শিক্ষার্থীদের নামে বে-নামে উপবৃত্তির সুবিধা ভোগী দেখিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ব্যাংক থেকেই টাকাগুলো সমিতির নেতাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত এবতেদায়ি মাদরাসা সমিতির সভাপতি রুহুল আমীন কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করে বলেছেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাই সব ভালো বলতে পারবেন।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল আহমেদ বলেন, ‘উপ-মন্ত্রীর ডিও লেটার জালিয়াতি করলে তার দায় দায়িত্ব জড়িতদেরই নিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের পত্রের আলোকে উপজেলা শিক্ষা অফিস সংশি¬ষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে উপবৃত্তির টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ওই টাকা তুলে দেয়ার দায়িত্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে তার দায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের।
অভিযোগ প্রসংঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক চরফ্যাশন শাখার ব্যাস্থাপক গনেশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘ব্যাংক থেকে কেন্দ্রভিত্তিক টাকা বিতরণ করা হয়। মাঠপর্যায় কী হয় তা আমার জানা নেই। প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্র-ছাত্রী আছে কী-নাই তা দেখার দায়িত্ব শিক্ষা অফিসের। তবে খোজ নিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।


(পিকেআর/এসসি/জানুয়ারি ১২ ,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test