E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সেলিম ওসমান গোলাম নয়, মালি বললেন নাসরিন ওসমান

২০১৬ জানুয়ারি ৩০ ২১:১০:৩১
সেলিম ওসমান গোলাম নয়, মালি বললেন নাসরিন ওসমান

বিশ্বজিৎ দাস : নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নিজেকে দাবি করেন গোলাম হিসেবে। তবে তাকে গোলাম না বলে ফুলের বাগানের মালি বলে আখ্যায়িত করলেন তার সহধর্মিনী নাসরিন ওসমান।

শনিবার(৩০ জানুয়ারি) বন্দরের কদম রসুল কলেজের ২৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বামী সেলিম ওসমানকে ফুল বাগানের মালি হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

নাসরিন ওসমান বলেন, উনি নিজেকে একজন গোলাম হিসেবে করেন। কিন্তু আমি বলবো উনি গোলাম নন। তোমরা যারা বতর্মান প্রজন্ম বেড়ে উঠছো, উনি তোমাদের জন্য কাজ করছেন। তোমাদের শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তোমরা এক একজন একটা ফুল। আর উনি সকল ফুলগুলোকে একত্রিত করে বাগান বানানোর চেষ্টা করছেন। তোমাদের পরিচর্যা করছেন। আর ফুলের বাগান যিনি সাজানোর কাজ করেন তাকে আমরা মালি বলে থাকি। তাই আমি বলবো তোমাদের প্রিয় সংসদ সদস্য গোলাম নন উনি একজন মালি।

উনি তোমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবে শুধু তোমরাই। তাই তোমরা তোমাদের প্রিয় সংসদ সদস্যের দেখানো পথকে অনুসরণ করবে তোমাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের মধ্যদিয়ে উনার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে তোমাদের কাছে এই প্রত্যাশাই করবো। উনি এখন যেভাবে তোমাদের পাশে আছেন। ভবিষ্যতেও উনি সংসদ সদস্য থাকুক আর না থাকুক সব সময় তোমাদের পাশে থাকবে আমি তোমাদের এই কথা দিচ্ছি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলোয়াত, গীতা পাঠ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংঙ্গীত পরিবেশন, বেলুন ও শান্তির প্রতীক উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধন শেষে আলোচনা সভার শুরুতে কলেজের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হয়ে একত্মা প্রকাশ করে কলেজ সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে শুভেচ্ছা জানান মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) শাহীন আরা বেগম, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ শিক্ষার মানোন্নয়নে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান তার বক্তব্যে বলেন, আমি বিভিন্ন জায়গায় অনুদান দিয়ে থাকি। ওই সকল অনুদানের মধ্যে আমার ব্যবসায়ী সহকর্মীরা আমাকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। কিন্তু তারা সহযোগিতার পাশাপাশি একটি শর্ত জুড়ে দেন। যাতে করে আমি তাদের নাম প্রকাশ না করি। তারা বলেন আমাদের নাম যদি আপনি প্রকাশ করেন তাহলে আরও অনেকে আমাদের কাছে টাকা চাইবে।

সেলিম ওসমান বলেন, প্রকৃত অর্থেই যারা মানুষের জন্য কিছু করতে চায় তারা প্রচণ্ডভাবে এ সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। আমাদেরকে এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নয়ন ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই দেখছি কদম রসুল কলেজের সামনের রাস্তাটির কাজ চলছে। রাস্তাটি খুবই ভাল মানের হচ্ছে। কিন্তু প্রায় দুই বছর হতে চলেছে এখন রাস্তাটির কাজ চলছে। আমি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে অনুরোধ রেখে বলছি দ্রুত রাস্তাটির কাজ শেষ করুন। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আগামী বিজয়ী হওয়ার জন্য তরিগরি কাজ করবেন এটা করবেন না। আপনি উন্নয়নের জন্য সকলের সহযোগীতা চেয়েছেন। পত্রিকায় দেখেছি আপনি কাজ পরিদর্শনে গিয়ে ঠিকাদারের সাথে হাত নেড়ে কথা বলছেন। যদি ঠিকাদার কথা না শুনে প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন আমি ঠিকাদারের পাশে দাড়িয়ে থেকে কাজ করিয়ে নিবো। সকল ধরনের উন্নয়নে আমি আপনার পাশে থাকবো। এলাকার উন্নয়ন করতে হলে রাস্তাঘাট দ্রুত উন্নয়ন করা দরকার। এলাকার উন্নয়ন না হলে কখনই শিক্ষার উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বন্দরে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্দরের উন্নয়নে প্রয়োজনে আমি তাদের কাছে ভিক্ষা চাইবো।

অনুষ্ঠান চলাকালে বন্দরের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা মুক্তা বেগম মঞ্চে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বন্দরের সমরক্ষেত্রে মমতাজ বেগমের গান শুনতে গিয়ে তিনি তার মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়ে ছিলেন। গান শুনার সময় তার নাতির কানে সমস্যা শুরু হলে তিনি সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে যান। প্রচুরদর্শক সমাগমের কারণে তিনি যখন বেরিয়ে আসতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়ে ছিলেন তখন সেলিম ওসমান নিজে সোফা থেকে উঠে গিয়ে তাকে জটলা থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে রিকশায় তুলে দিয়ে ছিলেন।

মুক্তা বেগম আরও বলেন, একজন সংসদ সদস্য এমনভাবে সাধারণ মানুষের উপকারে এগিয়ে আসতে পারে তা আমার কাছে পুরোপুরি অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে। বাসায় ফিরে আমার মেয়ে আমাকে বলে ছিলেন যদি কখনও সুযোগ হয় তাহলে যেন আমি উনার সাথে দেখা করে পরিবারের সবার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই আজ আমি এখানে এসেছি।

মুক্ত বেগমের এমন বক্তব্যে পর সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অনেক সময় অনেক ছোট কাজ করেও মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া যায়। তোমরা যারা নবীন তোমরাও প্রতিদিন চেষ্টা করবে এমন কাজ করার জন্য।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্যের নাতি আদিয়াৎ জ্জোহায়ের, আজমান হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবুল জাহের, বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিনারা নাজমীন, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার, আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজ উদ্দিন, বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক, পরিচালক হুমায়ন কবির খান শিল্পী, শামীম আহম্মেদ, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি মাহমুদ হোসেন, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, আনোয়ার হোসেন, ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, রেজওয়ানা হক সুমি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়াত আলম সানি, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, সহ সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম রিয়াদ, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকুসদ হোসেন, জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা আলেয়া বেগম, পলি বেগম প্রমুখ।

(পি/জানুয়ারি ৩০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test