E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আলতাফের জীবন বদলে দিয়েছে তান্দুরী চা ঘর

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৮:৪৮:০৭
আলতাফের জীবন বদলে দিয়েছে তান্দুরী চা ঘর

মাদারীপুর প্রতিনিধি : সেই ছোট বেলা থেকেই বাবা তোফাজ্জেল ফকিরের সাথে চা বানাতেন আলতাফ মাহমুদ। বছরের পর বছর চা বানিয়ে তা বিক্রি করলেও জীবনকে বদলাতে পারেননি তারা। অভাব ও কষ্টের মধ্যে জীবন পার করেছেন। ছোট চায়ের দোকানটিই ছিলো তাদের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। সেই মাধ্যমটিকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি আয় করা যায়, তাই ভাবতে থাকেন আলতাফ। এরপর করোনা ভাইরাসের সময় ২০২১ সালের শুরু দিকে ইউটিউবের মাধ্যমে কোলকাতার তান্দুরী চা বানানোর কৌশল শিখে নেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার তান্দুরী চায়ের ব্যবসা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই লাভের মুখ দেখতে থাকেন আলতাফ। জেলাসহ আশে-পাশের জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে তান্দুরী চায়ের স্বাদের প্রশংসা। তাই চাপ্রেমীরা মাটির ছোট্ট হাড়িতে তান্দুরী চা থেকে খেতে দুর-দুরান্ত থেকে আসতে শুরু করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটকচরের তোফাজ্জেল ফকিরের ছেলে আলতাফ মাহমুদ (২৮)। বাড়ির কাছে পার্শবর্তী পেয়ারপুর বাজারে খুপরির দোকানে বাবা চা বানিয়ে বিক্রি করতেন। সেই বিক্রির টাকায় চলতো তাদের সংসার। সেই চায়ের দোকানে ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে চা বানাতেন আলতাফ মাহমুদ। প্রায় ১৫ বছর ধরেই তিনি চায়ের ব্যবসা করে আসছেন। প্রায় চার বছর আগে তার বাবাও মারা যান। এরপর পুরো দোকানের দায়িত্ব এসে পড়েন তার উপর। বছরের পর বছর চা বিক্রি করেও ভাগ্য পরিবর্তন করতে না পারায়, কি করা যায় এনিয়ে নতুন করে ভাবনায় পড়েন তিনি।

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে করোনা ভাইরাসের মহামারি শুরু হলে, বেচাকেনাও কমে যায় আলতাফের। এরপর ঘরে বসে মোবাইলে ইউটিউবের মাধ্যমে কোলকাতার তান্দুরী চা বানানোর কৌশল শিখে নেন। মাদারীপুরের এই গ্রামের মধ্যে তান্দুরী চা বিক্রি হবে কিনা তা নিয়েও তিনি চিন্তায় পড়েন। ভাবেন একবার করে দেখি কি হয়। ২০২১ সালের প্রথম দিকে শুরু করেন তান্দুরী চায়ের ব্যবসায়। দোকানের নাম রাখেন আফতাফ তান্দুরী চা ঘর। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সারা জেলাসহ আশে-পাশের জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে তান্দুরী চায়ের স্বাদের প্রশংসা। শীতের সময় লাইনে দাড়িয়ে থেকে এই চা খেতে হয়। প্রথম দিকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার চা বিক্রি হতো। এরপর আলতাফকে দেখে অনেকেই মাদারীপুরের মস্তফাপুর, রাজৈর, কালকিনিসহ বেশ কিছু জায়গায় তান্দুরী চায়ের ব্যবসা শুরু করেন। তাই তার ব্যবসায় কিছু কমেছে। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার টাকার তান্দুরী চা বিক্রি করেন। এতে করে মাসে তার দেড় লাখ টাকার চা বিক্রি হয়। তবে শীতের সময় প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার তান্দুরী চা বিক্রি হয়।

