E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কাজিপুরে প্রতিবন্ধীদের পরম বন্ধু স্বপনের স্বপ্ন পূরনে পথচলা

২০১৭ এপ্রিল ২৫ ১৪:৫২:৪৯
কাজিপুরে প্রতিবন্ধীদের পরম বন্ধু স্বপনের স্বপ্ন পূরনে পথচলা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সবার সবরকম শখ থাকে। জীবনে প্রতিষ্ঠালাভের প্রয়োজনে সবাই লাভজনক কোন না কোন কাজের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রাণান্ত চেষ্টায় ব্যস্ত। কিন্তু এখনো সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের জন্য নয় সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টায় নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত রাখে।

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ানো এমন একজন মানুষের নাম জাহিদুল হাসান স্বপন। স্বপন কাজিপুরের দূর্গম চরাঞ্চলের মানুষ। ছোটবেলা থেকেই যমুনার উত্তাল তরঙ্গরাশির আঘাতে মানুষের সর্বস্ব হারানোর দৃশ্য দেখে তার মন কেঁদে ওঠে। বিশেষ করে বন্যা-বর্ষাসহ যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রতিবন্ধীদের চরম অসহায়ত্ব দেখে তার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বপনের স্বপ্নে স্থান পায় প্রতিবন্ধীরা। অসহায় এসব প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর জন্যে তেমন কিছু করার মানুষের সংখ্যা সমাজে যে খুব বেশি নেই।বছর চারেক আগে একদিন স্বপনের বন্ধুসম বড়ভাই আমিনুল ইসলামের উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। চরাঞ্চলের সকল প্রতিবন্দীর একটা তালিকা তৈরি করেন। এ তালিকায় মোট এক হাজার আটশ প্রতিবন্ধীর মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি অসহায় তিনশ কুড়িজন প্রতিবন্ধীকে নিয়ে স্বপনের স্বপ্নবুণন শুরু হয়। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহযোগিতা নিয়ে তিনি একের পর এক ছক আঁকতে থাকেন। নিজের সামর্থ্যরে সাথে বিত্তবানদের কাছ থেকে নেয়া সাহায্যে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করতে থাকেন।

তার ডাকে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের মাঝে উপস্থিত হয়েছিলেন কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বকুল সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম, নাটুয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক সরকার। স্বপন জানান, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার ঘোষণা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা । শীতার্ত প্রতিবন্ধীদের মাঝে শীতবস্ত্র ও ফ্যামিলি কিট বিতরণ, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় ঈদ সামগ্রি, বন্যা-বর্ষায় চাল-ডাল তেল নুনসহ নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন অনেকবার।

২০১১ সালে এইচএসসি পাশের পর থেকে তিনি এই প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবারের সচ্ছলতার কথা বিবেচনায় না এনে তিনি এই খন্ডিত মানুষগুলোর জীবন মান উন্নয়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বন্ধুদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে তিনি সামনের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। সমাজসেবা অফিস কর্তৃক নিবন্ধিত না হওয়ায় এখনো সরকারি পর্যায়ে কোন সাহায্য তিনি পাননি। এজন্য তাকে সাহায্য করতে পারছেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল ইসলাম। তিনি জানান, সরকারিভাবে সাহায্য পেতে হলে নিয়ম মেনে করতে হয়। তবে স্বপনের প্রচেষ্ঠাকে তিনি সাধুবাদ জানান।প্রতিবন্ধীরা আমাকে তাদের সব সমস্যা সমাধানের আশ্রয়স্থর হিসেবে মনে করে। কিন্তু আমি তাদের জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনা। ওরা যখন আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তখন আমি নিজেকে আর স্বাভাবিক মানুষ ভাবতে পারিনা। অতৃপ্তির বেদনায় আমিও যেন ওদের দলের মনে যাই। নিজেকে প্রতিবন্ধী বলেই মনে হয়। ওরাও এই সমাজেরই কেউ। অথচ প্রতিবন্ধীরা সমাজের তো বটেই এমনকি নিজ পরিবারের কাছেও বোঝা বলে বিবেচিত হয়। তাদের কথা আমরা সাধারণ মানুষেরা তেমন করে ভাবেনা। আর সেই মানুষগুলো যদি চরাঞ্চলের হয় তাহলে তো কথাই নেই। তাদের সমস্যার অন্ত নেই। তাই তাদের জন্য কিছু করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে প্রতিবন্দীদের জন্য বিনামূল্যে ফিজিও থেরাপিসহ বিভিন্ন ভাবে চিকিৎসা প্রদান, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান এবং প্রতিবন্ধী পরিবার চিহ্নিত করে আইডি কার্ড ও সনদ পত্র প্রদান, প্রতিবন্ধী জরিপসহ সরকারি নানা কাজে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি। নিজের কাজে কোন প্রতিবন্ধকতা আসে কিনা জানতে চাইলে স্বপন বলেন, শুরুতে অনেকেই আমাকে পাগল বলে গালি দিত। কেউ কেউ সামনা সামনি বকাঝকাও দিত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমার সামনে চলার পথে তাদের বাধা আর প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এখন অনেকেই পারলে সাহায্য করার কথা জানায়।স্বপনের প্রতিবন্ধী ভাবনায় আরো অনেকেই মাঝে মধ্যে সামান্য সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে উলে¬খযোগ্য হলেন সিরাজগঞ্জ পৌর মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি রিয়াজ উদ্দিন, ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন, কাজিপুর পৌর মেয়র আব্দুস সালাম, নাটুয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক, সোনামুখী ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ কবীর চাঁন্দু, ঠিকাদার লেবু মিয়া, হারুনার রশিদ, ফজলুল হক জুয়েল, রিপন মিয়া, বিশিষ্ট ব্যাংকার ওমর ফারুক প্রমুখ।

তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান বকুল সরকার, ইউএনও শাফিউল ইসলাম ও সমাজসেবা অফিসার আব্দুল হামিদের প্রতি। সর্বশেষ তিনি জানান, এই সংগঠনটির নিবন্ধন জরুরী। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান তিনি। সমাজের শিল্পপতি, ধনপতি যারা আছেন তারা যদি সামান্য সহযোগিতা এই অসহায় মানুষগুলোর জন্যে করেন তা দিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপার মাধ্যমে তাদেরকে স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাবেন বলে জানান তিনি। ভবিষ্যতে বিশেষভাবে উপযোগী প্রশিক্ষন দিয়ে অনেক প্রতিবন্ধীদের যাতে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। কোন বেসরকারি সংস্থা এগিলে এলে তিনি তাদেরকে নিয়ে প্রতিবন্ধীদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

(এমএস/এএস/এপ্রিল ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test