E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হরতাল অবরোধে বগুড়ায় ৩০ গাড়িতে আগুন, গ্রেফতার ৩ শতাধিক

২০১৫ জানুয়ারি ২৭ ১৬:৪৩:৫৬
হরতাল অবরোধে বগুড়ায় ৩০ গাড়িতে আগুন, গ্রেফতার ৩ শতাধিক

বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ায় গত ২০ দিনে অবরোধ ও হরতাল সমর্থকরা ৩০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও শতাধিক গাড়ি ভাংচুর করেছে। এসব ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১ জন নিহত ও ৪জন আহত হয়েছে। জেলা পুলিশ বিভাগ নাশকতা ও ভাংচুরের অভিযোগে ৩ শতাধিকজনকে গ্রেফতার করেছে। জানা যায়, অবরোধ অব্যাহত থাকায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের চালকরা। বাড়ি থেকে বের হবার পর নিরাপদে ফেরার গ্যারান্টি নেই কারও।

ইতিমধ্যে গত ২২ জানুয়ারি রাতে বগুড়ায় পেট্রোল বোমা হামলায় সাতক্ষিরা জেলার শ্রীরামপুরের ট্রাক চালক আব্দুর রহীম নিহত হয়েছে। ওই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হন কাঠ ব্যবসায়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সাজু। এর পরের দিন ২৩ জানুয়ারি শহরের চারমাথায় পেট্রোল বোমা হামলায় ট্রাকচালক কাহালু উপজেলার দবির উদ্দিনের পুত্র মাসুদ রানা (৩০) ও একই উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আবু সাইদের পুত্র ট্রাকের হেলপার জাহাঙ্গীর (৩০) অগ্নিদগ্ধ হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে আহত ট্রাক চালককে এলাকাবাসির সহযোগিতায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। এছাড়া ৬ জানুয়ারি, বগুড়া সদরের মাটিডালি, গোকুলে, ৭ জানুয়ারি শাজাহানপুরে মালবাহি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করে।

সর্বশেষ রবিবার রাত ১০ টায় নওগাঁ থেকে বগুড়া আসার পথে বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলার বাজারদীঘি এলাকায় অবরোধ ও হরতাল সমর্থকরা ইট পাটকেল ও পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মারে। বাসটির সামনের গ্লাস ভেঙে চালক শহীদুল ইসলামের হাতে লেগে আহত হন। বাস থেকে যাত্রীরা দ্রুত নেমে আহত শহীদুল ইসলামকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিভিয়ে ফেলে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বন্দরের কাছে একটি পণ্য বোঝাই ট্রাকে ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে হরতাল ও অবরোধ সমর্থকরা। ট্রাকটিতে আগুন ধরে যায়। বগুড়া থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিভিয়ে ফেলে। তবে কেউ আহত হননি। বগুড়ার এছাড়া গত ২০ দিনে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শেরপুরে, দুপচাঁচিয়ায় ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বগুড়া পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, শহরের প্রথম বাইপাসের বনানী, ছিলিমপুর, চারমাথা, বারপুর, মাটিডালি মোড় এবং বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের নওদাপাড়া, ঠেঙ্গামারা, বাঘোপাড়া, গোকুল ও মহাস্থান এলাকার ১০ কিলোমিটারে অবরোধসহ হরতালের দিন এবং তার আগের দিন রাতে নাশকতা করছে পিকেটারেরা। নাশকতার অভিযোগে ২২টি মামলা হয়েছে। আরো কিছু মামলার প্রস্তুতি চলছে। নাশকতা ও বিভিন্ন অভিযোগে ৩ শতাধিকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বগুড়া শহরের ট্রাক চালক মানিক জানান, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেট্রোর বোমা এসে গাড়ির কেবিনে পড়ে। আমরা না পারছি ঘরে বসে থাকতে, না পারছি মহাসড়কে চলাচল করতে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএম জানান, দুর্বৃত্তরা গেরিলা কায়দায় গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। তারা হঠাৎ করে বের হয়ে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে বা অন্য কোন ভাবে গাড়িতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্বৃত্তদের ধরতে এসব চিহ্নিত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। ৬টি অতিরিক্ত মোবাইল টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত জেলায় শতাধিক গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করেছে এবং প্রায় ৩০টি গাড়ি অগ্নিসংযোগ করেছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িত ৩ শতাধিক নাশকতাকারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি মহাসড়কে যৌথ বাহিনীর টহল ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বগুড়া পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক পিপিএমসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কে টহল অব্যহত রাখছেন। তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতিদিনই দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করছে। তারপরেও থেমে নেই নাশকতা। চোরাগোপ্তা হামলায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের শিকার হচ্ছে যানবাহনসহ নিরিহ শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। এ যাবত যারা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তারা কোন দলের সদস্য নয়। সাধারণ মানুষ সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অগ্নিদগ্ধ বা ভাঙচুরের শিকার মানুষের গোটা পরিবার। অনিশ্চয়তার পথে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। তাই প্রতিবাদের ভাষা জ্বালাও পোড়াও না হয়ে অন্যকোন কর্মসূচী হোক এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।

(এএসবি/এএস/জানুয়ারি ২৭, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test