E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অফিস থেকে বের করে দিলেন ক্ষুব্ধ জনতা

২০১৬ ডিসেম্বর ২৯ ১৭:৫৩:৪৯
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অফিস থেকে বের করে দিলেন ক্ষুব্ধ জনতা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের ২০ ঘণ্টা পার না হতেই ক্ষুব্ধ জনতা জেলা পরিষদের দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবুর  রহমানকে পিটিয়ে ও গলা ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে । এ সময় তারা তাকে দিয়ে জেলা পরিষদের পুকুর ঘাট ও একাধিক কক্ষ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করতে বাধ্য করানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে জেলা পরিষদ ঘিরে ফেলে মাহবুবর রহমানকে কক্ষ থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনেন। এ সময় তারা তাকে দিয়ে গেট খুলিয়ে কক্ষ ঝাড়ু দিয়ে নেন। ঘটনার সময় মাহবুবর রহমানের সহকর্মী জামায়ত কর্মী টুটুলসহ কয়েকজনও লাঞ্ছিত হন।

মাহবুবর রহমানের উপর হামলার কারণ হিসাবে রসুলপুর গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন তিনি বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জেলা পরিষদের পুকুর বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে তিনি চরম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি জেলা পরিষদের একটি পুকুরের ঘাট ভেঙ্গে দিয়ে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করেছেন। এসব কারণে তারা তার ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা যুবলীগের আহবায়ক আবদুল মান্নান বলেন বিক্ষুব্ধ জনতা মাহবুবুর রহমানের কাছে প্রাপ্য টাকা দাবি করেন। তারা তাকে ঘর থেকে বের করে আনেন। কিল চড় ঘুষি মেরে তারা তাকে জেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের করে দেন।

আব্দুল মান্নানসহ এলাকাবাসী জানান সাতক্ষীরা জেলা পরিষদকে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার একক কর্তৃত্বের আওতায় নিয়ে ব্যবহার করেন। ১৯৯০ সালে ২৯ এপ্রিল চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি হিসাবে জেলা পরিষদে যোগদানকারী মাহবুবুর রহমান ২৬ বছর পর এখন প্রশাসনিক অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ তাকে বদলি করার ক্ষমতা রাখেন না বলে আস্ফালন করেন তিনি। এর মধ্যে তিনি ২০০১ সালে পঞ্চগড় বদলীর আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করিয়ে স্থগিত করালেও ২০০৫ সালে নিজেই তা প্রত্যাহার করে নেন।

২০০৫ সালের ১৪ জুন জামালপুরে বদলির আদেশের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন করিয়ে স্থগিত করিয়ে বেতনভাতা সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ থেকে পাওয়ার আদেশ করান। জামালপুরে বদলীর আদেশ সম্পর্কিত রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তির আগেই চলতি বছরের ৮ মে বগুড়াতে বদলী করা হলে তিনি পূর্বের বিচারাধীন রিট পিটিশনের বিষয়টি গোপন রেখে আরো একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। তাকে বদলী রোধে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুপারিশের জন্য নারী ও টাকা দিয়ে তাদেরকে ম্যানেজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি তার সময়কার প্রশাসক এবং প্রধান নির্বাহীদের দুর্নীতির মুখে ঠেলে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ম্যানেজ করতে না পেরে প্রধান নির্বাহী গোকুল কৃষ্ণ ঘোষকে খুলনায় বদলী হতে বাধ্য করেন মাহাবুবর রহমান। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ উন্নয়নের নাম করে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করেন। নদীর ঘাট উন্নয়ন ও ইজারার নামে একইভাবে টাকা আদায় করে থাকেন।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সন্ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে তার নিজ গ্রাম
মাটিয়াডাঙ্গায় বোমা টিম গঠন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালে জলবায়ু ট্রাষ্টের গৃহনিমার্ণ বাবদ বরাদ্দকৃত ২৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মোটা অংশ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে মাহাবুবের বিরুদ্ধে। তার তৈরি তালিকায় ৪৫টি ঘরে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক ও সাংসদদের যৌথ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এ নিয়ে হাইকোর্টে তিনটি রিট পিটিশন বিচারাধীন রয়েছে। রিটকারিদের পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন মণ্ডলের কুমারখালি গ্রামের বাড়িতে ৪০/৪৫ টি মোটর সাইকেলযোগে শতাধিক সন্ত্রাসীর হামলা চালানোর ঘটনায় তিনি হুকুমদাতা হিসেবে এলাকায় প্রচার রয়েছে।

কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন প্রতিটি টেন্ডারের সময় মাহবুবুর রহমানকে নগদ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এ কারণে তিনি মি. টুয়েন্টি পার্সেন্ট হিসাবে পরিচিত হয়েছেন। তিনি তার প্রয়াত বাবা আবদুর রউফের নামে একটি ট্রাষ্টসহ বেনামে প্রায় এক ডজন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সেসব প্রতিষ্ঠানে জেলা পরিষদের টাকা বেআইনিভাবে ব্যবহার করেছেন। মাহাবুব এখন বিলাসবহুল বাড়ি তৈরির পাশপাশি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার ও তার পরিবারের সদস্যের নামে ব্যাংকে মোটা অংকের টাকা রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক হওয়ার ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক তদন্ত শুরু করেছে। জেলা পরিষদকে নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে চাকুরিকালে তিনি তার কয়েক স্বজনকে জেলা পরিষদে চাকুরি দিয়েছেন।

গ্রামবাসী বলেন তিনি ব্যাপক দুর্নীতি শেষে তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন। এজন্য গ্রামবাসী এই হামলা চালান।

এদিকে এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান নিজেকে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি একটি পক্ষ নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা তার উপর হামলা করেছে। তারা তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছেন। বিষয়টি তিনি সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন বলে জানান।

হামলার খবর পেয়ে বৃহষ্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম অফিস পরিদর্শনে যান। তিনি মাহবুবকে দুর্নীতিমুক্ত হবার আহবান জানান।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান, এ নিয়ে বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

(আরকে/এএস/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test