E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৩ সাংবাদিককে লাঞ্ছিত, ইউপি চেয়ারম্যান আটক

২০২৪ এপ্রিল ০৯ ২৩:০১:২১
৩ সাংবাদিককে লাঞ্ছিত, ইউপি চেয়ারম্যান আটক

একে আজাদ, রাজবাড়ী : বিজিএফের চার বিতরণে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহের পর চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে ৩ সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনায় সদর উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লী‌গের সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. ওহিদুজ্জামানকে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার (৮ এপ্রিল) রাত ৯ টার দিকে আটক করেছে পুলিশ। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখারুল আলম প্রধান।

এর আগে দুপুরে মুলঘর ইউনিয়ন প‌রিষদে ভি‌জিএফের চাল বিতর‌ণে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতেগেলে ৩ সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. ওহিদুজ্জামান। এসময় এক সাংবাদিককে ধাক্কা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দেয় ও সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি।

এই ঘটনা একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখাগেছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় অনেক লোকের উপস্থিতিতে, ইউপি চেযারম্যান তার সাঙ্গপা‌ঙ্গ নি‌য়ে সাংবা‌দিক‌দের ওপর চড়াও হন এবং অকথ‌্য ভাষায় গা‌লি-গালাজ ক‌রতে থা‌কেন। এক পর্যায়ে মাছরাঙা টেলিভিশন ও দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ইমরান হোসেন মনিকে ধাক্কা দিয়ে বারান্দা হতে নিচে ফেলে দেন ইউপি চেযারম্যান। এ সময় দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি আতিয়ার রহমান এবং দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলামকেও লাঞ্ছিত করেন।

এ ঘটনায় একইদিন বিকেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও প্রতি‌দি‌নের বাংলা‌দেশ প‌ত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ইমরান হো‌সেন মনিম বাদী হয়ে- শেখ মো. ওহিদুজ্জামান এবং তার দুই সহযোগী গ্রাম পুলিশ আক্কাস ও মানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪ থেকে ৫ জনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় এজাহার দায়ের করেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানা যায়।

সাংবাদিক ইমরান হো‌সেন ম‌নিম‌ কতৃক থানায় দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ, অদ্য ০৮-০৪-২০২৪ ইং তারিখ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমি ও আমার সহকর্মী দৈনিক গণমুক্তি জেলা প্রতিনিধি মোঃ আতিয়ার রহমান ও দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকার রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি মোঃ শহিদুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে মূলঘর ইউনিয়নের বেজকুলা এলাকায় অবৈধ ভাবে মাটি কাটার সংবাদ সংগ্রহ করে চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎকার নিতে তার ইউনিয়ন পরিষদে যাই। ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশের পূর্বেই স্থানীয় লোকজন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফ চাউল ১০ কেজির পরিবর্তে ৭-৮ কেজি করে প্রদানের অভিযোগ পাই।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। গালিগালাজ করতে করতে একপর্যায়ে দুই হাত দিয়ে গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। তার সাথে গ্রাম পুলিশ আক্কাস, সহ অজ্ঞাতনামা আরোও ৩-৪ জন এলোপাথারী ভাবে আমাকে ও আমার সহকর্মী আতিয়ার ও শহিদুলকেও মারধর করে। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা, ফোলা, জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে চেয়ারম্যান হুমকি দিয়ে বলে যে, আজ শালারা বেচে গেলি, তোদের পরে পাইলে জীবনে শেষ করে দিবো।

মারধরের চিত্র ভিডিও ধারনের সময় সহকর্মী শহিদুল ইসলামের হাতে থাকা ডিএসএলআর কেনন ৭০ডি ক্যামেরা, আমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, ও আতিয়ার রহমানের প্যান্টের পকেটে থাকা ২,৫০০/- টাকা ছিনিয়ে নেয়। সেখান থেকে লোকজন আমাদের ৩ জনকে উদ্ধারের পরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে থানায় গিয়ে এজাহার দায়ের করেছি।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানি‌য়ে‌ছেন রাজবাড়ী প্রেসক্লা‌ব, রাজবাড়ী ডিজিটাল প্রেসক্লাব, রাজবাড়ী রি‌পোর্টার্স ইউনি‌টি, রাজবাড়ী জেলা রি‌পোর্টার্স ক্লা‌ব, বাংলা‌দেশ মফস্বল সাংবা‌দিক ফোরাম রাজবাড়ী জেলা শাখার নেতারা এবং পাংশা উপজেলা প্রেসক্লাব নিন্দা জানিয়েছে।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখারুল আলম প্রধান বলেন, সাংবাদিক ইমরান হোসেন মনিমের অভিযোগের ভিত্তিতে মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. ওহিদুজ্জামানকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন জানান, কোথাকার যেন মাটি কাটার বিষয়ে ও বিজিএফের চাউল কম দেয়ার প্রসঙ্গে ৩ সাংবাদিক চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে চাইলে, চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হন। প্রথমে চেয়ারম্যানের এক সহযোগী তাঁর ওপর চড়াও হন। এরপর চেয়ারম্যান এক সাংবাদিককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। তাঁর সহকর্মীদেরও মারধর করেন ও গালিগালাজ করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ভিজিএফের চাল বিতরণ করছিলাম। এসময় ওই সাংবাদিকেরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমার কাছে আসেন। আমাকে নিয়ে একটা খুব বাজে কথা বলেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে রাগারাগি হয়েছে। কাউকে ধাক্কা দেইনি বা লাঞ্ছিত করিনি।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য; এরআগে, একটি মামলায় ভিকটিম সম্পর্কে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল।

গত ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ বিষয় জানানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো. ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে মামলার ভিকটিম সম্পর্কে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করার অভিযোগটি প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া তার কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় স্থানীয় সরকার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন।

(একে/এসপি/এপ্রিল ০৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test