E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মংলায় আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

২০১৬ জুন ০৩ ১৭:৩৫:৫১
মংলায় আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি : মংলায় উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগমসহ ৬ ইউনিয়নের দলপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের ডিউটি পালনের সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয় আনসার ভিডিপির এই কর্মকর্তা। ঘুষ দিয়েও অনেককে নির্বাচনী ডিউটিতে দায়িত্ব পালতে না দিতে পেরে একজনের ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

ঘুষের বিনিময়ে যারা ডিউটি করতে পেরেছেন তারাও তাদের ঘুষের টাকা ফেরৎ পেতে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। কর্মকর্তা আরিফা বেগম আনসার ভিডিপি সদস্যদের বলছেন, সেই টাকা পদ্মা সেতু বাবদ কেটে রাখা হয়েছে। ঘুষের টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন।

মংলা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা জানান, গত ২২ মার্চ ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৮শ ৬৪ জন আনসার ভিডিপি সদস্যকে নিয়োগ দেন উপজেলা আনসার ভিডিপি’র কর্মকর্তা আরিফা বেগম। নিয়োগকৃত প্রতি সদস্যের কাছ থেকে এই কর্মকর্তা ও তার ৬ দলপতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ১৫ দিন আগে থেকে ৪শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম ঘুষ নিয়ে নেন। অগ্রিম টাকা দিয়ে ডিউটির তালিকা খাতায় নাম না লেখালে তাদেরকে নেয়া হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয় আনসার ভিডিপি সদস্যদের। তাই টাকার জন্য ডিউটি করার লোভে বাধ্য হয়েই এ সব সদস্যরা ওই কর্মকর্তার নির্দেশে তার অধিনস্থ ৬ ইউনিয়নের দলপতির কাছে তারা ঘুষের টাকা জমা দেন। ঘুষে জমাকৃত এ টাকার অর্ধেক নেন উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম আর বাকী টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন ৬ দলপতি। এ

মন অভিযোগ করেছেন আনসার ভিপিপির নারী-পুরুষ সদস্যরা। এদিকে যাদের কাছ থেকে অগ্রিম ঘুষ নিয়েও সময় মত নির্বাচনী ডিউটিতে যেতে সুযোগ করে দিতে পারেননি এমন একজনের ঘুষের টাকা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদারের মধ্যস্থতায় ফেরত দেন উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম। এছাড়া যাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ডিউটি করিয়েছেন তারা সেই ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য উপজেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ে বার বার গেলেও তাদেরকে নানা ধরণের কথা বার্তা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ফিরে দিচ্ছেন কার্যালয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

তাই তারা ঘুষের টাকা ফেরত পেতে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দারস্থ হলে উপজেলা চেয়ারম্যান আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে টাকা ফেরত দিতে বলেছন। কিন্তু তারপরও কেউকে তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছে না।

এ নিয়ে আনসার ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্ধ এ সকল সদস্যরা গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় আনসার ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত চাইলেও তাতে কর্নপাত করছেন না ওই কর্মকর্তা ও তার দলপতিরা। যারা টাকা ফেরত চাইছেন তাদেরকে আর আগামীতে নির্বাচনী ডিউটি করতে দেয়া হবে না বলেও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আনসার সদস্যরা। আনসার ভিডিপির সদস্যরা বলেন, প্রত্যেক বার নির্বাচনী ডিউটিতে নিয়োগের সময় এভাবে ঘুষ বাবদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকেন দলপতিরা। আবার অনেক সদস্যরা আগামীতে ডিউটি পাওয়ার আশায় ঘুষের টাকা দিয়েও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে গত ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ডিউটিতে থাকা আনসার ভিডিপি সদস্যদের সোমবার ভাতার টাকা ১৬শ ২০ ও ১৭শ ৫০ (টাকা শ্রেণী ভেদে) দেয়ার সময় মুলত ঘুষের টাকার গোমরের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। সরকার প্রদত্ত এ ডিউটির ভাতা নেয়ার সময় সদস্যরা তাদের অগ্রিম দেয়া ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম বলছেন, সেই টাকা পদ্মা সেতু বাবদ কেটে রাখা হয়েছে।

ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম আরো বলেন, আমি কোন টাকা নেই নাই। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। টাকা নিলেও তা ৬ ইউনিয়ন দলপতিরা নিয়ে থাকতে পারে। টাকা পয়সা নেয়ার বিষয়টি আমিও বিভিন্নভাবে শুনেছি এবং জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আনসার-ভিডিপির চিলা ইউনিয়ন দলপতি/কমান্ডার ইউনুস শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দলপতিরা কোন টাকা পয়সা নেই নাই।

ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আনসার সদস্য আফসার শেখ, মো: শহীদ, আবুল বাসার হাওলাদার, দীপংকর মন্ডল, ফিরোজা বেগম, পারভীন বেগম, তহমিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কাছ থেকে মংলায় উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগমসহ ৬ ইউনিয়ন দলপতি/কমান্ডাররা নির্বাচনের আগে ৪শ থেকে ৭শ টাকা করে নিয়েছে। টাকা দিতে না চাইলে বলে আগামীতে তোমরা আর কোন ডিউটি করতে পারবা না। এভাবে প্রতি বছরই আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়, টাকা না দিলে আমাদের ডিউটিতে করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়।

মংলা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার বলেন, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আরিফা বেগম সকল আনসার ভিডিপি সদস্যদের কাছ থেকে ৪শ থেকে ৭শ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন বলে সদস্যরা আমাকে জানিয়েছেন। আমি জানামাত্র আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে ডেকে শোনার পর তিনি একজনের টাকা ফেরত দিয়েছেন।

(একে/এএস/জুন ০৩, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test