E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে দুই মাসে একডজন নৌ-দুর্ঘটনা

২০১৬ সেপ্টেম্বর ০১ ১৪:০৪:২৩
বরিশালে দুই মাসে একডজন নৌ-দুর্ঘটনা

আঞ্চলিক প্রতিনিধি(বরিশাল):ঢাকা-বরিশাল নৌপথে দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত দুই মাসে যাত্রীবাহি লঞ্চে ছোট বড় একডজন নৌ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি এক নৌযানের সাথে অন্য নৌযানের সংর্ঘষে প্রাণহানীর মতো ঘটনাও ঘটেছে।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নৌ-যানের প্রতিযোগিতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। এজন্য কোন ভাবেই প্রতিযোগিতা না করার জন্য লঞ্চের মাস্টারদের নিয়ে সভা করে সর্তকতার পাশাপাশি কঠোর হুঁশিয়ারী দেয়া হয়েছে। সূত্রমতে, ঈদ-উল ফিতরের পূর্বে (গত ৪ জুলাই) ঢাকা থেকে ঘরমুখী মানুষ সরকারি জাহাজ পিএস মাসউদে বরিশালে আসছিলেন। পথিমধ্যে সুরভী-৭ লঞ্চের ধাক্কায় জাহাজের ৫ যাত্রী প্রাণ হারায়। আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রী। এ ঘটনায় সুরভী লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হলেও রহস্যজনক ভাবে কয়েকদিন যেতে না যেতেই সুরভী পুনরায় যাত্রী পরিবহন করছে। এ ঘটনায় নৌ-মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি নিরব ভূমিকায় রয়েছেন।

প্রতিযোগিতা ও নৌ পথের সাইড দেয়া না দেয়াকে কেন্দ্র করে এ সংর্ঘষ ঘটেছিলো। ২৯ জুলাই প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহি লঞ্চ সুন্দরবন-৭ ও ফারহান-৬। পরে ফারহান-৬ এর ধাক্কায় একটি মেশিন নষ্ট হয়ে যায় যাত্রীবাহি সুন্দরবন-৭ লঞ্চের। এসময় আতংকগ্রস্থ হয়ে পরে দুই লঞ্চের প্রায় দুই সহস্রাধিক যাত্রী। পরে খুরিয়ে খুরিয়ে সকাল ১০ টায় গন্তব্যে পৌছায় সুন্দরবন-৭। গত ১ আগস্ট বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে মধ্যরাতে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর এলাকার চরে আটকা পরে যাত্রীবাহি লঞ্চ পারাবত-১১। পরে পারাবত-৯ যাত্রীদের উদ্ধার করে বরিশাল লঞ্চ ঘাটে নিয়ে আসে। গত ৬ আগস্ট কীর্তনখোলা নদীতে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী বিলাসবহুল দু’টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সুরভী-৭ ও পারাবাত-৯ এর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী এলাকায় কীর্তনখোলা নদীতে এ ঘটনা ঘটেছিলো। এতে যাত্রীরা আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ১১ আগস্ট রাত ১০টার দিকে হিজলা-মুলাদী এলাকা অতিক্রমকালে দুই লঞ্চের প্রতিযোগীতার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় সুন্দরবন-১০ ও কীর্তনখোলা-২ লঞ্চের ২ সহস্রাধিক যাত্রী। ১৯ আগস্ট সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে বরিশালের আসার পথে বুড়িগঙ্গার পোস্তখোলা ব্রীজের সাথে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায় সুন্দরবন-১০ লঞ্চে। এসময় চরম আতংকগ্রস্থ হয়ে পরে ওই লঞ্চের যাত্রীরা। গত সপ্তাহে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের গ্রীন লাইন ওয়াটার ওয়েজ পথ হারিয়ে হিজলা উপজেলার মিয়ারচরে আটকে পরে। প্রায় ৪ ঘন্টা চেস্টার পর ওই নৌযানটি ছুটে ঢাকায় চলে যায়। গত ২৩ আগস্ট বরিশালে লঞ্চের রশির (কাঁচি) আঘাতে দুই যাত্রী গুরুত্বর আহত হয়। বরিশাল নদী বন্দরে এ ঘটনায় আহত কলেজ ছাত্র সহ দু’জনকে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম শ্রেণির এক মাস্টার জানান, সব সময় প্রতিযোগিতা হয় সেটা নয়। মাঝে মাঝে সাইড দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। কোন কোন লঞ্চের গতিবেশী আবার কোন কোন নৌযানের গতি কম। কোন লঞ্চ রাত আটটায় ছেড়ে যায়। আবার কোন লঞ্চ রাত পৌনে নয়টায় ছেড়ে যায়। কিন্তু পথিমধ্যে দেখা যায় আটটায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ আস্তে আস্তে চলছে। আবার পৌনে নয়টায় ছেড়ে আসা লঞ্চের গতি বেশী বিধায় সাইড চাচ্ছে। কিন্তু সামনের নৌযানটি সাইড দিচ্ছে না। তখন শুরু হয় প্রতিযোগিতা। সে সময় এক নৌযানকে টপকে অন্য নৌযান ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, মাস্টারদের প্রতিযোগিতা না করার জন্য সর্তক করা হয়েছে। তারপরেও তারা প্রতিযোগিতা করে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এতে নৌযানের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি যাত্রীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২৩ আগস্ট বিভিন্ন লঞ্চের মাস্টার ড্রাইভার ও লঞ্চ মালিকদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। ওই সভায় কোনভাবেই অন্য নৌযানের সাথে প্রতিযোগিতা করে নৌ-দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ঘটানো যাবেনা বলে তাদের সর্তকতার পাশাপাশি কঠোর হুশিয়ারী করে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি মাস্টার ড্রাইভারই প্রশিক্ষিত। তার পরেও শুধুমাত্র প্রতিযোগিতার কারণে এ দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতার জন্য দূর্ঘটনা ঘটবেনা বলে সংশ্লিষ্টরা তাকে আশ্বস্ত করেছেন ।






(টিবি/এস/সেপ্টেম্বর০১,২০১৬)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test