E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন 

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় মাসুদা বেগম বুলু

২০২৪ মার্চ ৩১ ১৯:০২:৩০
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় মাসুদা বেগম বুলু

রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : আসন্ন ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তুমুল আলোচনায় আছে ডা. মাসুদা বেগম বুলু'র নাম। সম্প্রতি ফরিদপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য বিপুল ঘোষ ঘোষিত প্রার্থীদের তালিকায় থাকা চিকিৎসক মাসুদা বেগম বুলুকে চিনেননা, ফরিদপুর সদরে এমন লোক খুব কমই আছেন। উচ্চ শিক্ষিত, নম্র, ভদ্র, সৎ ও মার্জিত স্বভাবের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ডা. মাসুদা বেগম ফরিদপুরের একজন একজন সত্যিকারের আদর্শবান ও মানবিক সমাজসেবক।

সুশিক্ষিত ও বঙ্গবন্ধু'র আদর্শিক পরিবারের কৃতি সন্তান ডা. মাসুদা বেগম নিজে দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুরের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিকিৎসা, ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে থাকা একজন নিঃস্বার্থ সমাজসেবক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব।

২৯ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে জন্ম গ্রহন করা ফরিদপুর শহরের স্থায়ী বাসিন্দা মাসুদা বেগম ১৯৭৩ সালে ঢাকা বোর্ডের অধীনে ফরিদপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে 'ফাস্ট ডিভিশন'-এ এসএসসি এবং ১৯৭৬ সালে ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে 'সেকেন্ড ডিভিশন'এ এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ অনার্স ও ১৯৯২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একই সাবজেক্টে দ্বিতীয় বিভাগে মাস্টার্স পাশ করেন মাসুদা বেগম। (যদিও তৎকালীন সময়ে বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় বিভাগ পাওয়া অনেক কঠিন ছিলো)। পাশাপাশি তিনি ১৯৯৫ সালে হোমিওপ্যাথি বোর্ড ঢাকা থেকে ডিএইচএমএস পাশ করেন।

কর্মজীবনে মাসুদা বেগম একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে মানুষের সেবার দিয়ে আসছেন। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তার বাকি কর্মজীবনও অনেক বর্ণাঢ্য ও ক্লান্তিহীন। মাসুদা বেগম বুলু ১৯৮৫ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সুইড ফরিদপুর শাখার প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন সুইড বাংলাদেশের রমনা শাখার কো-অর্ডিনেটর।
এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। মাসুদা বেগম স্থানীয় সরকারের অধীনে ফরিদপুর পৌরসভার কমিশনার হিসেবে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ (প্রথম টার্ম) ও ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত (দ্বতীয় টার্ম) পরপর দুইবার সফলতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সময়ে তিনি কারা পরিদর্শক হিসেবে মোট দুই টার্ম দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ ও ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। এছাড়া ১৯৭০ এর দশকে তিনি ফরিদপুর ছাত্রলীগ পরিষদের সদস্য হিসেবে, ১৯৯৮ থেকে ২০০০ ও ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এফপিএবি ফরিদপুর শাখার কার্যকরী সদস্য এবং ২০০০ থেকে ২০০২ ও ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এফপিএবি ফরিদপুর শাখার যুব সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ডা. মাসুদা বেগম বুলু ফরিদপুর লায়ন্স ক্লাবের লায়নেস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া, মাসুদা বেগম বুলু ফরিদপুরের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। যার মধ্যে- বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি ও হাসপাতাল, ফরিদপুরের ১৯৯৮ সাল থেকে, ফরিদপুর রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ১৯৯১ সাল থেকে, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, ফরিদপুরের ১৯৯৪ সাল থেকে, ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল, ফরিদপুরের ১৯৯৬ সাল থেকে, ফরিদপুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল ও সমিতি'তে ১৯৮৫ সাল থেকে এবং ফরিদপুর মুসলিম মিশন ১৯৯৮ সাল থেকে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

