E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আফ্রিকায় নিহত সেনা সদস্য রহিমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

২০১৭ জানুয়ারি ০৭ ১৮:৪৫:৫৫
আফ্রিকায় নিহত সেনা সদস্য রহিমের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিকে কর্তব্যরত সেনা সদস্য আব্দুর রহিম কর্তব্যরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা গেছেন। এ খবর শোনার পর থেকে নিভে গেছে তার পরিবারের স্বপ্ন। একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যকে হারিয়ে পুরো পরিবারটি এখন দিশেহারা। পুত্রশোকে কাতর মা-বাবার আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। স্বামীকে হারানোর শোকে ছয়মাসের শিশুপুত্রকে নিয়ে স্ত্রী রুবাইয়া বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। রহিমের মৃত্যুতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে চলছে শোকের মাতম।

হাজীপুর ইউপি সদস্য বিমল কুমার ঘোষ জানান,১৯৮৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর হাজিপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন আব্দুর রহিম। পিতা আব্দুল মাজেদ পেশায় দিনমজুর ও মা রওশনআরা গৃহিনী। তিন ভাই-বোনের বড় আব্দুর রহিম ঝাউডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করার পর কলারোয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হন। দারিদ্রতার কষাঘাতে লেখাপড়ায় বেশীদূর এগোতে পারেনি। এইসএসসিতে অধ্যয়নকালে ২০০৫ সালে চাকরী হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। সবশেষ যশোর সেনানিবাস থেকে গত ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ শান্তি বাহিনীর ১২০ জনের একজন সদস্য হিসেবে সরকারি নির্দেশে মধ্য আফ্রিকায় পাড়ি দেন আব্দুর রহিম।

তিনি আরো জানান, ২০১২ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার রাজবাড়ী গ্রামের মেয়ে রুবাইয়া সুলতানাকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের ৬মাসের ফারাবী নামের শিশু পুত্র সন্তান রয়েছে। সবশেষ গত ৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে স্বামীর সাথে ফোনে কথা হয় রুবাইয়ার। রাতে পুনরায় কথা হওয়ার কথা থাকলেও আর হয়নি। সন্ধ্যায় তার মৃত্যুর খবর দেওয়া হয় মোবাইল ফোনের মধ্যেমে। এখন স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী রুবাইয়া সুলতানা দিশেহারা।

অতীতে হাজিপুর গ্রামের এই বাড়িতে আব্দুর রহিমের আগমনে রীতিমতো উৎসব চলত। তবে এখন পরিবেশ অন্যরকম। তার মরদেহ গ্রহণের অপেক্ষায় পরিবারের সদস্যসহ শোকাতুর এলাকাবাসী।

আব্দুল মাজেদ জানান, ছেলে চাকরী করলেও সংসারে এখনো তেমন স্বচ্ছলতা আনতে পারেননি তিনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে কিছুদূর লেখাপড়া শিখিয়েছিলেন তিনি। আশা ছিল, ছেলে চাকরী করলে তাদের দুর্দশা ঘুচবে। পরিবারের সবার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে রহিমের মৃত্যুতে। তাই শনিবার সকালেও তাকে দিন মজুর খাটতে অন্যের জমিতে যেতে হয়েছে।।

রওশানারা জানান, বৃহস্পতিবার সেন্ট্রাল আফিকায় শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে তার ছেলে। রহিম আর কখনো তাকে মা বলে ডাকবে না। এখন লাশের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

রুবাইয়া জানান, স্বামী মারা গেছে। একমাত্র শিশু সন্তানটি এখনো বাবাকে চিনতেই শেখেনি। তাকে শেখাবে পড়াশুনা। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত তিনি। স্বামীর লাশ লাশ দ্রুত ফিরে পাওয়াসহ পরিবারটিকে বাঁচানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।

(আরকে/এএস/জানুয়ারি ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test