৫ হাজার টাকা আদায়ের জন্য এক ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে ফেসবুকে লাইভ, সর্বত্র তোলপাড়

বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর বাজারে ৫ হাজার টাকা আদায়ের জন্য এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেসবুকে লাইভ দেয়ার ঘটনা নিয়ে এলাকায় এখন তোলপাড় চলছে।

উপজেলার কৃষ্ণনগর বাজারের আলী ভান্ডারী দোকানের মালিক আলী নেওয়াজ জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে ৪৫ বছর বয়স্ক এক দাঁড়িওয়ালা ব্যক্তি আমার দোকানে আসেন। পরক্ষণেই তিনি নিজেকে একজন এনজিও প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে আমার কাছে নগদ ২০ হাজার টাকা চান। ২০ হাজার টাকা জমা করলেই আমি ঋণ বাবদ নগদ ৪ লাখ টাকা পাবো। এ কথা বলেই একটি কাগজের স্ট্যাম্প লোকটি আমার নাকের সামনে ধরা মাত্রই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে লোকটি আমার দোকান থেকে ২০ হাজার টাকা দ্রুত নিয়ে চলে যাওয়ার সময় জনতা তাকে আটক করে। পরে বাজার কমিটির সেক্রেটারীর সহায়তায় তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করতে পারলেও, বাকী ৫ হাজার টাকা ফেরত দিতে লোকটি অপারগতা প্রকাশ করেন।
এসময় বাজার কমিটির সেক্রেটারীর নির্দেশে লোকটিকে বাজারের লোকজন বাজারের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বুকে ও কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খবর পেয়ে এ সময় দোকান মালিক আলী নেওয়াজের ছেলে স্থানীয় সাংবাদিক কবির হোসেন ঘটনাস্থলে এসে খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় ফেসবুক লাইভে আটককৃত লোকটির সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ১২ মিনিট ধরে চলা ফেসবুক লাইভে সাংবাদিক কবিরের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বুক ও কোমরে দড়ি দিয়ে শক্তভাবে খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় আটক দাঁড়িওয়ালা লোকটি নিজের নাম মো. আলমগীর হোসেন, পিতা লিল মিয়া, বাড়ি নবীনগরের বগডহর গ্রামে বলে জানান।

এ বিষয়ে সাংবাদিক কবির হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, 'লোকটি আসলে ধুরন্ধর। সে আজ বেলা ১১ টার দিকে আমার আব্বার কাছ থেকে প্রতারণা করে আব্বাকে সেন্টের মাধ্যমে বেহুশ করে ২০ হাজার টাকা দোকান থেকে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু টের পেয়ে বাজারের লোকজন তাকে আটক করে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করতে পারলেও, বাকী ৫ হাজার টাকা সে আর ফেরতে দেয়নি। পরে বাজারের সেক্রেটারীর নির্দেশে তাকে বাজারে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।'

অপরাধ করলেও এভাবে একজন লোককে গাছের সঙ্গে বেঁধে কোন সাংবাদিক কি দীর্ঘ ১২ মিনিট ফেসবুকে লাইভ দিতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি স্থানীয় সাংবাদিক কবির আহমেদ।

কৃষ্ণনগর বাজার কমিটির সেক্রেটারী বাবুল মিয়া মুঠোফোনে বলেন, 'লোকটি যখন কোনভাবেই ২০ হাজারের মধ্যে বাকী ৫ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছিলো না। তখন টাকাটা আদায়ের জন্যই মূলত আমরা বাজারের লোকজন মিলে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখি। পরে দোকান মালিকের ছেলে সাংবাদিক কবির ফেসবুকে এটি প্রচার করে।'

দোকান মালিক আলী নেওয়াজ বলেন, 'বাজারের লোকজন ঠিক সময়ে না আসলে, আমি আজ হয়তো মারাই যেতাম। কারণ, সে আমারে নাকের সামনে কাগজ ধরার পরই আমি বেহুশ হয়ে যাই। যা পরে আমার দোকানের সিসি ক্যামেরাতে সব রেকর্ড পাওয়া গেছে।'

নবীনগর থানার ওসি মাহাবুব আলম দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে বলেন ,'আপনার (সাংবাদিক) কাছ থেকেই প্রথম এ ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এখনই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাচ্ছি। পরে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

(জিডি/এসপি/জুলাই ২৫, ২০২৩)