খোজ নিয়ে আরো জানা গেছে, গরম পানি, চায়ের লিকার, কাজু বাদামের গুড়ো, কালোজিরা, থ্রি ওয়ান চা, দুধের স্বর, ট্যাংক, চিনি, গুড়ো দুধ, তরল দুধ, ওভালটিন, চকলেটের গুড়োসহ প্রায় ১০ থেকে ১২ রকমের বিভিন্ন খাদ্য উপাদান দিয়ে তৈরি করেন তান্দুরী চা। গরম এই চা মাটির তৈরি ছোট্ট হাঁড়িতে ঢেলে চা পিপাসুদের পরিবেশন করেন আলতাফ। পোড়া মাটির গন্ধে ভরপুর এই সুস্বাদু চা পান করতে আলতাফ তান্দুরী চা ঘরে প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চা পিপাসুদের লাইন লেগেই থাকে। তবে শুক্রবার তিনি দোকান বন্ধ রেখে পরিবারের সাথে সময় কাটান।

শুধু তান্দুরী চা নয়, এখানে আরো নানা ধরণের চা পাওয়া যায়। ‘চায়ের সাথে কাপ চিবিয়ে খাবেন’ এই শিরোনামে চকলেট চা বিস্কুট কাপ ৫০ টাকা, চকলেট কপি বিস্কুট কাপ ৬০ টাকা, মাটির কাপে করে তান্দুরী চা ৩০ টাকা, তান্দুরী চকলেট চা ৫০ টাকা, কফি তান্দুরী চা ৫০ টাকা, পেপার কাপে দুধ চা ১০ টাকা, মালাই চা ২০ টাকা, কফি রেগুলার ৩০ টাকা ও গ্রীণ চা ১০ টাকা করে বিক্রি করেন।

কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর থেকে আসা সানজিদা আক্তার বলেন, এখানে অনেকেই চা খেতে আসেন। বিশেষ করে তান্দুরী চায়ের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। তাই আমি প্রায় আসি এখানে এই চা খেতে।

শহরের ১নং শকুনি এলাকা থেকে আসা তানমিরা বলেন, যখন ইচ্ছে হয়, তখন স্বামীর মোটরসাইকেলে করে এতদুরে এসে তান্দুরী চা খাই। এই চায়ের খুব নাম আছে, তাই সুযোগ পেলেই পরিবারসহ এখানে চলে আসি।

আয়ান হাসান নামের ৯ বছরের এক শিশু বলেন, আমি মায়ের সাথে প্রায় আসি এখানে চা খেতে। তান্দুরী চায়ের মধ্যে চকলেট থাকে, তাই খেতে আমার খুব ভালো লাগে।

স্থানীয় তানিয়া আক্তার বলেন, আলতাফের চা মানেই মজা। অনেক দুর থেকে এখানে চা খেতে মানুষজন আসেন। তাছাড়া আমাদের গ্রামেও নতুন কেউ বেড়াতে এলে আলতাফের চা না খেয়ে যায় না। আলতাফের চা এর দোকানের জন্যই এই বাজারটা জমে আছে।

চা বিক্রেতা আলতাফ মাহমুদ বলেন, আমি ইউটিউব দেখে এই চা বানানো শিখে মাটির কাপে করে তান্দুরী চা বিক্রি শুরু করেছি। প্রথম দিকে আমি একা তান্দুরী চা বানালেও বর্তমানে অনেকেই এই চা বানিয়ে তা বিক্রি করে বেকারত্ব দুর করেছেন। আর্থিক সংকটে লেখাপড়া খুব বেশি করা হয়নি। পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পেয়ারপুর ইউনিয়নের পেয়ারপুর বাজারে বাবার ছোট্ট চায়ের দোকানেই আজ আমার ভাগ্য বদল হয়েছে। শুধুমাত্র চা বিক্রি করে পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে পারবো, তা কখনও ভাবিনি।

পেয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাবলু হাওলাদার বলেন, আমাদের পেয়ারপুর বাজারের আলতাফ তান্দুরী চা ঘরের এই অসাধারণ স্বাদের তান্দুরী চা প্রশংসার দাবীদার। আমাদের এই পেয়ারপুরবাজারটি তন্দুরী চাকে কেন্দ্র করে জমজমাট। আলতাফ তার তান্দুরী চায়ের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন এনেছে।

(এএসএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test