E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় কুমড়োর বড়ি তৈরির ধুম

২০১৬ ডিসেম্বর ১৭ ১৫:৪৪:৪৭
সাতক্ষীরায় কুমড়োর বড়ি তৈরির ধুম

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ভোজন পিপাসু বাঙালী। তাই ভোজনে রসনার তৃপ্তি আনতে শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে সাতক্ষীরা জেলার গ্রামে গ্রামে বেড়েছে কুমড়ার তৈরি বড়ি তৈরি করার ধুম।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা গ্রামের লক্ষী রানী দান, তমা দাস, গোবিন্দকাটি গ্রামের সুমিতা ঘোষ জানান, নতুন সবজি বা টাটকা মাছের ঝোলে কুমড়ার বড়ির কোন বিকল্প নেই। এই বড়ি রসনাকে নতুনভাবে তৃপ্তি দেয়। তাই ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরুর পর থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে শীত বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয়েছে কুমড়ার বড়ি তৈরির ধুম।

তারা আরো জানান, বড়ি তৈরির জন্য এক কেজি কলাইয়ের ডাল কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। দু’ কেজি ডালের জন্য যে চালকুমড়া দরকার হয় তার বাজার দাম কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ডাল ও কুমড়া হলে থরচ পড়বে অনেকটাই কম। ঢেকিতে বা মেশিনে ডাল কোটার পর কুমগার সঙ্গে মিশিয়ে বড়ি তৈরি করতে হয়। এ সময় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রৌদ্র না থাকলে বা কুয়াশা হলে বড়ির রঙের পরিবর্তণ হয়ে যায়। রঙের সাথে সাথে বড়ির স্বাদও কমে যায়। তবে অনেকে কুমড়ার পরিবর্তে ওলকপি বা কচু দিয়ে বড়ি তৈরি করে থাকেন।

দেবনগরের ইন্দুমতি বালা সরকার জানালেন , এবার তিনি পাঁচ কেজি ডালের বড়ি দিয়েছেন। চার জনের সংসার। সারা বছর এ বড়ি খেতে পারবেন। ফুলকপির সঙ্গে দেশি কৈমাছ দিয়ে বড়ি দিয়ে রান্না করলে যা ভাল লাগে তা না পরখ করলেই বোঝা যায় না। তবে সব ধরণের মাছের ঝোল বা সবজির জন্য বড়ি একটি আলাদা মাত্রা নিয়ে আসে।

ছাতিয়ানতলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সামছুদ্দিন জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তার বাড়িতে ঢেকি রয়েছে। শুধু কলাইয়ের ডাল ভাঙা নয়। পিঠা তৈরির জন্য চাল গুড়া করার কাজেও নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে স্থানীয়রাও তাদের ঢেুক ব্যবহার করে থাকেন। তবে যারা তার ঢেকি বিনা পয়সায় ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে তারা বিগত ইউনিয়ন পরিষদে সদস্য পদে নির্বাচন করলেও একটি প্রাণীও তার ভ্যান প্রতীকে ভোট দেয়নি। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ঢেঁকি বাইরের কাউকে ব্যবহার করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সাতক্ষীরা শহরের মিলবাজারের আইয়ুব আলী জানালেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে বড়ি ও চাল কোটার মৌসুম শুরু হয়। এক কেজি ডাল বা এক কেজি চাল গুড়া করতে তিনি সাত থেকে আট টাকা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন তিনি কলাইয়ের ডাল ও চাল ভাঙিয়ে এক হাজারেরও বেশি টাকা উপার্জন করছেন।

তালা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মনোররঞ্জন রায় ও শ্যামল মণ্ডল জানান, জলাবদ্ধ এলাকা হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে কলাইয়ের ডাল কম লাগানো হয়। তবে ধানদিয়া, পারকুমিরা, বারুইহাটি এলাকায় কলাইয়ের ডালের ভাল উৎডতির হয়েছে। একইভাবে কালীগঞ্জের বিষ্ণুপুরের সুর্যপদ স্ধাুখাঁ, বিজয় কুমার মণ্ডল, ফতেপুরের রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, তারালির সোনা মিঞা, দেবহাটার কুলিয়ার শরকত আলীসহ কয়েকজন জানান, এবার তাদের ভাল কলাইয়ের উৎপাদন হওয়ায় কেজি প্রতি পাইকারি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। তবে বিক্রির পাশাপাশি নিজেদের মাচানে উৎপাদিত চাল কুমড়া, জমিতে উৎপাদিত ওলকপি ও মানকচু দিয়ে বড়ি বানিয়েছেন। ডাল তুলেই বোরো চাষ শুরু করতে পেরে তারা যার পর নেই খুশি।

সাতক্ষীরা খামারবাড়ির উপপরিচালক কাজী আব্দুল হান্নান জানান, কলাই বা মাস কলাইয়ের ডাল উৎপাদনে কম সময় লাগে। এ ছাড়া যারা জমিতে তিন ফসল লাগান তাদের জন্য স্বল্প সময়ে কলাই চাষ উপযোগী। এবার জেলায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে কলাইয়ের চাষ হয়েছে।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test