E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধামরাইয়ে শিশুর আত্মহত্যার ঘটনায় মাতবরদের ৭০ হাজার টাকা দাবি

২০১৫ জানুয়ারি ১৬ ১২:১৩:৩৬
ধামরাইয়ে শিশুর আত্মহত্যার ঘটনায় মাতবরদের ৭০ হাজার টাকা দাবি

ধামরাই(ঢাকা) প্রতিনিধি:ধামরাইয়ে রাজিয়া আক্তার নামের ১২ বছরের শিশু নানার মোবাইল ফোন পাশের একটি বাড়ীতে চার্জ দিতে গিয়েছিল গত বৃহস্পতিবার সকালে। ওই সময় ওই বাড়ীর ৫শত টাকা চুরি করে সে। পরে টাকাগুলো ফেরতও দেয়। এ ঘটনায় শিশুটির মামা তাকে গালমন্দ করে। এতে অভিমানে গলায় উড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

শিশুটিকে হত্যা করার অভিযোগ এনে স্থানীয় মাতাবরেরা নিহতের পরিবারের কাছে ৭০ হাজার টাকা দাবি করে। নিরুপায় হয়ে ধারদেনা করে কবর দেওয়ার আগে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেয় টাকা দাবিদার স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নুরুমিয়ার কাছে। টাকা নেওয়ার পরও মাতাবরবরা আল্টিমেটাম দেয় কবর দেওয়ার পর ৩০ হাজার ও তিনদিন পর আরো ২০ টাকা দিতে হবে ওই মাতাবরদের। ঘটনাটি ঘটেছে সুয়াপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে।

এলাকাবাসি ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার সূয়াপুর ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের রেজাউল করিম মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী রেনু বেগম মেয়ে রাজিয়া আক্তারকে(১৩) নিয়ে বাবার সংসারে থাকতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজিয়া তার নানা মফিজুল হকের(৭৩) মোবাইলে চার্জ দিতে পাশের আবদুস সাত্তারের বাড়ীতে যায়। এসময় ওই বাড়ীর ৫শত টাকা চুরি করে রাজিয়া বাড়ীতে চলে আসে। পরে সাত্তারের স্ত্রী বিষয়টি রাজিয়ার নানা-মামার কাছে জানিয়ে দেয়। পরে ওই টাকা ফেরত দেয় রাজিয়া। এ ঘটনায় রাজিয়ার নানা-মামা মোহাম্মদ আলী তার ভাগ্নিকে(রাজিয়া) গালমন্দ করে। এ অভিমানে রাজিয়া গত বুহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গলায় উড়না পেঁচিযে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে।
এরপর থেকেই মেয়েটিকে হত্যা করার অভিযোগ এনে পুলিশকে ম্যানেজ করার কথা বলে সাবেক ইউপি সদস্য নুরুমিয়া,চৌকিদার আনোয়ার হোসেন ও আবদুল হালিম পুলিশ না জানিয়েই কবর দিতে বাধা দেয়। পরে এ নিয়ে সারাদিন দেন-দরবার করে ৭০ হাজার টাকায় রফা হয় মাতাব্বরদের সাথে।

রাজিয়ার নানা দরিদ্র মফিজুল হক জানান,স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নুরু মিয়া,চৌকিদার আনোয়ার হোসেন ও মাতাব্বর আবদুল হালিম রাজিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয়দের ম্যানেজ করার কথা বলে ৭০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে পুলিশে খবর দিয়ে বাড়ীর সবাইকে আসামী করে তোমাদেরকে ধরিয়ে দেওয়া হবে বলে তারা হুমকি দেয়। এ নিয়ে তাদের সাথে সারাদিন দেন-দরবার করে বৃদ্ধ মফিজুল। পরে রফা হয় কবর দেওয়ার আগে ২০হাজার,করব দিয়ে বাড়ীতে আসার পর ৩০ হাজার ও করব দেওয়ার তিনদিন পর বাকী ২০ হাজার টাকা তাদের দিতে হবে।
নিহতের মামী রোজিনা জানায়,ধারদেনা করে বৃহস্পতিবার রাতে নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয় সাবেক ইউপি সদস্য নুরু মিয়ার কাছে। পরে গতকাল শুক্রবার নিহতের লাশ দাফন করা হয়।

আত্মহত্যা করেছে বলে স্থানীয় মাতাব্বর হাবিবুর রহমান হবি গতকাল শুক্রবার ওই মৃতদেহ গোসল করাতেও অনেককে বাধা দিয়েছেন বলে জানান তার মামা মোহাম্মদ আলী।
৭০ হাজার টাকার দেন-দরবার ও নগদ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে সাবেক ইউপি সদস্য নুরু মিয়া বলেন,পুলিশকে ম্যানেজ করার হবে বলে টাকাগুলো নেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ তালুকদার জানান,স্থানীয় চেয়ারম্যান মাধ্যমে জানতে পেরেছি রাজিয়া নামের এক শিশু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশের নামে কারা টাকা নিয়েছে তা জানতে পারিনি। জানলে অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ,নিহতের নানা মফিজুল হক তাদের পূর্বে বাড়ী ছিল ভোলা জেলায়। তিনি গোপীনাথপুর এলাকায় নতুন বাড়ীঘর করে বসবাস করে আসছিলেন।

(এএসবি/এসসি/জানুয়ারি১৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test