E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজারে সরকারি ডিউটি ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসক

২০১৭ জুলাই ১১ ১৫:৫৫:৫৪
মৌলভীবাজারে সরকারি ডিউটি ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসক

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : একের পর এক অনিয়মের ঘটনায় কিছুতেই টনক নড়ছেনা মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। প্রতিদিনই এখানে দূর দুরান্ত থেকে আসা রোগিরা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন অহরহ।

এবার হাসপাতালের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট ডাঃ ফারজানা হক পর্ণা। এসব ঘটনা জানার পর এমনকি স্থানীয়সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরও কার্যত কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর ১১টায় হাসপাতালের দুরদূরান্ত থেকে আসা রোগী রেখে শহরের শাহ মোস্তফা সড়কস্থ জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে একটি রোগীর সিজারিয়ান অপারেশন সম্পূর্ণ করেছেন ডাঃ ফারজানা হক পর্ণা।

জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালের ৩০৩ নং কেবিনের ভর্তিকৃত রোগী শ্যামেরকোনা গ্রামের মনসুর আহমদের স্ত্রী রুবি গত রবিবার ভর্তি হন। পরদিন সোমবার দুপুর ১১ টায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।

রোগীর স্বামী মনসুর আহমদের সঙ্গে পরিচয় গোপন করে মুঠোফোনে আলাপকালে জানান, দুপুর ১১টার সময় তার স্ত্রীর সিজার করেছেন ডাঃ ফারজানা হক পর্ণা। তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে।

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ডাঃ ফারজানা হক পর্ণার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আপনি আমাদের ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে যোগাযোগ করেন, তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারেন। তিনি বলেন, তার বিষয়ে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

ঘটনাটি মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডাঃ পার্থ সারথী কানগোকে জানানো হলে তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।

এ ঘটনাটি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে কয়েকজন সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। তিনি বিষয়টি দেখছেন বলেও জানিয়েছেন সবাইকে।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা এবং জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মিজানুর রহমানসহ একাধিক সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষ।

হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, শুধু ডাক্তার ফারজানা হক পর্ণা নয়। শিশু বিভাগ, গাইনী বিভাগ, মেডিসিন ও সার্জারী বিভাগের কনসালটেন্টরা নিয়মিতই হাসপাতালের ডিউটি চলাকালিন সময়ে বাহিরে বিভিন্ন ক্লিনিকে চলে যান। তারা আরোও জানান, বিশেষ করে অর্থোপ্রেডিক কনসালটেন্ট আব্দুল্লা আল মামুন, সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার আবু ইমরান, শিশু কনসালটেন্ট ডাঃ আব্দুল্লাহ আল বাকী, মেডিসিন বিভাগের ডাঃ মতিউর রহমান চৌধুরীসহ অনেকেই।

হাসপাতালের পুরাতন একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হলেন এ জেলার সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ এম.এ.মতিন (৬৫)।

মৌলভীবাজারের সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ এম.এ.মতিন শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের মুসলিম কোয়ার্টার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাত ও পা ভেঙ্গে গুরুতর আহত হয়ে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, উপন্যাস পড়ায় ব্যস্ত জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে চিকিৎসা দিতে বিলম্ব করেন। শুধু তাই নয়, এ হাসপাতালে দুই দুইজন অর্থোপেডিক ডাক্তার থাকা সত্বেও এখানে চিকিৎসা হবেনা জানিয়ে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

পর্যাপ্ত ডাক্তার ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্তেও এবং এখানেই চিকিৎসা সম্ভব এমন রোগীকেও 'এখানে চিকিৎসা হবেনা' জানিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সেই ঘটনায় সামাজিক ওয়েবসাইট ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছেন।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধারক ডাঃ পার্থ সারতী কানগো এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ডিউটি চলাকালিন সময়ে কেউ যেন বাহিরে না যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। তারপরও যদি কেউ যায়, তাহলে আমরা উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ডাঃ ফারজানা হক পর্ণাকে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে জানিয়েছেন কাজ শেষে চলে আসার কথা, তারপরেও আগামীতে এরকম যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

(একে/এএস/জুলাই ১১, ২০১৭)



পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test