তাছাড়া, ডা. মাসুদা বেগম বুলু বর্তমানে- এফপিবিএ, ফরিদপুর শাখার কোষাধ্যক্ষ ২০১৮ সাল থেকে, সুইড, ফরিদপুর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে এবং ফরিদপুরের ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের নির্বাহী সদস্য হিসেবে ২০১৮ থেকে ২০২১ ও ২০২১ থেকে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বেনিফিসিয়ারি'স ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম (বিএফএফ) এর ফরিদপুরের নির্বাহী সদস্য ডা. মাসুদা বেগম বুলু।

ফরিদপুর আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি মাঠে ঘাটে পদচারণা করা এই পরিশ্রমী মানুষটির পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডও অনেক শক্তিশালী ও সম্মৃদ্ধ। মাসুদা বেগমের পরিবার চল্লিশের দশকে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থেকে ফরিদপুর শহরে এসে আবাসিক হন। তিনি মুলতঃ প্রগতিশীল ও আওয়ামী পরিবারের সদস্য। তার পিতা মির্জা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও মাতা বেগম বদরুন্নেসা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। তার বোনেরা ষাটের দশকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ডা. মাসুদা বেগমের পিতা মির্জা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে স্নাতক (সম্মান) পাশ করে সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ময়মনসিংহ জেলা জনসংযোগ কর্মকর্তা দায়িত্বরত অবস্থায় পাকহানাদার বাহিনীর অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে এপ্রিলের শুরুতেই চাকরিস্থল ছেড়ে তিনি ফরিদপুর চলে আসেন। সরকারি কর্মকর্তা পিতার সুযোগ্য সন্তান মাসুদা বেগম'দের ফরিদপুরের বাড়ীতে পাক বাহিনী আক্রমণ করলে তা বুলেট-বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্বাধীনতার পর একজন সৎ, দেশপ্রেমিক মানুষ মির্জা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহকে বঙ্গবন্ধুর আদেশে পুর্বের কর্মস্থল ময়মনসিংহ না পাঠিয়ে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে ফরিদপুরে দুই মেয়াদের জন্য রেখে দেয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. মাসুদা বেগমের পিতা-মাতার নামে একটি ট্রাস্ট ফান্ড 'মির্জা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বেগম বদরুন্নেসা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড রয়েছে, যার মাধ্যমে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রধান করা হয়ে থাকে।
ব্যক্তি জীবনে মাধ্যমিক লেভেল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা মাসুদা বেগম বুলু একজন প্রগতিশীল আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। যদিও রাজনীতির বাইরে শিক্ষা, চিকিৎসা, সংস্কৃতিসহ নানা আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভুমিকার কারনে তার সর্ব সাধারণের মধ্যে একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

মাসুদা বেগমের বড় বোন ১৯৬৮ ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্রসংসদে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত নারী কমনরুম সম্পাদক ছিলেন। তার ছোটবোন ড. মাহবুবা নাসরিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বোন অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রগতিশীল নীল দল থেকে নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সদস্য ও সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তার ছোটবোট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটি ও মহিলা বিষয়ক উপ কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। মাসুদা বেগম বুলু'র ভাই ডা. মির্জা মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বাংলাদেশ ডেন্টাল এসোসিয়েশনের যুগ্ম মহাসচিব এবং তার অন্যান্য ভাই বোনেরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক পর্যায়ের নেতা কর্মী ও সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছেন।

মাসুদা বেগম বুলু'র স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান (সেলিম)। তিনি ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সড়কের তানিয়া ভরনের স্থায়ী বাসিন্দা।

প্রগতিশীল চিন্তার পরিশ্রমী মানুষ মাসুদা বেগম বুলু সারা জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। বাকী জীবন টুকুতেও মানুষের সেবা করে যেতে চান তিনি। তাই, সামগ্রিক বিবেচনায় আগামী ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী হলে- ফরিদপুরের মানুষ ডা. মাসুদা বেগম বুলু'কেই ভোট দিবেন এমনটি আশা প্রকাশ করছেন ফরিদপুরের সচেতন মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।


(আরআই/এসপি/মার্চ ৩১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test