E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সুন্দরবনের নদী-খাল ইজারা দিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট

২০১৫ জুলাই ২২ ১৮:৪৩:২৬
সুন্দরবনের নদী-খাল ইজারা দিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট

বাগেরহাট প্রতিনিধি : ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশের জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্য সম্পদের মালিক বন বিভাগ। তবে মালিক হলেও বন সন্নিহিত লোকালয়ের শাসক দলের প্রভাবশালী নেতাদের সিন্ডিকেট এখন সুন্দরবনের নদ-নদী ও খাল খন্ড-খন্ড আকারে ভাগ করে ইজারা দিচ্ছে।

এভাবে সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার জলভাগ, ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জেলেদের কাছে ইজারা দিয়ে অবৈধভাবে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি-কোটি টাকা। দু’দিন সুন্দরবন ঘুরে জেলেদের কাছ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের জেলেরা জানায়, জেলেরা আগে বন বিভাগের অফিস থেকে নির্দিষ্ট পরিমান রাজস্ব দিয়ে পাশ-পারমিট নিয়ে ৩টি অভয়ারন্যের জলভাগসহ ১৮টি খাল বাদে অন্যসব নদ-নদী ও খালে বছরে ১০ মাসে ১৬ প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করতো। এখন তারা বন বিভাগ থেকে পাশ-পারমিট নিয়েও সুন্দরবনে আগের মতো স্বাধীনভাবে মাছ শিকার করতে পারছে না।

বন সন্নিহিত লোকালয়ে ক্ষমতাসীন শাসক দলের এক শ্রেণীর প্রভাশালী নেতারা সিন্ডিকেট করে সুন্দরবনের কোন নদী বা খালের কোন অংশে কে জাল ফেলবে তা লাখ-লাখ টাকা নিয়ে নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এভাবে গোটা সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালকে কয়েক হাজার খন্ডে ভাগ করে জেলেদের কাছে অবৈধভাবে ইজারা দেয়া হচ্ছে।

শাসক দলের প্রভাবশালী এসব নেতারা সুন্দরবনের বিভিন্ন অফিস, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পের এক শ্রেণীর বনকর্তাদের মাধ্যমে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের জন্য চালু করেছে এই অবৈধ ইজারা প্রথা।

এক শ্রেণীর মৎস্যজীবী নেতা, অসাধু বনকর্তা ও বনদস্যুদের সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে কথিত ইজারা না নিয়ে সুন্দরবনে এখন আর মাছ শিকার করা যাচ্ছে না। কোন জেলে এটা না মানলে তার জাল তুলে নিয়ে সুন্দরবন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি নেতাদের সিন্ডিকেটের আদেশ অমান্য করলে জেলেদের পড়তে হয় বনদস্যুদের কবলে। পাশাপাশি ফাঁসানো হচ্ছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক মামলায়। সুন্দরবনের নদী ও খালের এক একটি খন্ড-খন্ড এলাকা এই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কথিত ইজারা নিতে জেলেদের দিতে হচ্ছে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা করে। এমনই দাবি করেছে জেলেরা।

অন্যদিকে জেলেরা বৈধভাবে সুন্দরবনে গিয়ে মাছের জন্য বলেশ্বর, যমুনা, কুংগা, পশুর, শিবসা, মালঞ্চ, রায়মঙ্গল, আড়পাঙ্গাশিয়া, শ্যালা, চুনকুড়ি, খোলপেটুয়া, কটকা, আড়য়াশিবসা, শাকবাড়িয়া, ঝাপা, বেতমোর, ভোলা, মরাভোলা, মরাপশুর, বল, হড্ডা, হংসরাজ, কাগা নদী ও খালে গিয়ে জাল ফেলতে পারছেনা। সেখানে নেতাদের এই সিন্ডিকেটকে মোটা অংকের টাকা দিলে ৩টি অভয়ারন্যের জলভাগসহ ১৮টি খালে সুন্দরবনের মাছ শিকারের নিষিদ্ধ এলাকায় বিশেষ-বিশেষ জেলেদের মাছ ধরতে দেয়া হচ্ছে বলে জেলেরা অভিযোগ করেছেন।

সুন্দরবনে মাছ আহরণে নিয়োজিত কোন জেলেই নিজের জীবন রক্ষার্থে এসব প্রভাবশালী নেতাদের নাম-পরিচয় জানাতে রাজি হয়নি। এমনকি পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক চাঁদপাই রেঞ্জের এক ষ্টেশন কর্মকর্তা বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হলে চাঁদপাই রেঞ্জের আওতাধীন নাংলী, ধানসাগর ও কলমতেজী এলাকার তুলাতলা, পোড়ামহল, পচাকোরালীয়া এলাকার বিভিন্ন খালগুলো বন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার জেলেদের মাঝে ইজারা দিয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা।

তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে গেলে সঠিকভাবে সুন্দরবনে চাকুরি করা কঠিন হয়ে পড়ে দাবী করেন তিনি। একইভাবে এই বনকর্তা শাসক দলের প্রভাবশালী নেতাদের নাম ও সিন্ডিকেটের পরিচয় জানাতে চাননি।

সুন্দরবন বিভাগের হিসেব মতে, প্রতি মৎস্য আহরণ মৌসুমে ১৫ হাজার মেট্রিক টন ২১০ প্রজাতির মাছ, প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন ২৬ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, ১ প্রজাতির লবস্টার ও ৭৫০ মেট্রিক টন রূপালী ইলিশ শিকারে জড়িত প্রায় দেড় লাখ জেলে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের ধানসাগর ষ্টেশনের ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সুলতান আহম্মেদ মুঠোফোনে বলেন, তিনি সস্প্রতি ওই ষ্টেশনে যোগদান করেছে। তাই বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা (এসিএফ) মোঃ বেলায়েত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, সুন্দরবন বিভাগের কোন বিষয় স্থানীয়দের দেখার কোন অধিকার নেই। তবে বিষয়টির খোঁজ খবর নিয়ে জেলেদের স্বার্থে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ডিএফও।

(এএসবি/পিএস/জুলাই ২২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test