E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বান্দরবানের ২ পৌর নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থীরা বেকায়দায়

২০১৫ ডিসেম্বর ২২ ১৮:৪১:৩৩
বান্দরবানের ২ পৌর নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থীরা বেকায়দায়

বান্দরবান প্রতিনিধি :দলীয় এবং জাতীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিতব্য পৌর সভা নির্বাচনে জমে উঠেছে পাহাড়ী জনপদ বান্দরবানের ২টি পৌর সভার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। পোষ্টার, মাইকিং, গনসংযোগ এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররা। চলমান প্রচার প্রচারণায় যোগ হয়েছে ভিন্নমাত্রা। প্রচারণায় নেমেছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারাও। বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) রুহুল আলমসহ কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতা।

লামা এবং বান্দরবান এই ২টি পৌরসভার প্রার্থীরা ভোটারদের মন আকৃষ্ট করতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। রাত-দিন এক করে দলীয় নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের সাথে নিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বান্দরবান ও লামা পৌরসভার ভোটার এবং প্রার্থীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠ। তবে সাধারণ ভোটাররা চাইছেন তাদের একজন পছন্দের যোগ্য অভিবাবক। যিনি- সৎ, যোগ্য এবং পর্যটন শহর হিসেবে সুন্দর একটি পৌরসভা গড়ে তুলতে ও উন্নয়নে অবদান রাখতে পরে এমন পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে চায় ভোটারররা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
বান্দরবান পৌরসভা

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য বান্দরবান পৌরসভায় ২৬ হাজার ৬’শত ৪৮ ভোটারের বিপরীতে মেয়র পদে ৩জন, কাউন্সিলর পদে ২৯জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতায় নেমেছেন। এই পৌরসভায় আওয়ামীলীগের মনোনিত নৌকা প্রতীকে মোঃ ইমলাম বেবী, বিএনপি’র মনোনিত ধানের শীষ প্রতীকে বর্তমান মেয়র মোঃ জাবেদ রেজা এবং জাতীয় পার্টি’র লাঙ্গল প্রতীকে সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বিপ্লব মেয়র পদে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন।

১৯৮৪ সালে গঠিত হওয়া বান্দরবান পৌরসভাটি ২০১১ সাল পর্যন্ত আওয়ামীলীগের দখলে ছিল। আওয়ামীলীগের সমর্থন নিয়ে ২০০৪ সালে জেলা আওয়ামীলীগের তৎকালিন আইন বিষয়ক (বর্তমানে বহিস্কৃত) মিজানুর রহমান বিপ্লব বিপুল ভোটে জয়লাভ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৭ বছর পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে ১ম শ্রেনীর পৌরসভাকে নিয়ে আসেন তৃতীয় শ্রেনীতে। উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল এই ৭টি বছর। ফলে ২০১১ সালের পৌর নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে বান্দরবান পৌরসভায় মোঃ জাবেদ রেজা আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে তৃতীয় স্থানে রেখে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। আধুনিক বান্দরবান জেলার উন্নয়নের রূপকার ও সম্প্রীতির পুরোধা জননেতা বীর বাহাদুরের আর্শিবাদপুষ্ঠ হয়ে মেয়র মোঃ জাবেদ রেজা বান্দরবান পৌরসভায় কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন করেন। তবে মেয়র হিসেবে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জেলা বিএনপি ও অংগসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে বৈরিতা চলে বিগত ৫টি বছর। দলে আধিপত্য বিস্তার, ফাটল সৃষ্টি করা, জেলা ছাত্রদলকে বিভক্ত করা, স্বেচ্ছাসেবক দলে নিজেকে আহবায়ক ঘোষনা করাসহ নানা অপকৌশল অবলম্বনের দায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে স্বার্থপর এবং কলুষিত নেতা হিসেবে জাবেদ রেজা সমাদৃত। যার কারণে বিএনপি ও অংগ সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মী নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনা থেকে এখনো অনেক দুরে। অনেকে তার গণসংযোগে সাথে থাকলেও ভিতরে ভিতরে কাজ করছেন অন্য প্রার্থীর পক্ষে। সেই সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগও। মধ্যমপাড়ার এক ব্যক্তি মেয়র জাবেদ রেজার বিরুদ্ধে ১৬ পৃষ্টার দুর্ণীতির একটি স্বেতপত্র প্রচার করেছে। যা আগামী নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও পৌরসভার ৯৫ভাগ কর্মচারী মেয়র জাবেদ রেজার উপর ক্ষুদ্ধ। নিয়মিত পৌরকর আদায় করলেও ১০/১১ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রাখায় এবং কর্মচারীদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও অশালিন আচরণে পুরো পৌর পরিষদের কর্মচারীরা মেয়র বিরোধী অবস্থানে। এ ছাড়াও বেশবিছু গণমাধ্যমে হলফনামায় দেয়া সম্পদের বিবরনী তুলে ধরে ৫ বছরে মেয়র থাকা অবস্থায় ১০ গুণ সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ ভোটারের মুখরোচক সমালোচনায় শিকার হচ্ছেন তিনি। সবকিছু মিলিয়ে নিজ দলের দলীয় নেতাকর্মীদের পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে না পারায় এবং নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ায় বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে বেকায়দায় রয়েছেন জাবেদ রেজা।
অন্যদিকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামীলীগ প্রার্থী মোঃ ইসলাম বেবী। তিনি আওয়ামীলীগের স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন নেতা। পাশাপাশি একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ। বান্দরবান শহরের প্রতিটি মানুষের কাছে সৎ এবং গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিত্ব ইসলাম বেবী। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় তিনি অনেক দুর এগিয়ে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আবারো এই পৌরসভাটি আওয়ামীলীগের দখলে যাবে এমন প্রত্যাশা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের।

