E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেলিম ওসমানের ক্ষোভ

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০৭ ২১:০৫:০৯
আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সেলিম ওসমানের ক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :বন্দরে যানজটে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কারণে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি বলেছেন, বন্দরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে, পাশেই একটি বাজার রয়েছে যেটি রাস্তায় বসে গেছে। সেখানে বাজার বসানোর অনুমতিটা দিলো কে? এসএসসি পরীক্ষা চলছে সেখানে যানজট যেন না থাকে তার জন্য পরীক্ষা চলাকালীন সময় সেখানে পুলিশের ডিউটি দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা ঠিক মত দায়িত্ব পালন করছে না।

পুলিশ সেখানে যাবেন প্রয়োজন বাজার কমিটির সাথে কথা বলবেন, সেখানে একটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও একটি প্রেসক্লাব রয়েছে সবার সহযোগীতা নিয়ে সেখানে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। পুলিশ ব্যস্ত থাকলে প্রয়োজন আনসার দিতে হবে, সেচ্ছাসেবী কর্মী দিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। অত্যন্ত পরীক্ষা চলাকালীন সময় কোন অবস্থাতেই সেখানে কোন ধরনের যানজট থাকতে পারবেনা।

রবিবার(৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০টায় বন্দর উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় ব্যাপী বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিনি বক্তব্য রাখেন।

তিনি আরও বলেন, শুধু পুলিশের একার পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব নয়। যে কোন ধরনের সমস্যা সমাধানে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশকে সহযোগীতা করতে হবে। সব কিছু আইন করে বন্ধ করা যায় না। সে জন্য আমাদের মাঝে গণসচেতনতা আনতে হবে।

ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক সম্পর্কে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে দুটি সমস্যার কারণে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যার একটি হচ্ছে যানজট। ইজি বাইকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইজি বাইক বন্ধ করে দিলে অনেকে বেকার হয়ে যাবে। তাই মানবতার দিক বিবেচনা করে কোন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু এগুলো একটি লিমিটেশনের মধ্যে আনতে হবে।

মদনগঞ্জ দিয়ে দুই মাস আগে আর পরে শীতলক্ষ্যা সেতু হবে। তখন মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ এক থেকে দেড় হাত করে রাস্তার উপর উঠে জায়গা দখল করে স্থাপনা বানাচ্ছে। এই বিষয় গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে এই রাস্তা নিয়ে উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। মদনপুর রাস্তা দিয়ে একটি গাড়ি পাড় হতে ২০ মিনিট সময় লেগে যায়। দেখা যায় রাস্তার উপর বাসস্ট্যান্ড টেম্পু স্ট্যান্ড বানিয়ে রাখা হয়েছে। আবার রাস্তার উপর দোকান উঠে এসেছে। এগুলো কারা করছে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে পাশাপাশি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটু আগালেই দেখা যাবে তুলা কারখানার মালিক, সু’মিলের মালিকেরা রাস্তাকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করছে এই জিনিস গুলো বন্ধ করতে হবে।

মহান আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে তিনি বলেন, কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য আমাদের বর্তমান প্রজন্মের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারী ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানে না। ওরা এ বিষয়ে সুনিদিষ্ট করে কিছুই বলতে পারে না। তাদেরকে ২১ ফেব্রুয়ারী ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে। রচনা ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগীতার। সেখানে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। বন্দর, নারায়নগঞ্জ, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এই ৪টি থানা এলাকা নিয়ে প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হবে। সমরক্ষেত্রে ড্যামি বিজয়স্তম্ভ দিয়ে বিজয় উৎসব পালন করা হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারীতে ড্যামি শহীদ মিনার স্থাপন করে সেখানে মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হবে। শিক্ষার্থীদের লেখা রচনা সাথে দেশের খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা লেখকদের লেখা নিয়ে বিকেএমইএ ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার এর সহযোগীতায় বই ছাপানোর ব্যবস্থা করা হবে।

আমি বন্দরের প্রতিটি স্কুলকে মাল্টিমিডিয়া স্কুল বানাতে চাই। প্রতি স্কুলে যদি অত্যাধুনিক সাইন্সল্যাব ও কম্পিউটার স্থাপন করা হয় এবং সমরক্ষেত্রের মাঠে যদি বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা তাহলে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের প্রতি মনোযোগী হবে। বর্তমান প্রজন্ম হাডুডু, কাবাডি, ঢ্যাংগুলি, দাড়িয়াবান্দা খেলা কি তা জানেই না। প্রতি সপ্তাহে কোন না কোন ইউনিয়ন এলাকায় এসব খেলাধূলার আয়োজন করা যেতে পারে। ছেলে মেয়ে শিক্ষা, সাহিত্য, সাংস্কৃতি, খেলাধূলার মধ্যে ব্যস্ত রাখলে তারা আর মাদকে আকৃষ্ট হবে না। ধমক দিয়ে মাদক সেবন বন্ধ করা যায় না।

স্কুল শিক্ষার্থীদের ১ লাখ গাছ রোপনের আহবান রেখে তিনি বলেন, সামনেই বৃক্ষ মেলা আসছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সহ প্রতি বাচ্চা যদি একটি করে গাছ লাগায় আর বন্দরে যদি প্রতি বছর ১ লাখ করে গাছ লাগানো যায় আর এটা যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে তাহলে দেখা যাবে আগামী ২০ থেকে ২৫ বছর পর যদি সেই গাছ গুলোর দাম ৩’শ টাকা করেও হয় তাহলে বছরে ৩০০ কোটি টাকা আসবে। আর প্রথম বছরের ৩০০ কোটি টাকার পর থেকে সেটা প্রতি বছর আসতে থাকবে। ওই টাকা দিয়ে সরকারী বা বেসরকারীভাবে বন্দরের উন্নয়নের জন্য ৩০০ কোটি টাকা করে পাওয়া যাবে। তখন হয়তো আমরা থাকবো না কিন্তু আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, আমাকেই সব করতে হবে এ মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাদের আপনার ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে কাজ করতে হবে। দল বা আপনি ক্ষমতায় থাকেন বা না থাকেন আপনার মৃত্যু হতে পারে। আপনার মৃত্যুর পর যেন আপনার শুরু করা কাজটি বন্ধ না হয়ে যায়। সেজন্য আপনার পরবর্তীতে যে আসবে তাকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।

রাজনীতি আমার পেশা না রাজনীতি আমার নেশাও না। আমি সবাইকে সাথে নিয়ে উন্নয়ন করতে চাই ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে চাই। তাই আমি সকলের সম্মিলিত সহযোগীতা চাই। আর এ সহযোগীতা করতে গিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। যে কেউ যে কোন দল করতে পারেন। এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু উন্নয়ন নিয়ে কোন রাজনীতি করবেন। অন্ত্যত যত দিন না বন্দরের মেরুদন্ড শক্ত না হয় ততদিন পর্যন্ত রাজনীতিকে এলাকার বাইরে রাখবেন। রাজনীতি করতে হলে শহরে গিয়ে করবেন কিন্তু এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কোন ধরনের রাজনীতি নয়।

বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিনারা নাজমীন এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, উপজেলা শিক্ষা অফিসার আ ক ম নুরুল আমিন, বন্দর প্রেসক্লাবের সভাপতি কমল খান, সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়নাল হক, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম প্রমুখ।

(বিডি/এস/ফেব্রুয়ারি০৭,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test