অপরদিকে জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত ও সাবেক মেয়র মিজানুল রহমান বিপ্লব। ২০০৪ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ৭ বছর বান্দরবান পৌরসভাকে কালোতালিকা ভুক্ত করেছেন। এই ৭টি বছর পৌরবাসীরা নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসহ সকল ধরনের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই ১ম ও ২য় সারির নাগরিকরা মিজানুর রহমান বিপ্লব ২য় বার মেয়র হিসেবে আসুক সেটা চায় না। তবে সাধারণ শ্রেনীর মানুষের কাছে মিজানুর রহমান বিপ্লব স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত ব্যক্তি। তাই সাধারণ ভোটারের হিসেব নিকেশে তিনিও নির্বাচনে বড় ফেক্টর। অধিকাংশ ভোটারের মতে বান্দরবান পৌরসভায় এবার আওয়ামীলীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি’র মধ্যে ত্রিমুখি লড়াই হবে। শেষ পর্যন্ত বিজয়ের মুকুট কার মাথায় শোভা পায় সেটা এখন দেখার বিষয়।

লামা পৌরসভা

২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া লামা পৌরসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১১ হাজার ৪শত ৪৯ জন। জয়ের নেশায় মাঠে নেমেছেন মেয়র পদে ৩জন, কাউন্সিলর পদে ৩০জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৩জন প্রার্থী।

গত ২০১১ সালের নির্বাচনে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগের এই পৌরসভাটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হওয়ায় আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে জহিরুল ইসলাম ভাল ফর্মে রয়েছে। অপরদিকে বিএনপি’র মনোনিত প্রার্থী আমির হোসেন আমু’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন তিনি। তাই মেয়রের পদ থেকে অব্যহতি নিয়ে তাকে এবারের পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টি (জেপি)’র প্রার্থী হয়ে মাঠে নেমেছেন ফরিদ উদ্দিন। দলীয় প্রতীকে পরিচিত না হওয়ায় প্রচারণায় তিনি রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। লামা পৌরসভায় আসন্ন নির্বাচনে মুলত ভোট যুদ্ধ হবে আওয়ামীলীগের সাথে বিএনপি’র।
রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুত। সার্বক্ষনিক মোবাইল কোর্ট থাকবে এবং নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


(এফবিসি/এস/ডিসেম্বর২২,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test